প্রতীকী ছবি।
কাবুল বিমানবন্দরে হামলার পরে সামনে চলে এসেছে আইএস-খোরাসান জঙ্গি গোষ্ঠীর নাম। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি তালিবানের সঙ্গে সমঝোতার পরে আফগানিস্তানে আমেরিকার প্রধান শত্রু হয়ে উঠছে আইএসের ওই গোষ্ঠী? আবার ওই গোষ্ঠীর সঙ্গে তালিবানের সম্পর্ক নিয়েও দেখা দিয়েছে ধন্দ। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দাবি, ওই গোষ্ঠীর সঙ্গে তালিবানের কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু আফগানিস্তানের স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট আমরুল্লা সালেহর মতে, আইএস-খোরাসানের শিকড় আছে তালিবানেই।
আমেরিকান গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, ২০১৪ সালে ইরাক-সিরিয়ায় উত্থান হয় ইসলামিক স্টেট তথা আইএসের। ২০১৫-এ তৈরি হয় আইএসের খোরাসান শাখা। ঐতিহাসিক ভাবে খোরাসান এলাকার মধ্যে রয়েছে বর্তমান পাকিস্তান, ইরান, আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার একটি অংশ। ইরাক-সিরিয়ার আইএস গোষ্ঠীর মতোই খোরাসানে ‘খিলাফতি’ শাসন প্রতিষ্ঠাই আইএস-খোরাসানের উদ্দেশ্য। কুনার, নানগরহর ও নুরিস্তানের মতো আফগানিস্তানের কয়েকটি প্রদেশে ঘাঁটি তৈরি করে তারা। পরে আবু বকর আল বাগদাদির নেতৃত্বাধীন মূল আইএস খোরাসান গোষ্ঠীকে তাদের শাখা হিসেবে স্বীকার করে। গোড়ায় খোরাসান গোষ্ঠীর নেতা ছিল হাফিজ় সইদ খান। পরে আমেরিকার হামলায় সে মারা যায়।
প্রথম থেকেই তালিবানের সঙ্গে বিরোধিতায় জড়িয়ে পড়ে খোরাসান গোষ্ঠী। ২০১৫ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত বারবার ওই দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষের সাক্ষী থেকেছে আফগানিস্তান। বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানি তালিবানের একাংশই ওই গোষ্ঠী তৈরি করেছিল। পরে তালিবান নেতৃত্বের সঙ্গে আমেরিকার আলোচনা শুরু হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয় আফগান তালিবানের একাংশ। তারাও খোরাসান গোষ্ঠীতে যোগ দেয়। উজ়বেকিস্তানের ইসলামি আন্দোলন, ইরানের সুন্নি প্রভাবিত প্রদেশের কিছু মৌলবাদী ও তুর্কিস্তান ইসলামিক পার্টির জঙ্গিরাও এই গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছে বলে দাবি আমেরিকান গোয়েন্দাদের। তুর্কিস্তান ইসলামিক পার্টির জঙ্গিদের মধ্যে উত্তর-পূর্ব চিনের উইঘুর জনজাতির সদস্যেরা রয়েছে বলেও মত গোয়েন্দাদের। পরে তালিবানের সঙ্গে সংঘর্ষ ও আমেরিকান অভিযানের ফলে আফগানিস্তানে জমি হারায় খোরাসান গোষ্ঠী। কিন্তু তাদের প্রায় পাঁচশো জঙ্গি এখনও আফগানিস্তানে সক্রিয় বলে মত রাষ্ট্রপুঞ্জের। সেই জঙ্গিরা যে বিধ্বংসী হামলা চালাতে সক্ষম তার প্রমাণ কাবুলের হামলাই।
আজ কাবুলের হামলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতির পাশাপাশিই আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়ে দিয়েছেন, তালিবানের সঙ্গে আইএস-খোরাসান গোষ্ঠীর যোগ পাওয়া যায়নি। কিন্তু আফগানিস্তানের স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট ও তালিবান-বিরোধী জোটের নেতা আমরুল্লা সালেহের মতে, ‘‘আমাদের হাতে থাকা সব প্রমাণ থেকেই বোঝা যাচ্ছে আইএস-খোরাসানের সেলগুলির শিকড় রয়েছে তালিবান ও হক্কানি নেটওয়ার্কে। যে সেলগুলি কাবুলে সক্রিয় তাদের ক্ষেত্রে এ কথা বিশেষ ভাবে সত্যি।’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘তালিবানের আইএসের সঙ্গে যোগ অস্বীকার করাটা পাকিস্তানের কোয়েটা শুরার সঙ্গে যোগ অস্বীকার করার মতো ব্যাপার। তালিবান তাদের প্রভুর কাছ থেকে এই কায়দাটা ভালই রপ্ত করেছে।’’ সালেহর ইঙ্গিত পাকিস্তানের কোয়েটায় থাকা তালিবান নেতৃত্বের দিকে। এর পিছনে পাকিস্তানি সেনা ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের মদত আছে বলে অভিযোগ নানা শিবিরের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy