শ্যানডং প্রদেশের একটি কারখানায় তৈরি হচ্ছে মাস্ক।—ছবি এপি।
সামান্য হলেও কমল মারণ ভাইরাসের প্রকোপ। চিনের সরকারি পরিসংখ্যান অন্তত তেমনটাই বলছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে করোনাভাইরাস কার্যত মহামারীর আকার নেওয়ার পরে প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল এই রোগে সংক্রমিতের সংখ্যা। কিন্তু চিনের সরকারি সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, এই ক’দিনের মধ্যে আজই সবচেয়ে কম সংক্রমণের খবর মিলেছে। যাতে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছেন চিকিৎসকেরা। গত কাল গোটা দেশ থেকে এক দিনে দু’হাজার চারশোরও বেশি মানুষের মধ্যে সংক্রমণের খবর মিলেছিল। আজ সেই সংখ্যাটা দু’হাজারের কাছাকাছি। এখনও পর্যন্ত এই ভাইরাসের আক্রমণে চিনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,১১৫। আক্রান্ত প্রায় ৪২,১৭২ জন।
তবে চিনের বাইরে বেশ কয়েকটি দেশেও এই ভাইরাস এ বার মহামারীর আকার নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এমনিতে ২৬টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ওই ভাইরাস। চিন থেকে আসা বিমানগুলির দরজা তাই এখনও বন্ধই রাখছে তারা। ফিলিপিন্স এবং হংকংয়ে এক জন করে আক্রান্তের মৃত্যুও হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগ বাড়ছে সিঙ্গাপুর সরকারের। ইতিমধ্যেই সেখানে ৪৭ জনের শরীরে এই ভাইরাসের সংক্রমণ মিলেছে। একটি বাণিজ্যিক বহুতলে এক জনের সংক্রমণের খবর পেয়ে সেখানকার একটি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তাঁদের ৩০০ জন কর্মীকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। রাস্তাঘাটে সকলে মাস্ক পরে বেরোলেও গণপরিবহণ বা স্কুল-কলেজে-অফিসের মতো এলাকায় সংক্রমণ হু হু করে ছড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছে প্রশাসন।
চিনে এখন সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। মেডিক্যাল মাস্ক ও শরীর-ঢাকা পোশাক পর্যাপ্ত নেই। তাই কার্যত সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে ভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসা করে চলেছেন তাঁরা। এক দিনে যেখানে তিন থেকে চার বার মাস্ক পাল্টানোর কথা, সেখানে একই মাস্ক পরে একাধিক দিন রোগী দেখতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। আট থেকে দশ ঘণ্টার মধ্যে ৪০০ ভাইরাস আক্রান্ত রোগীকে দেখছেন কেউ কেউ। উহানের বেশ কয়েকটি হাসপাতালের চিকিৎসকদের শরীরে ইতিমধ্যেই করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা দিয়েছে। জ্বর, সর্দির সঙ্গে শুরু হয়েছে শ্বাসকষ্ট। তবু ছুটি না নিয়ে টানা রোগী দেখে যেতে হচ্ছে তাঁদের। জীবাণুরোধী পোশাক খুলে যাতে শৌচাগারে বারবার না-যেতে হয়, সে জন্য অনেকেই ডায়াপার ব্যবহার করছেন এখন। সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুললে নেমে আসতে পারে শাস্তির খাড়া, তাই নাম না জানিয়ে এক চিকিৎসক বললেন, ‘‘আমাদের সংক্রমণ হয়ে যেতে পারে জেনেও কাজ করতে হচ্ছে। আমরা কাজ করা বন্ধ করে দিলে পুরো স্বাস্থ্য পরিষেবাটাই ভেঙে পড়বে এখানে।’’
পরিস্থিতি যে শোচনীয়, তা স্বীকার করে নিয়েছে প্রশাসনও। উহানের ডেপুটি মেয়র সাংবাদিকদের সম্প্রতি জানিয়েছেন, এই শহরে এখন গড়ে প্রতিদিন ৫৬ হাজার এন৯৫ মাস্ক এবং ৪১ হাজার শরীর ঢাকা পোশাক প্রয়োজন। বাইরে থেকে সাহায্যে এলেও প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা যে হারে বাড়ছে তাতে কোনও ভাবেই কুলিয়ে ওঠা যাচ্ছে না।
সংক্রমণের কারণে চিনের বেশির ভাগ এলাকার মানুষই এখন যাবতীয় কাজ অনলাইনে করছেন। অফিস হোক বা স্কুল-কলেজ, বাড়ি বসে ইন্টারনেটেই কাজ সারছেন তাঁরা। এর মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিম চিনে এক ব্যক্তির জন্মদিনের অনুষ্ঠান হোটেল কর্তৃপক্ষ বাতিল করে দেওয়ায় তিনি গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগানোর চেষ্টা করলেন। ছংকিং এলাকার ওয়াং নামে এই ব্যক্তির বয়স ৫৯। নিজের জন্মদিন উপলক্ষে একটি ব্যাঙ্কোয়েট ভাড়া করেছিলেন তিনি। কিন্তু সংক্রমণের আশঙ্কায় সেই বুকিং বাতিল করে দেন কর্তৃপক্ষ। আর তাতেই ক্ষেপে গিয়ে সারা শরীরে পেট্রল ঢেলে কোমরে বাজি জড়িয়ে নেন ওই ব্যক্তি। তবে আগুন ধরানোর আগের মুহূর্তে তাঁকে আটকানো হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy