এখনও জ্বলছে সীতাকাণ্ডের বিএম কন্টেনার ডিপোর আগুন। ছবি— পিটিআই।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কন্টেনার ডিপোর আগুন রবিবার বিকেল পর্যন্তও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আগুনের মূল উৎস পর্যন্তই পৌঁছতে পারেনি বাংলাদেশের ফায়ার সার্ভিস ও সেনা। উদ্ধার হয়ে চলেছে ঝলসে যাওয়া একটার পর একটা মৃতদেহ। শনিবার রাতে যে বিভীষিকার শুরু, রবিবার দুপুর পেরোলেও তার অন্ত দেখা যাচ্ছে না। চারদিকে কেবল স্বজন হারানোর হাহাকার।
শনিবার রাতে বন্দর লাগোয়া বিএম কন্টেনারের ডিপোয় আচমকা আগুন লেগে যায়। সেই আগুন ছড়িয়ে পড়তে থাকে আশেপাশে থাকা কন্টেনারে। অগ্নি নির্বাপণ বিশেষজ্ঞদের অনুমান, আগুন কোনও ক্রমে এসে পড়েছিল হাইড্রোজেন পারক্সাইড বোঝাই একটি কন্টেনারে। মুহূর্তে ভয়াবহ রূপ নেয় পরিস্থিতি। মুহুর্মুহু বিস্ফোরণে কেঁপে উঠতে থাকে এলাকা। ডিপোয় ২৪ ঘণ্টাই কন্টেনার ওঠানো-নামানোর কাজ চলে। ফলে শনিবার রাতেও কর্মচঞ্চল ছিল বঙ্গোপসাগরের তীরে বন্দর সংলগ্ন ওই ডিপো। ওই সময় তোলা বিভিন্ন ভিডিয়ো থেকে স্পষ্ট, বিস্ফোরণের অভিঘাত এতই প্রবল ছিল যে, কিছু করে ওঠার সুযোগটুকু পাননি কর্মীরা। আগুনের গ্রাসে ঝলসে যেতে থাকেন একের পর এক কর্মী, আধিকারিক।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, রবিবার বিকেল পর্যন্ত ঝলসে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৪৯ জনের। আহত পাঁচশোর আশপাশে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই মনে করছে সেনা ও ফায়ার সার্ভিস।
শনিবার গভীর রাতে খবর সংগ্রহ করতে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে গিয়েছিলেন স্থানীয় সাংবাদিক জাওয়াদ হোসাইন। তিনি আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘রাতেই মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ওয়ার্ড ভরে উঠেছিল ডিপোয় অগ্নিদগ্ধ মানুষের ভিড়ে। কারও শরীর আংশিক পোড়া। আবার কেউ চিৎকার করছেন তারস্বরে। চোখের সামনেই বেশ কয়েকটি মৃতদেহ শোয়ানো দেখেছি। অ্যাম্বুল্যান্সে একের পর এক আহতকে আনার কাজ চলছিল। কারও দিকে তাকানো যাচ্ছিল না!’’
অন্য দিকে অকুস্থলে শুরু থেকেই আগুন নেভানোর কাজ করছিলেন রাতের ডিউটিতে থাকা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। কিন্তু আগুনের দাপট এমনই ছিল যে, মূল অগ্নিকাণ্ডের জায়গার ধারেকাছেও পৌঁছতে পারছিলেন না তাঁরা। রবিবার বিকেলেও সেই পরিস্থিতির খুব একটা বদল হয়নি। জাওয়াদ বলেন, ‘‘শেষ যা খবর পেয়েছি, এখনও দুটি কন্টেনার জ্বলছে। মাঝে মাঝে বিস্ফোরণের আওয়াজও পাওয়া যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা। জল ছিটিয়ে আগুন বাগে আনার চেষ্টা করছে সেনা ও বায়ুসেনা। কখন আগুন সম্পূর্ণে নিয়ন্ত্রণে আসবে, আধিকারিকদের কাছে তা এখনও স্পষ্ট নয়।’’
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, আগুনের দাপট এমনই যে তার প্রভাব ছড়িয়েছে আড়াই বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে। এই এলাকার মধ্যে থাকা সমস্ত বাড়ি, মসজিদের জানলার কাচ ভেঙে চুরমার। নষ্ট হয়ে গিয়েছে অনেক টিভি, ফ্রিজও। বাংলাদেশের দৈনিক সংবাদমাধ্যম প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঝাঁঝালো কালো ধোঁয়া এবং তাপে আশেপাশের অন্তত তিনটি গ্রামের বাসিন্দারা সমস্যায় পড়েছেন। শিশু ও বয়স্কদের সমস্যা হচ্ছে বেশি। মুখে মাস্ক পরে থাকতেও দেখা গিয়েছে বাসিন্দাদের। সংবাদমাধ্যমটি কথা বলেছিল কেশবপুর গ্রামের বাসিন্দা লাকি আকাতারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘কন্টেনার ডিপোতে বিস্ফোরণের পর থেকে কালো ধোঁয়া আর গন্ধে টিকতে পারছিলাম না। আতঙ্কে শিশুরা কাঁদছে। বাড়ির বয়স্কদেরও খুব কষ্ট হচ্ছে।’’
চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান ডিপো পরিদর্শন সেরে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ডিপোতে মোট ১২০০ কন্টেনার ছিল। তার মধ্যে হাইড্রোজেন পারক্সাইড ভর্তি কন্টেনার ছিল ২৬টি। ডিপোর টিনশেডেও প্লাস্টিকের জারে এই রাসায়নিক ছিল। আগুন লাগার পর কন্টেনারে থাকা রাসায়নিক ভর্তি জার ফেটে যায়। এতে হাইডোজেন পারক্সাইড কন্টেনারের সংস্পর্শে আসে। এর ফলে কন্টেনারের তাপমাত্রা বেড়ে বিস্ফোরণ হয়। তাতে ইস্পাতের কন্টেনার ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে স্প্লিন্টারের মতো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
বঙ্গোপসাগর থেকে ডিপোর দূরত্ব মেরেকেটে এক কিলোমিটার। অগ্নিকাণ্ডের পর বিষাক্ত রাসায়নিক যাতে সমুদ্রে মিশতে না পারে, সে জন্য সংযোগকারী খাল ও নালা বন্ধ করে দিয়েছে সেনাবাহিনী।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy