এই বাড়িটিতে গড়ে ওঠা বেসরকারি হোমিয়োপ্যাথি কলেজ। নিজস্ব চিত্র
রাজশাহির মানুষ বরাবর চেয়েছেন, শহরের মিঞাপাড়ায় ঋত্বিক ঘটকের পারিবারিক বসতবাড়িটি সরকার অধিগ্রহণ করে একটি প্রদর্শশালা করুক। ১৯৮৯-এ এরশাদ আমলে বাড়িটি অধিগ্রহণ করে নামমাত্র মূল্যের বিনিময়ে তুলে দেওয়া হয় একটি বেসরকারি হোমিয়োপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজকে। তার পরেও মানুষের চাপে ঋত্বিকের স্মৃতি বিজড়িত ঘরদোর এত দিন রেখেই দিয়েছিলেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি তার একাংশ রাতারাতি ভেঙে সেখানে পড়ুয়াদের সাইকেল স্ট্যান্ড করার কাজ শুরু হয়। এ খবর প্রকাশ হতেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে বাংলাদেশের সংস্কৃতি চর্চার মুখ হিসেবে পরিচিত রাজশাহির বিভিন্ন সংগঠন। সরব হন সে দেশের বিশিষ্ট চলচ্চিত্র শিল্পী ও কলাকুশলীরা। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় সাংসদের হস্তক্ষেপে মঙ্গলবার ঋত্বিকের বাড়ি ভাঙার কাজ স্থগিত রাখা হয়েছে।
শেষ দিন পর্যন্ত রাজশাহির বাড়ির জন্য মন কেমন ছিল চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটকের। মিঞাপাড়ার এই বাড়িতে তাঁর শৈশব, কৈশোর এবং প্রথম যৌবন কেটেছে। দেশভাগের ক্ষত বুকে নিয়ে এই রাজশাহি ছাড়তে হয়েছিল ঘটক পরিবারকে। মিঞাপাড়ার লাইব্রেরি মাঠে ঋত্বিকের আয়োজনে সাহিত্যসভায় এসেছিলেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও। ‘অভিধারা’ নামে একটি সাহিত্যপত্রিকাও সম্পাদনা করতেন ঋত্বিক। সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীও এই বাড়িতে বেশ কিছু দিন বসবাস করেছেন। ১৯৮৯-এ হুসেইন মহম্মদ এরশাদের সরকার বাড়িটি সামান্য মূল্যে একটি বেসরকারি হোমিয়োপ্যাথি কলেজকে দেওয়ার পরে তারা সেখানে বেশ কয়েকটি বহুতল ভবন তৈরি করে। সংস্কৃতি কর্মীদের অভিযোগ, কলেজটির পরিচালন পর্ষদে বরাবর স্বাধীনতা-বিরোধীদের প্রাধান্য। ঋত্বিকের স্মৃতিরক্ষায় তারা কোনও দিনই তৎপর হয়নি। রাজশাহি সদরের সাংসদ বামপন্থী ওয়ার্কার্স পার্টির
নেতা ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, “সব জেনেও আমি ওই কলেজে ঋত্বিকের নামে একটি প্রেক্ষাগৃহ তৈরি করে দিয়েছি। কিন্তু এখন কলেজ কর্তৃপক্ষ যে কাজ করছেন, প্রশাসনকে আমি জানিয়েছি। এটা করতে দেওয়া হবে না। রাজশাহি ঋত্বিকের শহর আছে, থাকবে।”
দিন চারেক আগে হোমিয়োপ্যাথি কলেজটির মধ্যে ঋত্বিকের বসতবাড়ি ভাঙা শুরু হয়। তার আগেই পাশে দোতলা সাইকেল গ্যারেজের কাজ শুরু করা হয়। খবর পেয়েই রাজশাহির ১৩টি সাংস্কৃতিক সংগঠন রাস্তায় নামে। মঙ্গলবারেও শহরে মানববন্ধন করেন এদের কর্মীরা। তার আগে জেলাশাসকের কাছে গিয়ে ঋত্বিকের বাড়ি ভাঙার নিন্দা করে তা বন্ধ করার দাবি জানান তাঁরা। এই বাড়িকে অধিগ্রহণ করে হেরিটেজ হিসেবে সংরক্ষণের প্রস্তাবও দেওয়া হয়। নাসির ইউসুফ বাচ্চু, তনভির মোকাম্মেল-সহ এক ডজন চলচ্চিত্রকার ও কলাকুশলী মঙ্গলবার বিবৃতি দিয়ে ঋত্বিকের বাড়ি ভাঙা অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানান। এর পরে স্থানীয় সাংসদের উদ্যোগে এই কাজ বন্ধ হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy