ছবি এপি
উত্তর-পশ্চিম জার্মানির একটি ছোট্ট শহর ডেল্মেনহর্স্ট। শান্ত-স্নিগ্ধ-নিরিবিলি একটি শহর। নভেম্বর মাস থেকে কর্মসূত্রে এই ছোট্ট, সুন্দর শহরই হয়ে উঠেছে আমি আর আমার পরিবারের কয়েক মাসের ঠিকানা। ডেল্মেনহর্স্ট শহরে ‘হানসে ইনস্টিটিউট’ নামের একটি প্রথম সারির গবেষণা প্রতিষ্ঠান ছাড়া উল্লেখযোগ্য আর কোনও স্থান নেই। আছে শুধু ছবির মতো সুন্দর বাড়ি, দূষণহীন আদিগন্ত আকাশ, নাম-না-জানা প্রচুর ঘাসফুল আর পাখির কলকাকলি।
হঠাৎ সমস্ত কিছু স্তব্ধ হয়ে গেল মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকেই জার্মানিতে অল্পস্বল্প সংক্রমণের খবর আসছিল। কিন্তু তখনও ডেল্মেনহর্স্ট বা সব থেকে কাছের বড় শহর ব্রেমেনে থাবা বসাতে পারেনি করোনাভাইরাস। কিন্তু মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই একটা-দু’টো করে সংক্রমণের খবর আসতে শুরু করল। সংক্রমণের হার তড়িৎগতিতে বাড়তে শুরু করল মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে। প্রথমেই বন্ধ হয়ে গেল স্কুল। মার্চ মাসের ১৮ তারিখ থেকে বন্ধ হয়ে গেল ইউনিভার্সিটি, বাতিল হয়ে গেল সমস্ত রকম জনসমাবেশ। সুপারমার্কেট, খাবারের দোকান আর ওষুধের দোকান ছাড়া প্রায় সব দোকান ও শপিং মল এবং প্রায় সমস্ত অফিস তাদের ঝাঁপ বন্ধ করল। শুরু হল ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’। বসন্তের শুরুতেই সব স্কুল-ইউনিভার্সিটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখানকার তরুণ প্রজন্ম প্রথমে খুব খুশি হয়েছিল। তারা বিভিন্ন পার্কে, মাঠে রৌদ্র-স্নাত হয়ে বন্ধুদের সঙ্গে হঠাৎ-পাওয়া ছুটি উপভোগ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। যার ফলে মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে সংক্রমণ ২০০ (ডেল্মেনহর্স্ট ও ব্রেমেন, ১০ মার্চ) থেকে বেড়ে দাঁড়াল ২৫০০ (ডেল্মেনহর্স্ট ও ব্রেমেন, ২৫ মার্চ)। পুরো জার্মানিতে সংক্রমণ-সংখ্যা তত দিনে ৩১ হাজার ছাড়িয়েছে। তখনই দু’জনের বেশি জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করা হল, ঘোষণা করা হল যে, পরিবার-বহির্ভূত যে কোনও দুই ব্যক্তির মধ্যে ন্যূনতম দূরত্ব হতে হবে ১.৫ থেকে ২ মিটার এবং নিয়ম ভাঙলে ৫০০ ইউরো জরিমানা হবে।
পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশে যেখানে কঠোর ভাবে লকডাউন পালিত হচ্ছে, সেখানে জার্মানিতে, কয়েকটি প্রদেশ ছাড়া, সম্পূর্ণ লকডাউন কখনওই করা হয়নি। এখানে চালু রয়েছে প্রায় সমস্ত সাধারণ যানবাহন, ট্রেন-ট্রাম-বাস ইত্যাদি। প্রতিটি সুপারমার্কেট সারা সপ্তাহ, এমনকি রবিবারেও, পরিষেবা দিচ্ছে। খাদ্যদ্রব্যের ঘাটতি প্রায় কখনওই হয়নি। পোষ্য নিয়ে সকালে-বিকেলে হাঁটা অব্যাহত আছে, অবশ্যই যথাযথ দূরত্ব বজায় রেখে। ছোট-ছোট রেস্তরাঁগুলোও বাড়ি-বাড়ি খাবার সরবরাহ করার অনুমতি পেয়েছে। সুতরাং, সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনে কিছুটা প্রভাব পড়লেও তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য একেবারে বিপর্যস্ত হয়নি। শুধুমাত্র যথাযথ দূরত্ব বজায় রেখে এবং প্রয়োজন ছাড়া অতিরিক্ত যাতায়াত বন্ধ রেখে একটি দেশ মাত্র এক মাসের মধ্যে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে। এই মুহূর্তে এক লক্ষ ৬৬ হাজার সংক্রমণের মধ্যে প্রায় এক লক্ষ ৩৫ হাজার মানুষ সুস্থ হয়েছেন। পড়শি ফ্রান্সে সংক্রমণের সংখ্যাটা একই রকম হলেও সে দেশে মৃতের সংখ্যা ২৫ হাজারেরও বেশি। কিন্তু জার্মানিতে এখনও মৃতের সংখ্যা ৭ হাজার পেরোয়নি। এখনও পর্যন্ত ডেল্মেনহর্স্টে সংক্রমণের সংখ্যা মাত্র ৪১, যার মধ্যে প্রায় ৫০% মানুষ সুস্থ হয়েছেন। ২০ এপ্রিল থেকে জার্মানিতে লকডাউন কিছুটা শিথিল করা হয়েছিল। খুলেছিল বেশ কিছু দোকান। ৩ মে থেকে লকডাউন আরও কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। তবে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়মকানুন একই রকম থাকছে আপাতত।
(লেখক ব্রেমেন ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী)
আরও পড়ুন: মৃত্যু বাড়তে পারে, ঝুঁকি নিয়েই লকডাউন তোলার ইঙ্গিত ট্রাম্পের
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy