প্রেসিডেন্ট হিসাবে ট্রাম্পের ব্যর্থতাকেই তুলে ধরেছেন ডেমোক্র্যাট নেতা বার্নি স্যান্ডার্স। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
কারও দাবি, গণতন্ত্রের পক্ষে একটা বড় ঝুঁকি তিনি। আবার কারও মত, প্রেসিডেন্ট পদে থাকারই অযোগ্য ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকি, নিরোর ধ্বংসাত্মক রূপের সঙ্গেও ট্রাম্পের তুলনা টেনেছেন তাঁরা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, বিরোধী পক্ষের আক্রমণও যেন ততই তীক্ষ্ণতর হচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। ডেমোক্র্যাট নেতা বার্নি স্যান্ডার্স যেমন বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রের পক্ষে বড়সড় ঝুঁকি ট্রাম্প। অন্য দিকে, প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার মতে, প্রেসিডেন্ট পদে থাকারই যোগ্যতা নেই ট্রাম্পের। ডেমোক্র্যাটদের চার দিনের মহাসম্মেলনের শুরুতেই ট্রাম্পকে এ ভাবেই নিশানা করলেন বার্নি স্যান্ডার্সরা। দেশে অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে অতিমারির ফলে জনজীবন বিপর্যস্ত হওয়া— সব ক্ষেত্রেই ট্রাম্পকে কাঠগড়ায় তুললেন ডেমোক্র্যাট নেতা বার্নি। এমনকি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে রোমের সম্রাট নিরোর সঙ্গে তুলনা করে বার্নির দাবি, “রোম যখন আগুনে ভস্মীভূত হচ্ছিল, তখন তিনি বেহালা বাজাচ্ছিলেন আর (আমেরিকার বেহাল দশার সময়) ট্রাম্প গল্ফ খেলছেন।”
নভেম্বরের ৩ তারিখে আমেরিকায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তার আগে চার দিন ধরে চলবে ডেমোক্র্যাটদের ন্যাশনাল কনভেনশন। অনলাইনে শুরু হওয়া এই সম্মেলনেই জো বাইডেন এবং কমলা হ্যারিসকে যথাক্রমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসাবে আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করা হবে। ভারতীয় সময় মঙ্গলবার সম্মেলনের উদ্বোধনের দিনেই ট্রাম্পকে ঘিরে একের পর এক ভাষণে আক্রমণ করেন বার্নি থেকে মিশেল ওবামা। বার্নির মতে, বিজ্ঞানকে অবজ্ঞা করে অতিমারির পরিস্থিতিতে মার্কিন জনজীবন আরও সঙ্কটে ফেলে দিয়েছেন ট্রাম্প। সেই সঙ্গে স্বেচ্ছাচারিতার ফলে দেশে গণতন্ত্রও বিপন্ন করে তুলেছেন তিনি। বার্নির কথায়, “আমাদের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মুখে। আমাদের অর্থনীতি খাদের কিনারায়। বিশ্বের ভবিষ্যৎ বিপন্ন। আমাদের সকলকে একত্র হয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করতে হবে এবং জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিসকে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে বেছে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে তার ভয়াবহ মূল্য চোকাতে হবে, যা কল্পনার অতীত।”
আরও পড়ুন: ট্রাম্পই ভারতের বন্ধু, বার্তা প্রচার রিপাবলিকানদের
বাইডেন ও কমলার স্বপক্ষে বলতে উঠে প্রেসিডেন্ট হিসাবে ট্রাম্পের ব্যর্থতাকেই তুলে ধরেছেন ডেমোক্র্যাট নেতা বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি বলেন, “এই প্রেসিডেন্ট শুধুমাত্র গণতন্ত্রের পক্ষেই বড় ঝুঁকি নন, বিজ্ঞানকে অবহেলা করে আমাদের জীবনকেও সঙ্কটের মুখে ঠেলে দিয়েছেন। চিকিৎসক বা বিজ্ঞানীরা, যাঁরা আমাদের অতিমারি থেকে রক্ষা করতে চেয়েছেন, তাঁদের আক্রমণ করেছেন। স্বাস্থ্যকর্মীদের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় মাস্ক, গ্লাভস উৎপাদনের ক্ষেত্রে কড়া পদক্ষেপ করতে অস্বীকার করেছেন।”
আরও পড়ুন: ‘পিএম কেয়ার্স’-এর অর্থ জাতীয় ত্রাণ তহবিলে হস্তান্তর করা যাবে না: সুপ্রিম কোর্ট
অতিমারি মোকাবিলায় বরাবরই তা নিয়ে অবহেলার অভিযোগ উঠেছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। বিশ্বে করোনা-আক্রান্ত দেশগুলির মধ্যে শীর্ষে রয়েছে আমেরিকা। জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ভারতীয় সময় মঙ্গলবার দুপুরে সে দেশে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১ লক্ষ ৭০ হাজার ৫০০-র বেশি। এ দিন বার্নির দাবি, “ট্রাম্পের অপদার্থতার ফলেই অতিমারিতে ১ লক্ষ ৭০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এবং জনগণকে রক্ষা করতে এখনও এ দেশ প্রস্তুত নয়।”
আরও পড়ুন: ফের হাসপাতালে অমিত শাহ, পর্যবেক্ষণে থাকবেন ২৪ ঘণ্টা
জনজীবন বিপন্ন হওয়ার পাশাপাশি আমেরিকার অর্থনীতির নিম্নমুখী হওয়ার জন্যও ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পকে দায়ী করেছেন। বার্নির কথায়, “ট্রাম্পের অবহেলার ফলেই আমরা অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখে পড়েছি। অতিমারি শুরুর পর থেকে ৩ কোটিরও বেশি মানুষ কর্মহীন হয়েছেন এবং আরও অনেকে স্বাস্থ্যবিমার সুবিধা হারিয়েছেন। লাখ লাখ পরিবার তাঁদের সন্তানদের মুখে কী ভাবে খাবার তুলে দেবে, তা নিয়ে চিন্তিত। হয়তো তাঁদের বাড়িঘর থেকেও তাড়িয়ে দেওয়া হবে, এই ভেবেও তাঁরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।”
বার্নির মতোই ট্রাম্পকে নিশানা করেছেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার স্ত্রী মিশেল ওবামা। প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি মিশেলের মতে, “আমাদের দেশের পক্ষে একেবারেই ভুল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।” তিনি বলেন, “যখনই আমরা নেতৃত্বের জন্য, সান্ত্বনা বা স্থিরতার কোনও প্রতীকের জন্য হোয়াইট হাউসের দিকে তাকিয়েছি, তার পরিবর্তে শুধু বিশৃঙ্খলা, বিভাজন এবং পুরোপুরি সহানুভূতির অভাবই টের পেয়েছি।” ভোটারদের কাছে বিভাজনের রাজনীতি পরিত্যাগ করারও আর্জি জানিয়েছেন মিশেল ওবামা। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সমালোচনা তির ছুড়ে মিশেলের দাবি, প্রেসিডেন্ট পদে থাকার জন্য অযোগ্য তিনি। প্রেসিডেন্ট হিসাবে ট্রাম্পের কোনও যোগ্যতা নেই। এমনকি, ট্রাম্পের চারিত্রিক কাঠিন্য বা শালীনতারও অভাব রয়েছে বলে মন্তব্য করেন মিশেল।
ডেমোক্র্যাটদের সমালোচনার মুখে পড়ে পাল্টা আক্রমণের পথে হেঁটেছে ট্রাম্প শিবির। একটি বিবৃতিতে রিপাবলিকানদের দাবি, “এটা বার্নি স্যান্ডার্সের পার্টি। জো বাইডেন যেখানে একটা শূন্য পাত্র মাত্র।” কট্টরপন্থী বাম মতাদর্শ অনুসারে কাজ করে চলেছেন বলে বার্নি স্যান্ডার্সদের আক্রমণ করতেও ছাড়েনি রিপাবলিকানরা। তাঁদের কটাক্ষ, “স্যান্ডার্সের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের বৃত্ত পূর্ণ হয়েছে। এটি এখন জো বাইডেন এবং কমলা হ্যারিসের হাতে রয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy