ছবি: রয়টার্স।
এক দিনে সংক্রমিত ১৫ হাজার, শুধু একটি প্রদেশেই! ফ্লরিডার পরিস্থিতি এরকমই। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, দৈনিক সংক্রমণের তালিকায় ‘প্রথম সারির’ দেশগুলোকে টক্কর দিচ্ছে ফ্লরিডা। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ফ্লরিডা ‘দেশ’ হলে সংক্রমণের নিরিখে আমেরিকা, ব্রাজ়িল ও ভারতের পরেই চতুর্থ স্থানে থাকত।
মার্কিন প্রশাসনের অবশ্য তাতে হেলদোল নেই। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পথই তাদের পাথেয়। তিনি স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার পক্ষপাতী। মাস্ক পরতে নারাজ। দূরত্ববিধি মানেন না। গত কাল একটি হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে প্রথম তাঁকে মাস্ক পরতে দেখা যায়। কিন্তু বলতে থাকেন, ‘‘আমি মনে করি ওটা সময় ও জায়গা বুঝে পরা উচিত।’’ অর্থাৎ কিনা হাসপাতালে এসেছেন, তাই পরেছেন। অথচ দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা বারবার বলছেন, প্রকাশ্য স্থানে সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট তাতে নারাজ। এ নিয়ে মার্কিন করোনা টিমের শীর্ষে থাকা এপিডিমিয়োলজিস্ট অ্যান্টনি ফাউচির সঙ্গে ট্রাম্পের বিরোধিতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, দু’জনের মধ্যে কথা নেই। ইদানীং হোয়াইট হাউসকে সরাসরি ফাউচি-বিরোধী কথা বলতে শোনা যাচ্ছে। হোয়াইট হাউসের এক কর্তা সম্প্রতি বলেন, ‘‘ফাউচি অনেক ভুলভাল তথ্য দিয়েছেন। সেই সব নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত আমরা।’’ দায়িত্ব থেকে হয়তো এ বার তাঁকে সরানো হবে, সেই গুঞ্জনও উঠেছে। শোনা যাচ্ছে, ফাউচি আর প্রেসিডেন্ট বা ওভাল অফিসকে দেশের করোনা-পরিস্থিতি ‘ব্রিফিং’ করবেন না। যে ফাউচি বারবার করে বলেছেন, মার্কিন প্রশাসনের সতর্ক হওয়া দরকার, দেশে লকডাউন বাড়ানো উচিত, পারস্পরিক দূরত্ব জরুরি, তাঁকেই এখন খলনায়ক করা হচ্ছে। পুরনো প্রসঙ্গ টেনে বলা হচ্ছে ফাউচি-ই তো বলেছিলেন, ‘‘মাস্ক পরার দরকার নেই।’’
প্রেসিডেন্টের মতোই বেপরোয়া তাঁর দেশের বহু মানুষ। মিশিগান ও মিসৌরিতে মাস্ক-বিরোধী বিক্ষোভ মিছিল চলছে। ‘করোনা-পার্টি’ দিচ্ছেন কমবয়সিরা। আমন্ত্রণ করা হচ্ছে আক্রান্তকে। তার পর তাঁর থেকে কে আগে সংক্রমিত হবেন, এটাই ‘গেম’। এ ভাবে করোনা-পার্টিতে গিয়ে সংক্রমিত হয়ে মৃত্যু হয়েছে টেক্সাসের ৩০ বছরের এক যুবকের।
আরও পড়ুন: ধনীদের থেকে আরও কর নিক সব দেশের সরকার, খোলা চিঠি দিলেন বিত্তবানরাই
আরও পড়ুন: ৩ চিনা রাজনীতিকের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা, প্রত্যাঘাত করল বেজিংও
বিশ্বে করোনা
মৃত - ৫,৭৩,৩০৪
আক্রান্ত - ১,৩১,৩৫,১৩৪
সুস্থ - ৭৬,৬০,৪১৩
ফ্লরিডাতেও একাধিক মাস্ক-বিরোধী প্রচার হয়েছে। সৈকতে ভিড় করেছেন মানুষ। ব্যবসা-বাণিজ্য চলছে নিয়ম না-মেনেই। শুক্রবার থেকে খুলে গিয়েছে অর্ল্যান্ডোর ওয়াল্ট ডিজ়নি ওয়ার্ল্ড। সপ্তাহান্তে ভিড়ও হয়েছিল। ডিজ়নি কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলছেন, দর্শক সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। কিন্তু উল্লেখযোগ্য হল, ডিজ়নি ওয়ার্ল্ড খুলে দেওয়ার পরের দিনই ফ্লরিডার সংক্রমণের সংখ্যা বেড়ে ১৫ হাজার!
গত দু’সপ্তাহে আমেরিকার অন্তত ৪০টি প্রদেশে করোনা সংক্রমণ ব্যাপক ভাবে বেড়েছে। দেশে দৈনিক সংক্রমণের হারও ভয়াবহ। গত চার দিনে সংখ্যাটা ৬০ থেকে ৭০ হাজারের আশপাশে ঘোরাফেরা করছে। অ্যারিজ়োনা, ক্যালিফর্নিয়া, ফ্লরিডা ও টেক্সাসের হাসপাতালগুলোয় ইতিমধ্যেই শয্যার অভাব। গোটা দেশে মোট সংক্রমিত ৩৪ লাখের উপরে। মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৩৮ হাজারের।
সংক্রমণ তালিকায় আমেরিকার পরেই রয়েছে ব্রাজ়িল, সাড়ে ১৮ লাখেরও বেশি। মৃতের সংখ্যাতেও ব্রাজ়িল দ্বিতীয় স্থানে। ৭২ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। লাতিন আমেরিকার আর এক দেশ ক্রমশ তালিকার শীর্ষে উঠছে। সংক্রমণের নিরিখে তারা আটে। কিন্তু মৃত্যুতে আজ ইটালিকে ছাপিয়ে চারে উঠে এল মেক্সিকো। মৃতের সংখ্যা সেখানে ৩৫ হাজার। ব্রিটেনের ঠিক পরেই।
এর মধ্যে লন্ডনের কিংস কলেজের এক দল গবেষকের দাবি, করোনা থেকে বেঁচে ফিরলেই যে বিপদ কাটল, তা নয়। ভাইরাসের সঙ্গে যুঝে শরীরে যে ইমিউনিটি তৈরি হচ্ছে, তা বহু ক্ষেত্রেই ক্ষণস্থায়ী। সর্বসাকুল্যে হয়তো মাসখানেক!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy