Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

হাডসন নদীর ধারে বেঞ্চগুলো সব ফাঁকা

সরকারি আর্থিক সাহায্যের অপেক্ষায় বসে আছে লক্ষ লক্ষ পরিবার। এই করোনার সময় কেটে গেলে হয় তো শুরু হবে আর্থিক মন্দা।

সুনসান: ও-পারে নিউ ইয়র্ক। হাডসনের তীরে, নিউ জার্সিতে। নিজস্ব চিত্র

সুনসান: ও-পারে নিউ ইয়র্ক। হাডসনের তীরে, নিউ জার্সিতে। নিজস্ব চিত্র

মৌসুমী দাস
নিউ জার্সি (আমেরিকা) শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২০ ০৬:০৮
Share: Save:

পয়লা মার্চ নিউ ইয়র্কে যখন প্রথম করোনা-আক্রান্ত ধরা পড়ল, তখন আঁচ করতেই পারিনি, কী ভাবে কয়েক দিনের মধ্যে আমাদের জীবন তোলপাড় হতে চলেছে।

এখন দেড় মাস পরে আমেরিকায় করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা ছ’লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। শুধু নিউ ইয়র্কও নিউ জার্সিতে ঠিক কত জন মানুষ মারা গিয়েছেন সেই সংখ্যাটা যখন বুলেটিনে শুনি, তখন মনে হয় ঠিক শুনছি তো? শরীরে ভয়ের একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে যায়। বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখেছি রেফ্রিজারেটর ট্রাক বহন করে নিয়ে যাচ্ছে মৃতদেহ। শুনলাম নিউ ইয়র্ক ও নিউ জার্সির হাসপাতালগুলোয় মৃতদেহ রাখার জায়গা নেই। তাই হাসপাতালগুলোই এই সব রেফ্রিজারেটার ট্রাক কিনেছে।

আমাদের আবাসনে করোনা-আক্রান্ত না-থাকলেও একটু দূরেই একটি বহুতলে এক করোনা-আক্রান্ত আছেন বলে শুনেছি। ওই বাড়ির বাসিন্দারা তাই কোয়রান্টিনে আছেন।

আরও পড়ুন: বিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেল ২০ লক্ষ

অর্থাভাবে অনেকেই খাবার-দাবার মজুত রাখতে পারেননি। খিদের জ্বালায় কয়েক দিন আগে বাড়ির খুব কাছেই ডেলিভারিম্যানকে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে খাবার লুঠ করেছে কিছু লোক জন। সরকারি আর্থিক সাহায্যের অপেক্ষায় বসে আছে লক্ষ লক্ষ পরিবার। এই করোনার সময় কেটে গেলে হয় তো শুরু হবে আর্থিক মন্দা। প্রচুর মানুষের চাকরি হারানো আশঙ্কা রয়েছে।

মাস্কের অভাব। তাই নিজেরাই মাস্ক বানিয়ে নিয়েছি। স্বামীর ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’। মেয়ের অনলাইন ক্লাস, রান্নাবান্না সব নিয়ে শুরুতে নাজেহাল লাগলেও ধীরে ধীরে এটাই রুটিন হয়ে গেছে। চাল, ডাল, আটা, সয়াবিন, বিস্কুট বাড়ির রান্নাঘরে মজুত রেখেছি।

আরও পড়ুন: ১০০ পা হেঁটে ৬৭ কোটি টাকার তহবিল গড়লেন প্রাক্তন সেনা অফিসার

আমাদের এখানে শারীরচর্চায় ছাড় দেওয়া হয়েছে। এক দিন আমি হাডসন নদীর ধারে গিয়ে দেখলাম দূরত্ব বজায় রেখে শারীরচর্চা করছেন অনেকে। কেউ আবার সাইকেল চালাচ্ছেন। হাডসন নদীর ধারে চেয়ারগুলো কিন্তু খালি পড়ে আছে। নিউ ইয়র্কের স্কাইলাইনকে পিছনে রেখে এই হাডসন নদীর ধারে দাঁড়িয়ে পর্যটকেরা ছবি তোলেন। সেই দিনগুলো আবার কবে ফিরবে কে জানে!

যে সব স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই হাসপাতালে জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের বাচ্চাদের তো দেখার কেউ নেই। ডাক্তার ও নার্সদের সন্তানদের দেখাশোনার জন্য তাই একটি জরুরি ভিত্তিতে চাইল্ড কেয়ার সেন্টার খোলা হয়েছে জার্সি সিটির মেরিন বুলেভার্ডে।

শহরে যাঁরা দিনের পর দিন করোনার সঙ্গে লড়াই চালাচ্ছেন, সেই চিকিৎসক, নার্স, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সাধারণ মানুষ হাততালি দিয়ে, হর্ন বাজিয়ে অভিবাদন জানাচ্ছেন। ওইটুকু সময়েই মনে হচ্ছে শহরটা যেন জেগে উঠেছে।

(লেখক জার্সি সিটি মেডিক্যাল সেন্টারে স্বেচ্ছাসেবক)

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus COVID-19 New Jersey
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy