ফাঁকা সুপারমার্কেট।—ছবি এএফপি।
প্রায় মড়ক লাগিয়ে দেওয়া এই অসুখটা আমেরিকার সমাজে এত দিনের লুকনো বৈষম্যটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। দুশ্চিন্তার বিষয়, ওই অসাম্যের ঘটনা ঘটেছে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে। এত দিন এই সব অভিযোগ সাধারণত উঠত ‘তৃতীয় বিশ্বের’ বিরুদ্ধ্বে। এ বার সেই তির ঘুরে গিয়েছে ‘প্রথম বিশ্বের’ দিকে। ‘বিশ্বসেরা’ হিসেবে আমেরিকার গর্ব মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে করোনা।
যখন কোনও দেশে একটা সামাজিক সঙ্কট দেখা দেয়, সে দেশের সরকারের সব চেয়ে বড় কাজ হল, গুজব বা রটনা বন্ধ করা। সেটা না-করতে পারলে গোটা দেশ জুড়ে একটা আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হবেই। আর কে না জানে, এই তিলকে তাল করা আতঙ্ক মানুষকে স্বার্থপর করে তোলে, নষ্ট হয়ে যায় সামাজিক সহবত। আমেরিকায় করোনার জেরে এ বার সেটাই ঘটল। মার্কিন প্রশাসন এত দেরি করে সতর্কতামূলক প্রচার শুরু করল যে, তত দিনে ভাইরাসের চেয়েও অনেক দ্রুত ছড়াতে শুরু করেছে আতঙ্ক। দোকানবাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অনটন দেখা দিয়েছে। বাড়িতে অত্যাবশ্যক পণ্যের আপতকালীন ভাণ্ডার তৈরি করতে মানুষ আড়তদারের মতো বাজার করছে। মুদিখানার দোকানে মারামারি করেছে মার্কিনরা।
সংক্রমণ প্রতিরোধে মার্কিন সরকার তো ‘সামাজিক দূরত্ব’ বজায় রাখার নিদান দিয়েই খালাস। কিন্তু তার প্রয়োগে যে কী কী খামতি রয়ে গেল, সে দিকে কেউ খেয়ালই করল না। স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়ে গেল। যাঁরা সুযোগ পেলেন, ‘বাড়ি থেকে কাজ’ শুরু করে দিলেন। কিন্তু যাঁরা দিনমজুর, যাঁরা ঘণ্টার বিচারে পারিশ্রমিক পান, কাজে না গেলে তাঁরা তো উপার্জন করতে পারবেন না কিছুই! তাঁদের তো কাজে যেতেই হবে, গিয়ে সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে এমন অরক্ষিত জায়াগায় খাটতে হবে, তাঁদের তো আর স্যানিটাইজ়ার বা মুখোশের জন্য অপেক্ষা করলে চলবে না। তাঁদের কথা কিন্তু ‘এগিয়ে থাকা দেশ’ আমেরিকার আলাদা করে ভাবা উচিত ছিল।
করোনা এটাও দেখিয়ে দিল যে, তেমন বিপদ হলে, জনতার আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা মার্কিন প্রশাসনের নেই। প্রথম বিশ্বের জনমত এখন হোয়াটসঅ্যাপের মতো সামাজিক মাধ্যমের দখলে। করোনা বিষয়ক নানা তথ্যের জন্য মার্কিনরা আর সরকারের উপর ভরসা করছে না, তারা গুগল করছে!
জোর আলোচনা চলছে, করোনা অবশ্যই এক দিন নিয়ন্ত্রণে আসবে, কিন্তু তত দিনে মার্কিন অর্থনীতিও ধসে যাবে। যদিও সমাজতাত্ত্বিকদের মতে, তার চেয়েও বড় বিপদ হল, করোনা আমেরিকার সমাজের গোপন অসুখটাকে সর্বসমক্ষে তুলে ধরল। করোনার প্রকোপ কমে গেলেও এই অসুখটা থেকে যাবে না তো?
(লেখক টেনেসি প্রশাসনে স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy