বছরের এই সময়ে, বসন্তের শুরুতে, শীতের প্রকোপ একটু কমার সঙ্গে সঙ্গে, শহরের রাস্তায়, পার্কে, নানা মিউজিয়ামে চোখে পড়ার মতো ভিড় থাকে। সপ্তাহান্তে সন্ধে নামতেই মানুষের ঢল নামে রেস্তরাঁয়। কিন্তু এখন দৃশ্যটা সম্পূর্ণ আলাদা। হঠাৎ করেই প্রাণবন্ত এই শহরের বুকে নেমে এসেছে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা। রাস্তাঘাট ফাঁকা। ওষুধের দোকান আর সুপারমার্কেট ছাড়া সমস্ত দোকানপাট বন্ধ। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বেরোচ্ছেন না। ইউরোপের অন্য
দেশগুলির মতোই করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বেলজিয়ামে। বেলজিয়ামের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের গণনা অনুযায়ী, আজ ৬৬৮টি নতুন সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যার মধ্যে ফ্লন্ডার্স অঞ্চলে ৪২৯, ওয়ালোনিয়ায় ১৭৬ এবং ব্রাসেলসে ৫৭ জন রয়েছেন। এই নিয়ে বেলজিয়ামে মোট ৪৯৩৭ জন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত, এর মধ্যে ১৮৫৯ জন হাসপাতালে ভর্তি এবং ৩৮১ জন শ্বাসযন্ত্রের সহায়তায় রয়েছেন। এই পরীক্ষাগুলি কে ইউ লিউভেন রেফারেন্স হাসপাতালে হয়েছে। আগের দিন থেকে নতুন সংক্রমণের সংখ্যা, নতুন মৃত্যু এবং আইসিইউতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা আজ বেড়েছে। তবে নতুন হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা টানা দ্বিতীয় দিন কমছে। সঙ্কটকেন্দ্রের মুখপাত্র জানিয়েছেন আমরা এই জরুরি পরিস্থিতিতে এখনও মহামারির শীর্ষে পৌঁছইনি। আগামী দিনগুলিতে সংক্ৰমিতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি সীমাবদ্ধ করার জন্য, বেলজিয়ামের জাতীয় সুরক্ষা কাউন্সিল ১৪ মার্চ থেকে সারা দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিল। বলা হয়েছিল, দেশের সব স্কুল, কাফে, বার এবং রেস্তরাঁ বন্ধ থাকবে। সমস্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও বাতিল করা হয়েছে। গণপরিবহণ চলছে, তবে যতটা সম্ভব বাড়িতে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞাগুলি প্রয়োগের জন্য পুলিশ রাস্তায় টহল দিচ্ছে।
বিশাল ধাক্কা খেয়েছে বেলজিয়ামের পর্যটন শিল্প। দেশের অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, এখন দেশের ১০ লক্ষ মানুষকে ‘অস্থায়ী বেকার’ বলা যেতে পারে। আমার বিশ্ববিদ্যালয়, ‘লিয়েজ ইউনিভার্সিটি’তেও ক্লাস স্থগিত। ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাগি ডি ব্লক জানান, লকডাউন কত দিন চলবে সেটা লাখ টাকার প্রশ্ন। তবে কমপক্ষে আগামী আট সপ্তাহ এটি অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা তাঁর।
লেখক ইউনিভার্সিটি অব লিয়েজের পোস্ট ডক্টরাল গবেষক