Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Russia

কোভিড-প্রতিষেধক নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে মস্কোর নয়া ‘ঠান্ডা যুদ্ধ’

১৯৪৭ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত চলেছিল আমেরিকা ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূ-রাজনৈতিক চাপানউতোর।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২০ ০৭:৩৯
Share: Save:

কে প্রথম আনবে কোভিড-১৯-এর প্রতিষেধক? কূটনীতিকেরা বলছেন, এই নিয়েই এখন বিশ্বের দুই মহাশক্তিধর দেশে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় ‘ঠান্ডা যুদ্ধ’।

দেশে লক্ষাধিক মৃত্যু। হাজার-হাজার লোক কর্মহীন। ভোটের মুখে মরিয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত মাসে ঘোষণা করে বসেন— গবেষণা প্রায় শেষের পথে। নভেম্বরের নির্বাচনের আগেই ভ্যাকসিন তৈরি করে ফেলবে আমেরিকা। কিন্তু পরের দিনই ট্রাম্পের উচ্চাশায় জল ঢেলে দেন আমেরিকার বিজ্ঞানীরা। জানিয়ে দেন, এ ভাবে তাড়াহুড়ো করে আর যা-ই হোক, ভ্যাকসিন তৈরি সম্ভব নয়!

কূটনীতিকেরা বলছেন, এর পরেই ‘বিজয়ীর মুকুট’ ছিনিয়ে নেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ট্রাম্পের সেই ঘোষণার সপ্তাহ খানেক পরে রাশিয়া দাবি করেছিল, ফের ‘স্পুটনিক মুহূর্ত’ উপস্থিত! তারাই আনতে চলেছে প্রথম ভ্যাকসিন। রুশ কর্তারা বলেছিলেন, ‘‘স্পুটনিকের সময়ে আমেরিকাকে যে ভাবে চমকে দিয়েছিল রাশিয়া, এ বারেও তার পুনরাবৃত্তি দেখবে ওয়াশিংটন!’’

কথার অন্যথা করেনি মস্কো। গত কাল তারা ঘোষণা করে, ভ্যাকসিন তৈরি। তবে তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এখনও শুরু হয়নি। অর্থাৎ কি না, নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পূর্ণ শেষ হওয়ার আগেই ভ্যাকসিন প্রয়োগে ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছে রাশিয়া! গবেষণা শেষের আগেই এ ভাবে সম্ভাব্য ভ্যাকসিনকে ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া, কূটনীতিকদের একাংশের চোখে নয়া ‘ঠান্ডা যুদ্ধ’।

১৯৪৭ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত চলেছিল আমেরিকা ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূ-রাজনৈতিক চাপানউতোর। ঠান্ডা যুদ্ধ বলা হয়, কারণ প্রকাশ্যে হানাহানি হয়নি। এ বারেও পরিস্থিতি অনেকটা এক রকম। কে আগে প্রতিষেধক আনবে, তা নিয়ে এক অদৃশ্য লড়াই চলছে। এই মুহূর্তে রাশিয়া বিশ্বের সংক্রমণ-তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে। ন’লাখের কাছাকাছি আক্রান্ত। কিন্তু মৃতের তালিকায় প্রথম দশেও নেই তারা। দীর্ঘদিন ধরেই একাংশের দাবি, সত্যিটা গোপন করে যাচ্ছে রাশিয়া। এক সময়ে তারা ‘হাতেগোনা আক্রান্ত’ বলে চেপে রেখেছিল বিষয়টা। উল্টে করোনা-মোকাবিলায় সাহায্য হিসেবে আমেরিকাকে পিপিই পাঠিয়েছিল রাশিয়া। ওয়াশিংটন এ নিয়ে এত দিন মুখ না-খুললেও, জানিয়েছিল রাশিয়ার ভ্যাকসিন তারা ব্যবহার করবে না। সম্প্রতি ব্রিটেনও একই কথা জানায়। মশকরা করে তাদের মন্তব্য, ‘‘এই ভ্যাকসিন অনেকটা রাশিয়ার নির্বাচনী ফলের মতো হবে।’’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) শুরু থেকে বলে আসছে, ভ্যাকসিন তৈরি নিয়ে তাড়াহুড়ো করা বিপজ্জনক হতে পারে। আজ ফের রুশ স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে হু। সংস্থার মুখপাত্র তারিক জাসারেভিক বলেন, ‘‘রুশ কর্তাদের সঙ্গে প্রতিষেধকটির ‘প্রিকোয়ালিফিকেশন’ নিয়ে আলোচনা চলছে। কোনও ভ্যাকসিনকে পাশ করানোর আগে বারবার তার কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্য খতিয়ে দেখা হয়। তার পরে পাশ-ফেল।’’

তবে রাশিয়া পাশ করুক বা ফেল, মস্কোর ঘোষণায় ক্ষুব্ধ গোটা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা। ব্রিটেনের ওয়ারিক বিজ়নেস স্কুলের ড্রাগ-স্পেশ্যালিস্ট আইফার আলির কথায়, ‘‘এ ভাবে সুপারফাস্ট ছাড়পত্র দেওয়া, এক রকম বিপদ ডেকে আনা।’’ ‘কিওরভ্যাক’ নামে একটি ওষুধপ্রস্তুতকারী সংস্থার সঙ্গে ভ্যাকসিন তৈরিতে যুক্ত রয়েছেন জার্মান বিশেষজ্ঞ পিটার ক্রেমসনার। এক কথায় বলেন, ‘‘রাশিয়ার পদক্ষেপ বেপরোয়া।’’ ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের জেনেটিক্স বিভাগের বিশেষজ্ঞ ফ্রাঁসোয়া বালু বলেন, ‘‘ঠিকমতো পরীক্ষা না-করে গণ-ভ্যাকসিনেশন করা অনৈতিক।’’ বালুর কথাই প্রতিধ্বনিত হয়েছে ইম্পিরিয়াল কলেজ লন্ডনের ইমিউনোলজির অধ্যাপক ড্যানি অল্টম্যানের মুখে— এই লড়াই ঠান্ডা যুদ্ধের ‘সমান্তরাল ক্ষতি’ ডেকে আনবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Russia USA Covid Vaccine Sputnik V
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy