Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
করোনা ত্রাস

রাস্তাঘাট দেখে মনে হচ্ছে, যেন ৩৭০-পরবর্তী কাশ্মীর!

নিরিবিলি শহরটি যে এ ভাবে একেবারে চুপচাপ হয়ে যাবে, ভাবতে পারিনি। 

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

হিমাদ্রি বর্মণ
হাংঝউ শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৫:৩৪
Share: Save:

গত এক বছর চিনের যে শহরটিতে থাকি, তার নাম হাংঝউ। ই-কমার্সের সম্রাট আলিবাবার সদর দফতর এই সুন্দর ও শান্ত শহরে। কিন্তু নিরিবিলি শহরটি যে এ ভাবে একেবারে চুপচাপ হয়ে যাবে, ভাবতে পারিনি।

উহান শহর থেকে সাড়ে সাতশো কিলোমিটার দূরে হলেও নতুন করোনাভাইরাসের ছোঁয়া এখানেও লেগেছে। প্রবাসী ভারতীয়দের কাছে সংবাদমাধ্যম বলতে এখানে মূলত সোশ্যাল মেসেজিং অ্যাপ ‘উইচ্যাট’। সেখান থেকেই জানা যাচ্ছে, প্রতি দিন ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা কত, কত জন মৃত, কত জন রোগমুক্ত হল— এই সব। যেমন আমার পাওয়া সূত্র আমার শহরেই আক্রান্ত ১৫১। আর এই সংখ্যাগুলো দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রায় গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে সবাইকে। অনেকটা কাশ্মীরের মতো— শুধু সেনা নেই আর মোবাইল-ইন্টারনেট চালু রয়েছে। কিন্তু ক্যামেরায় ছবি তুললে রাস্তাঘাটের চেহারাটা প্রায় একই রকম দাঁড়াবে।

২৫ জানুয়ারি চিনা নববর্ষ। সেই উপলক্ষে প্রায় সমস্ত দফতর ও স্কুল-কলেজে এক সপ্তাহ আগে থেকে ছুটি পড়ে যায়। আমাদের পুজোর ছুটির মতোই বেশ লম্বা এই ছুটি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েও ১৮ জানুয়ারি থেকে ছুটি পড়ে গিয়েছিল। ক্যাম্পাসে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের জন্য শুধু একটি ক্যান্টিন খুলে রাখা হয়েছিল। নববর্ষের পরে সব কিছু খুলে যাওয়ার কথা, কিন্তু নিজেদের কোয়ারেন্টাইন করে রাখার জন্য সকলকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় দূতাবাস প্রবাসীদের নাম, ইমেল ও ফোন নম্বর নিয়ে রেখেছে। জানিয়েছে, আমাদের উপরে নজর রাখা হবে। আমার বিভাগও আমাদের শারীরিক অবস্থা গত মাসের ভ্রমণ বৃত্তান্ত রেকর্ডে রেখেছে। রাস্তায় বেশ কয়েকটি জায়গায় থার্মাল চেকিং পয়েন্ট বসানো হয়েছে। গাড়ি থামিয়ে চালক ও আরোহীদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করছেন পুলিশকর্মীরা।

উহান থেকে দূরে থাকলেও আমাদের এই শহরে থাকা প্রবাসীদের উদ্বেগ একটু অন্য রকম। যে হেতু আমরা সংক্রমণের কেন্দ্র থেকে একটু দূরে, আমাদের পক্ষে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা অতটা সহজ হচ্ছে না। অনেকেই ভয় পাচ্ছেন যে, শেষে বিমানবন্দর থেকেই না সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। তা ছাড়া, অনেকে আর একটা দিকও ভেবে দেখছেন। যাঁরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁরা চিনেই সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। অনেক ভারতীয় তাই ভাবছেন যে, ভারতের থেকে চিনে ঠিক মতো চিকিৎসা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যে হেতু রোগের উপসর্গ সাধারণ সর্দি-কাশির মতো এবং ১৪ দিনের আগে নতুন করোনাভাইরাসের প্রভাব আছে কিনা সুনিশ্চিত করা যায় না, তাই দেশে ফিরে যদি সংক্রমণ ধরা পড়ে, তখন ঠিক মতো চিকিৎসা পাওয়া মুশকিল হতে পারে। উহানের বাইরে যাঁরা এখন ঘরে ফিরতে চান, তাঁদের জন্য দূতাবাস থেকে নির্দিষ্ট কোনও নির্দেশও নেই।

তাই অনেকেই এখানেই রয়ে যাচ্ছেন, গৃহবন্দি জীবন মেনে নিয়েই।

অন্য বিষয়গুলি:

Corona virus Home Arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy