Dead Sea Scrolls Have Remained Mysterious Since Thousands of Years dgtl
Dead Sea
ডেড সি-র গুহায় প্রাচীন গুপ্তধনের রহস্য-নকশা! গোপনে পাঠোদ্ধারের চেষ্টায় বহু দেশ
মূলত প্যাপিরাস, পার্চমেন্ট, শূকর বা অন্য পশুর চামড়ার উপরে লেখা হত রিড পেন দিয়ে। পাতলা বাঁশের পাতের এক প্রান্ত তীক্ষ্ণ করে নেওয়া হত। তার পর তা কালিতে চুবিয়ে লেখা হত। প্রাচীন সুমেরীয় ও মিশরীয় সভ্যতাতেও এই কলমের প্রচলন ছিল।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২০ ০৯:০০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ত এবং প্রাণস্পন্দনহীন ‘ডেড সি’ ঘিরে রহস্যের শেষ নেই। শুধু এর ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যই নয়। পূর্বে জর্ডন ও পশ্চিমে ইজরায়েলের মাঝে বিস্তৃত এই সাগরের চারপাশে থাকা পাহাড়ের গুহাগুলিও রহস্যের আকর।
০২১৬
ডেড সি-র উত্তর পশ্চিম তট বরাবর আছে কুমরান গুহা। ১৯৪৬-’৪৭ সালে কিছু স্থানীয় রাখাল খেলার ছলেই ঢুকেছিল এই গুহায়। গুহা থেকে তারা উদ্ধার করে লম্বাটে বড় বড় মাটির প্রাচীন পাত্র। তার ভিতরে সযত্নে রাখা ছিল চামড়ার উপরে লেখা প্রাচীন লিপি।
০৩১৬
পশুচর্মগুলি গুটিয়ে রাখা ছিল পাত্রের ভিতরে। যাকে ইংরেজিতে বলা হয় ‘স্ক্রোল’। সাতটি পাত্র থেকে স্ক্রোল উদ্ধার করে বেদুইন জনগোষ্ঠীর ওই রাখাল বালকরা। তাদের নাম ছিল মহম্মদ ইদ ধিব, জুমা মহম্মদ এবং খলিল মুসা। ঐতিহাসিক আবিষ্কারের সঙ্গে চিরকালের জন্য জড়িয়ে যায় এই তিন জনের নাম।
০৪১৬
বেদুইনরা এর পর দল বেঁধে গুহায় হানা দিয়ে গুটিয়ে রাখা চর্মলিপি উদ্ধার করতে থাকে। ক্রমশ বাইরে ছড়িয়ে পড়ে এই রহস্য-আবিষ্কারের কথা। ১৯৪৬-এর শেষ থেকে শুরু করে প্রায় ১০ বছর ধরে ডেড সি-র চারপাশে গুহা থেকে উদ্ধার করা হয় এক হাজারের বেশি স্ক্রোল।
০৫১৬
মূলত প্যাপিরাস, পার্চমেন্ট, শূকর বা অন্য পশুর চামড়ার উপরে লেখা হত রিড পেন দিয়ে। পাতলা বাঁশের পাতের এক প্রান্ত তীক্ষ্ণ করে নেওয়া হত। তার পর তা কালিতে চুবিয়ে লেখা হত। প্রাচীন সুমেরীয় ও মিশরীয় সভ্যতাতেও এই কলমের প্রচলন ছিল।
০৬১৬
ডেড সি স্ক্রোলের বেশিরভাগই লেখা হয়েছে কালো কালিতে। রেডিয়ো কার্বন পরীক্ষায় ধরা পড়েছে অলিভ অয়েল বা জলপাইয়ের তেলে কয়লা পুড়িয়ে সেই কালি ব্যবহার করা হয়েছে। লাল কালি তৈরি করা হয়েছিল পারদ দিয়ে। মধু, জল আর ভিনিগার মিশিয়ে পাতলা করে নেওয়া হয়েছিল সান্দ্র কালি। তবে যতগুলি স্ক্রোল আবিষ্কৃত হয়েছে, তার মধ্যে মাত্র চার জায়গায় লাল কালি ব্যবহার করা হয়েছে।
০৭১৬
দীর্ঘ কয়েক দশকের গবেষণায় জানা গিয়েছে এই স্ক্রোলগুলি হিব্রু, অ্যারামাইক ও গ্রিক ভাষায় লেখা। বিশ্বের দ্বিতীয় প্রাচীন পাঠযোগ্য এই পাণ্ডুলিপির ধর্মীয় অংশকে পরে হিব্রু বাইবেলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু লিপিতে কিছু ধর্মীয় প্রসঙ্গ ছাড়াও ছিল বহু রহস্যাবৃত অংশ।
০৮১৬
ইতিহাসবিদদের ধারণা, খ্রিস্টের জন্মের তিনশো বছর আগে থেকে শুরু করে প্রথম খ্রিস্টাব্দ অবধি, অর্থাৎ প্রায় চারশো বছর ধরে ওই লিপিগুলি লেখা হয়েছিল। যুগের পর যুগ মধ্য এশিয়ার ওই অংশে বিভিন্ন সভ্যতাবাসী গুহাগুলিকে ব্যবহার করেছে তাদের নিরাপদ ও সুরক্ষিত সংগ্রহশালা হিসেবে।
০৯১৬
বিশ্বের প্রাচীনতম পাঠযোগ্য পাণ্ডুলিপি হল গ্রিক ভাষায় রচিত ‘কোডেক্স ভাটিকানাস’ বা ‘কোডেক্স সিনাইটিকাস’। পরে তাকে ওল্ড টেস্টামেন্টের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
১০১৬
কিন্তু আবিষ্কারের পরে আধুনিক বিশ্বে এই চর্মলিপির মালিকানা কার? তাই নিয়ে বিবাদ দেখা দিল জর্ডন ও ইজরায়েল দুই দেশের। ধর্মীয় স্ক্রোলগুলি পৌঁছয় ইজরায়েলে। প্রত্নতাত্বিকদের হিসেবে, কুমরানের তৃতীয় গুহা থেকে উদ্ধার হওয়া স্ক্রোলগুলিই প্রাচীনতম। সেগুলি নিজেদের কাছেই রেখে দেয় জর্ডনের মানুষ। সবথেকে আশ্চর্যের হল, এগুলি বাকি স্ক্রোলের মতো প্যাপিরাস বা শূকরের চামড়ায় লেখা নয়। বরং এগুলি লেখা হয়েছে তামার পাতে।
১১১৬
ইতিহাসবিদদের কাছে ‘কপার স্ক্রোল’ নামে পরিচিত এই লিপি উদ্ধার হয়েছিল ১৯৫২ সালে। উদ্ধার করেছিলেন জর্ডনের এক পুরাতাত্ত্বিক। পরে সেটিকে জর্ডন সরকারের উদ্যোগে পাঠানো হয় ইংল্যান্ডের ম্যাঞ্চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে।
১২১৬
সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা কয়েক বছরের গবেষণায় উদ্ধার করেন ওই স্ক্রোল আসলে বিশাল গুপ্তধন ভাণ্ডারের মানচিত্র। সেখানে মোট ৬৩টি স্থানের কথা বলা হয়েছে, যেখানে আছে সোনা রুপো ভর্তি কুঠুরি। যার পরিমাণ কয়েকশো টন।
১৩১৬
কিন্তু সেই গুপ্তধন এখনও উদ্ধার করা যায়নি। কারণ আজ থেকে ২৩০০ বছর আগের সঙ্কেত এখনও অনেকটাই দুর্বোধ্য। তা ছাড়া গুপ্তধন ওই গুহাগুলিতে, নাকি অন্য কোথাও লুকোনো আছে, তা-ও অস্পষ্ট। যদি গুহাগুলিতেও যদি থাকে, তা হলেও উদ্ধার করা কঠিন। কারণ ডেড সি-র চারপাশে অজস্র গুহাকে তবে চিনতে হবে নিজের নখদর্পণের মতোই।
১৪১৬
তবে বেশির ভাগ ইতিহাসবিদের মত, গুপ্তধন আর অবশিষ্ট নেই। গুহায় যা ছিল, তা সবই সেই দু’হাজার বছর আগেই লুঠ করে নিয়েছে রোমান সৈন্যরা। কিন্তু মানুষর আশা তো মরেও মরতে চায় না। তাই এই স্ক্রোল নিয়ে তরজা চলছে বিভিন্ন দেশে।
১৫১৬
১৯৬৭ সালে আরব-ইজরায়েল যুদ্ধের সময় জর্ডন থেকে প্রায় দেড় হাজার স্ক্রোল দখল করে ইজরায়েল। জর্ডনে কপার স্ক্রোল সমেত পড়ে থাকে মাত্র ২৫টি স্ক্রোল। এ ছাড়াও বেশ কিছু স্ক্রোল ছড়িয়ে আছে বিশ্বের নানা দেশে।
১৬১৬
এই সংক্রান্ত অনুসন্ধানের সাধারণত কোনও কিছুই প্রকাশ করতে চায় না কোনও দেশ। ফলে গুপ্তধন তো বটেই, ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও চাপা পড়ে আছে গোপনীয়তার আড়ালে।