ডোনাল্ড ট্রাম্প। —ফাইল চিত্র।
চৌত্রিশ বছর বয়সে তখন তিনি ঘোরতর ব্যবসায়ী। ‘দ্য ট্রাম্প অর্গ্যানাইজ়েশন’-এর প্রেসিডেন্ট, ধনকুবের ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৯৮০ সালে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘রাজনীতিটা আসলে খুব নিচু শ্রেণির লোকেরা করে থাকে। যাঁরা নিজেদের ক্ষমতা সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী, তাঁরা সব সময়েই পেশা হিসেবে ব্যবসাকে বাছবেন’। মত পাল্টাতে প্রায় কুড়ি বছর লাগল। প্রথমে ২০০০ সালে রিফর্ম পার্টির হয়ে তার পরে ২০১২ সালে রিপাবলিকান পার্টির হয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন ট্রাম্প। সাফল্য আসে আরও চার বছর পরে। ২০১৬ সালে অভিজ্ঞ রাজনীতিক হিলারি ক্লিন্টনকে হারিয়ে প্রথম বার আমেরিকার প্রেসিডেন্টের গদিতে বসেন ডোনাল্ড জন ট্রাম্প। এ বারও তিনিই রিপাবলিকানদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী।
নির্মাণ ব্যবসায়ী, ধনকুবের ফ্রেড ট্রাম্পের চতুর্থ সন্তান ডোনাল্ড। ১৩ বছর বয়সে স্কুলে অভব্যতা করায় তাঁকে স্কুল ছাড়িয়ে সেনা অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করান বাবা। ১৯৬৮-তে পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি নিয়ে স্নাতক হন ট্রাম্প। এক দাদা মাত্র ৪৩ বছর বয়সে অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে মারা যান। ট্রাম্প বলেছিলেন, সেই থেকে শিক্ষা নিয়েই মদ্যপান বা ধূমপানের পথ মাড়াননি তিনি।
বাবার ব্যবসায় যোগ দেওয়া ছিল সময়ের অপেক্ষা। তবে প্রথমেই তাঁকে বড়সড় পদ দেননি ফ্রেড। কিন্তু ১৯৭১ সালে ডোনাল্ডকেই পারিবারিক ব্যবসায়িক সংস্থার প্রেসিডেন্ট করেন ফ্রেড। সেই সময়ে সংস্থার নাম পাল্টে ‘দ্য ট্রাম্প অর্গ্যানাইজ়েশন’ করার সিদ্ধান্ত নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এক সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড জানিয়েছিলেন বাবার কাছ থেকে ১০ লক্ষ ডলার ঋণ নিয়ে নিজের আলাদা একটা ব্যবসা শুরু করেছিলেন তিনি। পরে শুধু নির্মাণ ব্যবসাই নয়, নানা নতুন নতুন শিল্পক্ষেত্রে বিনিয়োগ করেছেন ট্রাম্প। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা স্পনসর করত তাঁর সংস্থা। টানা বহু বছর বিভিন্ন টিভি রিয়্যালিটি শোয়েরও প্রযোজনা করেছেন তিনি। একটা সময়ে বিলাসবহুল বাড়ি তৈরির সঙ্গে সঙ্গে গল্ফ কোর্স, ক্যাসিনো, কনডোমিনিয়াম আর হোটেলও বানাতে শুরু করে ট্রাম্পর সংস্থা। ধীরে ধীরে নিউ ইয়র্ক শহরের গণ্ডি ছাড়িয়ে গোটা আমেরিকা তো বটেই, বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে তাঁদের ব্র্যান্ডেড বিলাসবহুল আবাসন ‘ট্রাম্প টাওয়ার’। ভারত-সহ বিশ্বের বহু দেশেই ছড়িয়ে সেই ব্যবসা। তবে কিছু কিছু বিনিয়োগ যেমন বিপুল লাভের মুখ দেখেছে, কোনও কোনও ক্ষেত্রে আবার দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার উদাহরণ রয়েছে তাঁর সংস্থার। বাবাকে নিজের অনুপ্রেরণা বলতেন। ১৯৯৯ সালে মারা যান ফ্রেড ট্রাম্প।
ব্যবসায়িক সাফল্যের থেকেও রঙিন অবশ্য ট্রাম্পের ব্যক্তিগত জীবন। তিন বার বিয়ে করেছেন। সন্তান মোট পাঁচটি। প্রথম বিয়ে নিয়েই শোরগোল চলেছে বহু বছর। প্রথম স্ত্রী, ইভানা জ়েলনিকোভা ছিলেন চেক প্রজাতন্ত্রের অ্যাথলিট এবং মডেল। ১৯৭৭-এ বিয়ে। বিচ্ছেদ ’৯০-এ। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গার্হ্যস্থ হিংসার অভিযোগ এনেছিলেন ইভানা। ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর তিন সন্তান। ডোনাল্ড জুনিয়র, ইভাঙ্কা এবং এরিক ট্রাম্প। ১৯৯৩ সালে দ্বিতীয় বিয়ে করেন ট্রাম্প। স্ত্রী মারিয়া মেপেলস। সেই বিয়েও টেকেনি। এক সন্তান রয়েছে মার্লা এবং ট্রাম্পের। নাম টিফানি। ২০০৫ সালে বর্তমান স্ত্রী মেলানিয়াকে বিয়ে করেন ট্রাম্প। স্লোভাকিয়ার মডেল ছিলেন মেলানিয়া। তাঁদের দাম্পত্যে চিড় ধরার বহু গুজব প্রকাশ্যে এলেও এখনও পর্যন্ত তৃতীয় বিয়ে টিকে রয়েছে আটাত্তরের ট্রাম্পের। মেলানিয়ার সঙ্গে তাঁর একটি সন্তান। সেই ব্যারন ট্রাম্প সদ্য আঠারো পেরিয়েছেন।
মেলানিয়ার সঙ্গে বিয়ের পরের বছরেই পর্ন তারকা স্টমি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়ান ট্রাম্প। বিষয়টা তখনকার মতো ধামাচাপা পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু ২০১৬-র নির্বাচনের আগে সেই সম্পর্কের কথা লুকোতে ব্যবসায়িক নথি জাল করে স্টর্মিকে বিপুল অঙ্কের অর্থ ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। সেই সংক্রান্ত মামলা এখনও চলছে। ব্যবসায়িক নথি জাল, কর ফাঁকির মতো বহু অভিযোগ আগেও উঠেছে ট্রাম্প এবং
তাঁর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে।
রাজনীতির ময়দানে বিতর্ক আর ট্রাম্পকে যেন সমান্তরাল রেখায় রাখা যায়। ঘৃণাভাষণ থেকে শুরু করে বিপক্ষের রাজনীতিকদের কুরুচিকর ভাষায় আক্রমণ। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নাগরিকত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। বহু মহিলা ট্রাম্পের
বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন, ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন। বেশির ভাগ অভিযোগই উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।
চার বছর আগের নির্বাচনে পরাজয় সেই সময়ে তিনি স্বীকার তো করেনইনি। উল্টে ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গা বাধানোর জন্য সমর্থকদের ট্রাম্প উস্কেছিলেন বলে অভিযোগ। সেই সংক্রান্ত একগুচ্ছ মামলা এখনও আদালতে চলছে। বিশেষজ্ঞেরা অবশ্য আগেই জানিয়েছেন বিচারাধীন মামলাগুলির জন্য এ বারের নির্বাচনে লড়া আটকাবে না তাঁর। এমনকি কোনও মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলেও নির্বাচনে জিতলে তাঁর প্রেসিডেন্টের গদিতে বসাও আটকে থাকবে না।
কমলা হ্যারিসের সঙ্গে তাঁর বিতর্কে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘সাধারণ আমেরিকান কী স্বপ্ন দেখেন, তা আমি জানি। এবং সেই স্বপ্ন কী ভাবে বাস্তবায়িত করতে হবে, আমি তা-ও জানি’। ভোটদাতাদের সেই স্বপ্ন দেখিয়েই হোয়াইট হাউসে ফেরার স্বপ্ন দেখছেন ডোনাল্ড জে ট্রাম্প।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy