—প্রতীকী ছবি
চার দিন ধরে জোরদার চেষ্টা চালিয়েও নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি (এনসিপি)-র দুই বিরোধী গোষ্ঠীকে মেলাতে পারলেন না চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের পাঠানো প্রতিনিধিরা। খালি হাতেই আজ সকালে কাঠমান্ডু থেকে দেশে ফেরার বিমান ধরতে হল তাঁদের।
চিনা প্রতিনিধিদের একাধিক প্রস্তাবের সূত্রেই হোক, কিংবা তাঁদের চাপে, প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির বিরোধী গোষ্ঠী গত কাল সুর নরম করেছিল খানিকটা। এনসিপি-র চেয়ারম্যান মাধবকুমার নেপাল এমনও বলেন যে, “ওলি তাঁর ভুল স্বীকার করলেই আমরা সব কিছু ভুলে যাব।” কিন্তু ওলি চিনা প্রতিনিধিদের প্রস্তাব সরাসরি খারিজ করে দেন। ফলে চিনা প্রতিনিধিদের বিফল মনোরথ হয়েই ফিরতে হল এই দফায়।
দলের ভিতর থেকেই অনাস্থা প্রস্তাব আসতে পারে আঁচ করে ওলি গত ২০ ডিসেম্বর ২৭৫ আসনের পার্লামেন্ট তথা প্রতিনিধিসভা ভেঙে দিয়ে অকাল নির্বাচন ঘোষণা করেছেন। এতেই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল ওরফে প্রচণ্ড ও মাধব নেপালের অনুগামীরা পথে নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন নেপালে। বিকল্প জোট গরিষ্ঠতা দেখাতে পারলে পার্লামেন্ট ভাঙার বিধান নেই নেপালের সংবিধানে। এই যুক্তিতে ওলির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে এক ডজ়নেরও বেশি মামলা চলছে। কিন্তু এক দিকে যেমন এনসিপি-র দুই গোষ্ঠীর সমঝোতা হয়নি, তেমনই ওলি-বিরোধী অন্য বিরোধী দলগুলি চিনা প্রতিনিধিদের উপরোধে প্রচণ্ড-মাধব গোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়ে বিকল্প সরকার গড়তে রাজি হয়নি। ফলে গরিষ্ঠ কোনও জোটের সম্ভাবনা তৈরি করতে পারেননি চিনফিংয়ের প্রতিনিধিরা।
আরও পড়ুন: নতুন স্ট্রেনের মধ্যেই অক্সফোর্ডের টিকা ব্যবহারে অনুমতি দিল ব্রিটেন
আরও পড়ুন: অপুষ্টিতে মৃত্যুই কি ভবিষ্যৎ শামিমদের
প্রচণ্ডর কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (মাওয়িস্ট সেন্টার) এবং ওলির কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (ইউনিফায়েড মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট) মিশে এনসিপি তৈরি হয়েছিল ২০১৮ সালে। চিনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য কুয়ো ইয়েচোউ-এর বিশেষ ভূমিকা ছিল তাতে। দলটি আবার ভেঙে যেতে দেখে চিনফিং তাঁর নেতৃত্বেই চার সদস্যের দলকে কাঠমান্ডু পাঠান বিরোধ মিটিয়ে নেপালে চিনের প্রভাব অটুট রাখতে। ইয়েচোউ-রা দুই গোষ্ঠীর সামনে মূলত দু’টি সমাধান সূত্র পেশ করেন।
এক, কমিউনিস্ট পার্টির দুই গোষ্ঠী এক হবে ও সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে ভেঙে দেওয়া পার্লামেন্ট পুনর্বহাল হবে। ওলি রাজি না-থাকলে বিকল্প কাউকে প্রধানমন্ত্রী বাছবে একজোট হওয়া দল। দরকারে বাবুরাম ভট্টরাইয়ের জনতা সমাজবাদী পার্টি, এমনকি বাহাদুর দেউবার নেপালি কংগ্রেসের মতো অন্য বিরোধী দলের সমর্থন নিয়ে হলেও কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বেই নতুন সরকার হবে। বাবুরাম ও বাহাদুরদের দল এতে সাড়া দেয়নি।
ওলি টিভিতে হাজির হয়ে জানিয়ে দেন, প্রচণ্ড-মাধবরা তাঁকে হটাতে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে চলেছেন বুঝেই আগেভাগে পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়েছেন। পার্লামেন্ট পুনর্বহাল করে প্রচণ্ড-মাধবরা যদি তাঁর সরকারকে ক্ষমতায় রাখেন, তাতেও অদূর ভবিষ্যতে যে তাঁরা অনাস্থা প্রস্তাব এনে তাঁকে উৎখাত করবেন না, এমন নিশ্চয়তা নেই।
তাই চিনা প্রস্তাব মানবেন না তিনি।
চিনা প্রতিনিধিদের দ্বিতীয় প্রস্তাব ছিল, ভোট যদি হয়ই, সে ক্ষেত্রে কমিউনিস্ট শিবিরের সব দল যেন একজোট হয়ে নির্বাচনে লড়ে। জয় এলে নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই প্রধানমন্ত্রী ঠিক করবেন। কিন্তু ওলি বনাম প্রচণ্ড-মাধবের সংঘাত যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তেমন কোনও জোট বিশ বাঁও জলে। পরিস্থিতির বদল না হলে নেপালে ৩০ এপ্রিল ও ১০ মে, দু’দফায় ভোট হবে। তবে কোভিড হানা ও পর্যটনে ধাক্কায় বিপর্যস্ত এই হিমালয় রাষ্ট্রে ভোটের আগেই ফের অশান্তি মাথাচাড়া দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রাক্তন বিদেশসচিব তথা নেপালে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত শ্যাম সারনের মতো কূটনীতিকেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy