অক্সফোর্ডের জেনার ইনস্টিটিউটের গবেষকদলের অন্যতম আড্রিয়ান হিল। —ফাইল চিত্র
করোনাভাইরাসকে হারিয়ে আগের মতো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে হলে একমাত্র উপায়, প্রতিষেধক আবিষ্কার। সেই আবিষ্কারের সন্ধানে ছুটে চলেছেন সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা। কয়েকটি দেশে ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল’ও শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সবার চেয়ে কয়েক কদম এগিয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। কারণ, অন্যান্য ক্ষেত্রে যেখানে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হচ্ছে কয়েকশো ব্যক্তির উপর, সেখানে অক্সফোর্ডের এই প্রতিষেধক প্রয়োগ করা হয়েছে প্রায় ৬ হাজার মানুষের উপর। পরীক্ষার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে সবচেয়ে আগে। তা ছাড়া এই প্রতিষেধক শুধু যে করোনার প্রতিরোধের নিরিখে দেখা হবে তাই নয়, মানবদেহে কোনও ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে কি না, তাও দেখবেন বিজ্ঞানীরা। পরীক্ষায় সফল হলে সেপ্টেম্বরেই এসে যেতে পারে করোনার প্রতিষেধক। আপাতত সেই আশাতেই অক্সফোর্ডের গবেষক দলের দিকে তাকিয়ে ব্রিটেন-সহ গোটা বিশ্ব।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ার পর এ বছরের জানুয়ারিতেই প্রতিষেধক তৈরির কাজ শুরু করে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জেনার ইনস্টিটিউট’। সেই দলে থাকা বিজ্ঞানীদের অন্যতম আড্রিয়ান হিল সহ অন্য বিজ্ঞানীদের আশা, ক্লিনিক্যাল টেস্টে সাফল্য পাবে। এই দলে রয়েছেন বাঙালি বিজ্ঞানী সুমি বিশ্বাস।
এই জেনার ইনস্টিটিউটের প্রতিষেধক তৈরির পর তা মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়েছে কিছু দিন আগেই। ইতিমধ্যেই ৬ হাজার মানুষের দেহে প্রয়োগ করা হয়েছে ওই প্রতিষেধক। ইনস্টিটিউট সূত্রে খবর, মে মাসের শেষেই সেই পরীক্ষার ফলাফল জানা যাবে। ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের আশা, এই ভ্যাকসিন শুধু যে নিরাপদ তাই নয়, করোনা প্রতিরোধে কাজ করবে, সেটাও প্রমাণিত হবে। তাঁদের বক্তব্য, জরুরি ভিত্তিতে সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন পাওয়ার পর এ বছরের সেপ্টেম্বরেই প্রথম ধাপে কয়েক লক্ষ টিকা তৈরি হয়ে যাবে। তবে তার আগে অবশ্যই পরীক্ষমূলক প্রয়োগের ফল কার্যকরী ও নিরাপদ হিসেবে প্রমাণিত হতে হবে।
আরও পড়ুন: ভুল করে কোভিড রোগীকে বাড়ি পাঠাল বাঙুর! ফের নিয়ে যেতেই মৃত্যু
অন্য গবেষণার অগ্রগতি কেমন? ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেল্থ-এর অধীন ‘রকি মাউন্টেন ল্যাবরেটরি’র বিজ্ঞানীরা গত মাসেই ৬টি রেসাস ম্যাকাওয়ের উপর একটি প্রতিষেধক প্রয়োগ করেছেন। এই গবেষণার নেতৃত্বে থাকা বিজ্ঞানী ভিনসেন্ট মুনস্টার বলেছেন, ‘‘ওই প্রাণীগুলিকে প্রচুর ভাইরাসের মধ্যে রাখা হয়েছিল। তাতে দেখা যায়, দ্রুত অন্য ম্যাকাওগুলির মধ্যেও ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটছে। তবে ২৮ দিনের মাথায় ম্যাকাওগুলি সুস্থ হয়ে উঠেছে।’’ রেসাস ম্যাকাও মানুষের সবচেয়ে কাছের গোত্রের প্রাণী। মানবদেহেও এর প্রয়োগ শুরু হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই তিনি এই তথ্য অন্য বিজ্ঞানীদের সঙ্গে আদানপ্রদান করবেন এবং তার পর ফের রিভিউ করে পত্রিকায় প্রকাশের জন্য পাঠাবেন। তবে এই গবেষণার ক্ষেত্রে সমস্যাও রয়েছে। বানর প্রজাতির মধ্যে প্রয়োগ করলেই যে সব সময় তা মানব দেহে কাজ করবে এমন নয়। কারণ পরিবেশ, আবহাওয়া, তাপমাত্রার মতো আরও কিছু বিষয়ের উপরেও নির্ভর করে প্রতিষেধকের কার্যকারিতা।
আরও একটি প্রতিষেধক টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করে চিনা সংস্থা। ওই টিকার নাম ‘সিনোভ্যাক’। এই ভ্যাকসিন ১৪৪ জনের উপর প্রয়োগ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের বিজ্ঞানীদেরও দাবি, রেসাস ম্যাকাওয়ের উপর প্রয়োগ করে তাঁরা সাফল্য পেয়েছেন। কিন্তু তাঁদের থেকে অনেক এগিয়ে রয়েছে অক্সফোর্ডের গবেষকদের তৈরি টিকা। অক্সফোর্ডের গবেষক দলের অন্যতম এমিলিও এমিনি বলেছেন, ‘‘এটা অত্যন্ত দ্রুতগতির প্রকল্প।’’ তবে শেষ পর্যন্ত কোন সংস্থার গবেষণায় সাফল্য মিলবে তা নির্ভর করছে মানবদেহে প্রয়োগ করা প্রতিষেধকের ফলাফলের উপর।
আরও পড়ুন: আমেরিকায় মৃত্যুমিছিল, আশঙ্কা বাড়াচ্ছে রাশিয়া ও ব্রাজিলের সংক্রমণ
অক্সফোর্ডের জেনার ইনস্টিটিউটের এই প্রকল্পের পাঁচ বিজ্ঞানীর মধ্যে অন্যতম প্রফেসর আড্রিয়ান হিল বলেন, ‘‘আমরাই দেশের মধ্যে একমাত্র যেখানে আরও কয়েক সপ্তাহ করোনাভাইরাসের নতুন আক্রান্ত থাকবে। তাই আমরা আমাদের এই টিকা পরীক্ষা করতে পারব।’’ নতুন কোনও প্রতিষেধক বা ওষুধের পরীক্ষার নিয়মে বাইরে থেকে কাউকে কোনও রোগ বা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটিয়ে তার পর তার প্রতিষেধক প্রয়োগ করা নিষিদ্ধ। তাই এ ক্ষেত্রে এমন লোককেই প্রতিষেধক প্রয়োগ করতে হবে, যে এলাকায় স্বাভাবিক ভাবেই সংক্রমণ বা আক্রান্ত মানুষ রয়েছেন।
বিজ্ঞানীদের মতে, যদি লকডাউন ও সামাজিক দূরত্বের কারণে স্বাভাবিক ভাবেই ভাইরাসের সংক্রমণ কমে যায়, তা হলে পরীক্ষার সঠিক ফলাফল পাওয়া যাবে না। তখন আবার যেখানে সংক্রমণ রয়েছে, এমন জায়গায় পরীক্ষা করতে হবে। পাশাপাশি একাধিক ভ্যাকসিনের প্রয়োজন হতে পারে, মনে করছেন গবেষক এমিনি। তাঁর মতে, কেউ একটা নির্দিষ্ট বয়সের মানুষের উপর প্রতিষেধক প্রয়োগ করতে পারে, অন্য সংস্থা আবার শিশু বা বৃদ্ধের উপর করতে পারে।
কিন্তু এত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত প্রতিষেধক আবিষ্কারের পরীক্ষায় সফল হবেন তাঁরা, এমনটাই আশা করছেন অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীরা। আর পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ফল ভাল হলে এই গবেষণা সবার চেয়ে অন্তত কয়েক মাস আগে প্রতিষেধক বাজারে আনতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy