‘অ্যাটলাস ফাইভ’ রকেটে চেপে যাত্রা করল নাসার নয়া মঙ্গলযান। বৃহস্পতিবার ফ্লরিডায়। এপি
স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৫০। ফ্লরিডার কেপ ক্যানাভেরাল উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে ‘অ্যাটলাস ফাইভ’ রকেটে চেপে লালগ্রহের উদ্দেশে পাড়ি দিল নাসার মঙ্গলযান। ‘মার্স ২০২০’ অভিযানে রকেটেযাত্রী একটি রোভার ও একটি খুদে হেলিকপ্টার। এই প্রথম ভিন্গ্রহের আকাশে উড়বে বিদ্যুৎচালিত কপ্টার। নাম রাখা হয়েছে ‘ইনজেনুয়িটি’। আর নাসার ‘কিউরিয়োসিটি’ রোভারের উত্তরসূরির নাম ‘পার্সিভিয়ারেন্স’।
তবে যাত্রা-শুরু খুব সুগম হয়নি। উৎক্ষেপণের ঘণ্টা দুয়েক বাদেই অ্যাটলাসের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল নাসার। উৎকণ্ঠা দেখা দেয় কন্ট্রোল রুমে। কিন্তু কিছু ক্ষণ পরেই সিগন্যাল ফিরে পান বিজ্ঞানীরা। তাঁদের দাবি, ‘‘চিন্তার কিছু নেই। কিউরিয়োসিটির মঙ্গল-যাত্রার সময়েও এ রকম হয়েছিল।’’ প্রথমে পৃথিবীর কক্ষপথে পৌঁছবে মঙ্গলযান। তার পরে আধ ঘণ্টা জিরিয়ে চালু হবে দ্বিতীয় ইঞ্জিন। ভিন্গ্রহে পাড়ি দেবে দুই রকেটযাত্রী।
করোনা-সংক্রমণে বিধ্বস্ত গোটা বিশ্ব। দেড় লাখেরও বেশি মৃত্যু হয়েছে আমেরিকায়। সেই কথা মনে রেখেই মার্কিন যানের নাম রাখা হয়েছে পার্সিভিয়ারেন্স। যার অর্থ, ‘কঠিন সময়েও একনিষ্ঠ ভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়া’। নাম রেখেছে ভার্জিনিয়ার এক ১৩ বছর বয়সি খুদে, অ্যালেক্স ম্যাথু। কী নাম রাখা হবে, তা নিয়ে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল নাসা। অ্যালেক্সের দেওয়া নামটি বেছে নেওয়া হয়। আজ পার্সিভিয়ারেন্সকে বিদায় জানাতে কেপ ক্যানাভেরালে উপস্থিত ছিল অ্যালেক্সও।
মঙ্গলের ‘রুটে’ এখন ভাল ভিড়। গত সপ্তাহে প্রথমে রওনা হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মঙ্গলযান ‘আমাল’। তার পরে পাড়ি দেয় চিনের ‘তিয়ানওয়েন-১’। আর আজ রওনা দিল মার্কিন যান। সাত মাসের দীর্ঘ সফরের পরে তিনটিই পৌঁছবে আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে। সব ঠিক থাকলে ১৮ ফেব্রুয়ারি লালগ্রহে পা ফেলবে নাসার রোভার পার্সিভিয়ারেন্স। ৮০০ কোটি ডলার ব্যয়ে এই অভিযানের বিশেষত্ব অন্য। পার্সিভিয়ারেন্স শুধু লালগ্রহের মাটিতে নামবেই না, গবেষণার শেষে মঙ্গলের মাটির নমুনা নিয়ে পৃথিবীতে ফিরেও আসবে।
নাসা জানিয়েছে, এই মঙ্গল অভিযানের অন্যতম উদ্দেশ্য, প্রাণের সন্ধান। তবে আসল লক্ষ্য হল ২০৩০-এর দশকে মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর প্রস্তুতি সেরে ফেলা। মঙ্গলে পৌঁছে ঠিক কী কী প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হবে নভশ্চরদের, তার অনেকটাই বাতলে দেবে পার্সিভিয়ারেন্স ও ইনজেনুয়িটি। ১.৮ কেজির মিনি হেলিকপ্টার ‘ইনজেনুয়িটি’ মঙ্গলের আকাশপথে অভিযান চালাবে। মাটিতে তদন্ত করবে পার্সিভিয়ারেন্স।
এ পর্যন্ত যত রোভার পাড়ি দিয়েছে ভিন্গ্রহে, চেহারায় সব চেয়ে বড়সড় পার্সিভিয়ারেন্স। সেই সঙ্গে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি। আকারে গাড়ির মাপের রোভারটিতে রয়েছে ২৫টি ক্যামেরা, এক জোড়া মাইক্রোফোন, ড্রিল ও লেজ়ার। রোভারের মূল গন্তব্য, মঙ্গলের রহস্যময় ‘জিজ়িরো ক্রেটার’। বিজ্ঞানীদের অনুমান, ৩০০ কোটি বছর আগে এখানে কোনও হ্রদ ছিল। প্লুটোনিয়াম শক্তিচালিত ছ’চাকার রোভারটি এই ক্রেটারের মাটি খুঁড়ে নমুনা সংগ্রহ করবে। ডজনখানেক টাইটেনিয়াম টিউবে ১৫ গ্রাম মাটির নমুনা নিয়ে ২০৩১ সালে ঘরে ফিরবে সে। অভিযানের সঙ্গে যুক্ত নাসা-কর্তা জিম ব্রাইডেনস্টাইন বলেন, ‘‘পার্সিভিয়ারেন্স নাম রাখার কারণ রয়েছে। মঙ্গল-অভিযান খুবই কঠিন। আর এ বারে সেটা আরও কঠিন হয়েছে, কারণ পৃথিবী এখন অতিমারি পরিস্থিতিতে পর্যুদস্ত।’’ এ দিন কেপ ক্যানাভেরালের উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে কয়েকশো বিজ্ঞানী উপস্থিত থাকতে পারেননি। যাঁরা ছিলেন, দূরত্ব-বিধি মেনে চলেছেন। মাস্ক ছাড়া দেখা যায়নি কাউকে।
আরও পড়ুন: মালগাড়ি বেলাইন হতেই আগুন জ্বলল রেলব্রিজে, দেখুন ভিডিয়ো
মঙ্গল অভিযান নিয়ে বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন, ‘মহাকাশের বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’। যত বার রোভার পাঠানো হয়েছে, অর্ধেক ক্ষেত্রেই মাটিতে নামতে গিয়ে ভেঙে পড়েছে যান। ভিন্গ্রহে অবতরণের ধাপটি সবচেয়ে কঠিন। এ পর্যন্ত আমেরিকাই শুধু সফল হয়েছে। এ বারে সফল হলে, নবম মার্কিন যান নামবে লাল-মাটিতে। তবে তার আগে পার করতে হবে ‘সাত মিনিটের আতঙ্ক’। ঘণ্টায় ১৯,৩০০ কিলোমিটার গতিবেগ সাত মিনিটে কমে শূন্য হবে। সাত মাস পরে জিরোবে যান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy