Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Vaccine

করোনাভাইরাসের প্রথম প্রতিষেধক, পরীক্ষা শেষের আগেই টিকা রাশিয়ার, বিতর্ক

অবিশ্বাস্য কম সময়ের মধ্যে তৈরি হওয়া এই ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিশ্ব জুড়ে।

রাশিয়ার প্রকাশিত স্পুটনিক ভি-র ছবি। ছবি: এএফপি

রাশিয়ার প্রকাশিত স্পুটনিক ভি-র ছবি। ছবি: এএফপি

সংবাদ সংস্থা
মস্কো শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২০ ০৪:৪৬
Share: Save:

সেই ১৯৫৭-য় আমেরিকা-সহ গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়ে মহাকাশে প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠিয়েছিল রাশিয়া। প্রায় একই ধাঁচে এ বার করোনা কবলিত পৃথিবীকে চমকে দিয়ে ভ্যাকসিন আবিষ্কারের খবর দিল তারা।

আজ সকালে, টেলি-কনফারেন্সে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা করলেন, করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কার করে ফেলেছে রাশিয়া। সরকারি ভাবে তার প্রথম প্রয়োগ করা হয়েছে পুতিনের মেয়ের শরীরে। তিনি জানান, ভ্যাকসিনের প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ় প্রয়োগের পরে মেয়ের শরীরে তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছিল। পরে আবার তা ঠিক হয়ে যায়। এখন মেয়ে সুস্থ বোধ করছে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এবং আরডিআইএফ (রাশিয়ান ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড)-এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভ্যাকসিনটি তৈরি করেছে গামালিয়া ইনস্টিটিউট। প্রথম উৎক্ষেপিত কৃত্রিম উপগ্রহের নামেই ভ্যাকসিনের নাম রাখা হয়েছে স্পুটনিক ভি। ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য তারা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার পথেই হেঁটেছে বলে দাবি রাশিয়ার। অ্যাডিনোভাইরাসের দুটি স্ট্রেনকে জিনগত ভাবে বদলে, তার ক্ষমতাকে দুর্বল করে ভ্যাকসিনটি তৈরি করা হয়েছে। যাতে শরীরে অ্যান্টিবডি গড়ে উঠে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হতে পারে। পুতিনের দাবি, তাঁদের তৈরি ভ্যাকসিনটি কার্যকরী এবং মানবদেহে দীর্ঘস্থায়ী রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সক্ষম। তাঁর আশ্বাস, প্রয়োজনীয় সমস্ত পরীক্ষা শেষ করেই ভ্যাকসিনটিকে ছাড়পত্র দিয়েছে রাশিয়া। রুশ প্রশাসনের দাবি, এ মাসেই চিকিৎসক, শিক্ষক-সহ প্রথম সারির করোনা যোদ্ধাদের এই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন: মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে সঙ্কটে প্রণব মুখোপাধ্যায়

করোনা: পুতিনের টেক্কা-টিকা

‘‘বিশ্বে করোনাভাইরাসের প্রথম ভ্যাকসিন আনল রাশিয়া। এটি মানবশরীরে দীর্ঘস্থায়ী রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সক্ষম।’’ —প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন

করোনাভাইরাসের প্রথম প্রতিষেধক

• নাম: স্পুটনিক ভি (১৯৫৭ সালে মহাকাশে সোভিয়েত রাশিয়ার প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহের নামে)
• তৈরি করেছে: প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এবং রাশিয়ান ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে গামালিয়া ইনস্টিটিউট। উৎপাদন শুরু সেপ্টেম্বরে।
• গোত্র: ‘অ্যাডিনোভাইরাস ভেক্টর ভ্যাকসিন’। অক্সফোর্ডের চ্যাডক্স১-এর মতোই সাধারণ সর্দি-কাশির জন্য দায়ী ভাইরাসকে জিনগত ভাবে বদলে, দুর্বল করে তৈরি করা হয়েছে এই ‘ক্যান্ডিডেট’।
• প্রথম প্রয়োগ: পুতিনের মেয়ের উপরে। মেয়ে সুস্থ বলেই দাবি প্রেসিডেন্টের।
• প্রশ্ন: শেষ পর্বের পরীক্ষার আগেই সাফল্যের দাবি। ফলে প্রশ্ন উঠছে সুরক্ষা ও কার্যকারিতা নিয়ে। অভিযোগ, অন্যদের টেক্কা দিতে পরীক্ষার প্রয়োজনীয় ধাপে কাটছাঁট করছে রাশিয়া। অহেতুক তাড়াহুড়ো নিয়ে আগেই সতর্ক করেছিল হু। ২০টি দেশ অবশ্য টিকার বরাত দিয়েছে।

তবে অবিশ্বাস্য কম সময়ের মধ্যে তৈরি হওয়া এই ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিশ্ব জুড়ে। এএফপি-সহ প্রথম সারির মার্কিন সংবাদপত্রগুলির একাংশের অভিযোগ, ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষ হওয়ার আগেই ভ্যাকসিনে ছাড়পত্র দিয়েছে রাশিয়া। আদৌ তারা তৃতীয় ট্রায়াল শুরু করেছে কিনা, সেই প্রশ্নও তুলছে কেউ কেউ। একাংশের দাবি, পুরোটাই রাজনৈতিক ক্ষমতা ও বাজার দখলে এগিয়ে থাকার লড়াই।

কয়েক সপ্তাহ আগে, যখন ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বা আমেরিকার ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা মর্ডানা জানিয়েছিল, তারা সম্ভাব্য প্রতিষেধক তৈরির প্রথম ধাপ সম্পন্ন করেছে, তখন রাশিয়া ঘোষণা করেছিল, বিশ্বের সামনে আবার স্পুটনিক মুহূর্ত আনতে চলেছে তারা।

গামালিয়া ইনস্টিটিউটে বিজ্ঞানীদের ব্যস্ততা তুঙ্গে। ছবি: রয়টার্স

তিনটি ধাপে যে সব দেশে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে সেগুলি হল, আমেরিকা, ব্রিটেন, চিন, রাশিয়া, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডা। এর মধ্যে তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানোর কথা জানিয়েছে, মার্কিন সংস্থা মর্ডানা এবং চিনের তিনটি সংস্থা।

গবেষণা সংস্থাগুলির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, যে কোনও ভ্যাকসিন মানবশরীরে প্রয়োগের ছাড়পত্র পাওয়ার আগে তিনটি পর্বে (কেউ কেউ চারটি ধাপেও করে) ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলে। এর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ এবং গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হল তৃতীয় পর্যায়। এই পর্বে প্রতিষেধকের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পর্যবেক্ষণ করা হয়। তা-ই কারও কারও মতে, তৃতীয় পর্বের ট্রায়াল শেষ হতে কয়েক বছর পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। এ বিষয়ে সম্প্রতি নাম না-করেই রাশিয়াকে তাড়াহুড়ো না-করার পরামর্শ দিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)।

আজ অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালস অর্গানাইজেশনস (অ্যাক্টো)-এর এগজ়িকিউটিভ ডিরেক্টর শ্বেতলানা জ়াভিডোভা বলেন, ‘‘সব সংস্থা যখন নিয়ম মানছে, তখন রাশিয়া কেন তা শুনছে না? ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের নিয়মকানুন রক্তের মধ্যে লেখা রয়েছে। ওরা তা অগ্রাহ্য করতে পারে না।’’ এ প্রসঙ্গে তাঁর সতর্কবার্তা, ‘‘এটা প্যান্ডোরার বাক্সের মতো। একটা অপরীক্ষিত ভ্যাকসিন শরীরে প্রয়োগের পরে, তার ফল কী দাঁড়াবে আমরা কেউ জানি না।’’ আন্তর্জাতিক ওষুধ নির্মাতা সংস্থাগুলিও জানিয়েছে, এটি অবশ্যই একটি ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ।

প্রতিষেধক নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি ব্রিটেন, কানাডা, আমেরিকা জুলাইয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন সংক্রান্ত তথ্য হ্যাকিংয়ের অভিযোগ তুলেছিল। ব্রিটেন সাফ জানিয়েছিল, রুশ ভ্যাকসিন তারা নেবে না। যদিও ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট রডরিগো দুতের্তে আজই ‘স্বেচ্ছাসেবী’ হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন।

রাশিয়ার এই টিকা আবিষ্কারের পরে ভারতের কি কোনও লাভ হবে, উঠছে সেই প্রশ্নও। আজ নয়াদিল্লিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সাপ্তাহিক সাংবাদিক বৈঠকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, কোনও মন্তব্য করেননি স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ। ভারতে ওই টিকা ব্যবহার নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে কোনও চুক্তি হয়েছে কিনা, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এখনই এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়।’’ স্বাস্থ্য মন্ত্রকের একাংশের মতে, টিকা কতটা নিরাপদ তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে ভারতেরও। এমসের ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়া এ প্রসঙ্গে আজ বলেছেন, ‘‘রাশিয়ার তৈরি ভ্যাকসিনটি সফল হলে, তা কার্যকরী এবং নিরাপদ কিনা, আমাদের খুঁটিয়ে দেখতে হবে।’’ একই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, জনগণের জন্য বিপুল পরিমাণে ভ্যাকসিন উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে ভারতের।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy