ফের বিপাকে জাকির নায়েক। —ফাইল চিত্র।
বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের জেরে এ বার মালয়েশিয়া সরকারের রোষে পড়লেন বিতর্কিত ইসলামি ধর্মগুরু জাকির নায়েক। সম্প্রতি একটি সভায় সেখানে বসবাসকারী সংখ্যালঘু হিন্দু এবং চিনা বংশোদ্ভূত নাগরিকদের উদ্দেশে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করেন তিনি। তা নিয়ে তাঁকে এক দফা জেরাও করে পুলিশ। তার পরই জাকির নায়েকের বক্তৃতার উপর নিষেধাজ্ঞা বসায় মালয়েশীয় সরকার। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই তাঁর বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সে দেশের প্রশাসন।
সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মালয়েশিয়ার জন সংযোগ বিভাগের প্রধান দাতুক আসমাবতী আহমেদ বলেন, ‘‘হ্যাঁ, দেশের পুলিশবাহিনীকেও এই মর্মে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই এমন পদক্ষেপ করেছি আমরা, যাতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকে।’’
গত ৩ অগস্ট একটি সভায় বিতর্কিত মন্তব্য করে বসেন জাকির নায়েক। সে দেশে বসবাসকারী সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিশানা করে বলেন, ‘‘ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিমদের যা অধিকার, মালয়েশিয়ায় তার চেয়ে শতগুণ বেশি অধিকার ভোগ করেন হিন্দুরা। তা সত্ত্বেও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর বদলে নরেন্দ্র মোদীকেই সমর্থন করেন তাঁরা।’’
আরও পড়ুন: ডেবিট কার্ড তুলে দিচ্ছে এসবিআই! চেয়ারম্যানের ঘোষণায় তোলপাড়, নগদ মিলবে কোথায়? দুশ্চিন্তায় গ্রাহক
মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক মহলে জাকির নায়েককে ভারতে প্রত্যর্পণের দাবি উঠতে শুরু করেছে। এ নিয়ে মন্তব্য করার সময় সে দেশে বসবাসকারী চিনা বংশোদ্ভূতদেরও নিশানা করেন জাকির। তিনি বলেন, ‘‘মালয়েশিয়ার অনেক মানুষ আমাকে অতিথি ভাবেন। সে ক্ষেত্রে চিনা বংশোদ্ভূতরাও তো অতিথি! আমার চেয়েও ঢের আগে এসেছেন। তাই নতুন অতিথিকে ফেরত পাঠানোর আগে, পুরনো অতিথিদের চলে যেতে বলুন।’’
তাঁর এই মন্তব্য নিয়ে তুমুল সমালোচনা শুরু হলে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হন জাকির নায়েক। কিন্তু কোনও খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে এ কথা তিনি বলেননি বলে দাবি করেন। নিজের বিবৃতিতে জাকির বলেন, ‘‘কোনও ব্যক্তি বা সম্প্রদায়কে আঘাত করতে চাইনি আমি। এই ধরনের আচরণ ইসলামি নীতির বিরোধী। আমার মন্তব্য ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তবে এই ভুল বোঝাবুঝির জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আমি।’’
তবে ক্ষমা চেয়েই পার পেয়ে যাননি জাকির। গত রবিবার তাঁর মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মহাথির বিন মহম্মদ। তিনি বলেন, ‘‘সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দিতে চাইছেন জাকির। পুলিশকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। কারণ এতে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।’’ তাঁর নির্দেশ পেয়েই সোমবার জাকির নায়েককে প্রায় ১০ ঘণ্টা ধরে জেরা করে মালয়েশীয় পুলিশ। আর তার পরেই তাঁর বক্তৃতা করার উপর নিষেধাজ্ঞা চাপে।
আরও পড়ুন: সাড়ে তিনশো কোটির ব্যাঙ্ক ঋণ দুর্নীতির অভিযোগ, গ্রেফতার কমল নাথের ভাইপো
তবে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে এর আগেও একাধিক বার ঝামেলায় জড়িয়েছেন জাকির নায়েক। ২০০১ সালের ৯/১১ হামলাকে আমেরিকার ষড়যন্ত্র বলেও বিতর্ক বাধিয়েছিলেন তিনি। তবে ২০১৬-র জুলাই মাসে ঢাকার গুলশন হামলার পর প্রথম খবরের শিরোনামে উঠে আসেন তিনি। জানা যায়, জাকির নায়েকের ভিডিয়ো দেখেই অনুপ্রাণিত হয়েছিল হামলাকারীরা। এর পরই জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে এনআইএ। তাতে আর্থিক তছরুপ, সন্ত্রাসী কাজকর্ম এবং নাশকতায় ইন্ধন জোগানোর অভিযোগ উঠে আসে। কিন্তু পুলিশ এবং তদন্তকারীরা নাগাল পাওয়ার আগেই দেশ ছেড়ে চলে যান জাকির। সেই থেকে মালয়েশিয়াতেই রয়েছেন তিনি। জাকিরকে ফিরে পেতে সেই থেকে একাধিক বার মালয়েশিয়া সরকাকে আবেদন জানিয়েছে ভারত সরকার। কিন্তু লাভ হয়নি। তবে জাতীয় নিরাপত্তা ক্ষুণ্ণ হলে তাঁকে প্রত্যর্পণ করা হতে পারে বলে গত সপ্তাহেই জানিয়েছিলেন মহাথির বিন মহম্মদ। তাই জাকিরের বক্তৃতা নিষিদ্ধ হওয়ার পর পরিস্থিতি বদলাতে পারে বলে আশাবাদী কূটনীতিকরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy