চিনা হামলা ঠেকাতে প্রস্তুত তাইওয়ান সেনা। ফাইল চিত্র।
টানাপড়েনের এক মাসে তাইওয়ান প্রণালীতে গুলি চলল প্রথম বার। মঙ্গলবার আকাশসীমা লঙ্ঘন করার দায়ে তিনটি চিনা ড্রোনকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় তাইওয়ান বাহিনী। যদিও তাইপেইয়ের তরফে জানানো হয়েছে, ড্রোনগুলির ক্ষতি করতে নয়, সতর্ক করার উদ্দেশ্যেই গুলি চালানো হয়েছিল।
তাইওয়ানের মূল ভূখণ্ডের অদূরে কিনমেন দ্বীপের সেনা ঘাঁটির খুব কাছে ওই তিনটি চিনা ড্রোন চলে এসেছিল। গুলি চালানোর পর তারা প্রণালীর উল্টো দিকে চিনের জিয়ামেন শহরের দিকে চলে যায়।
তাইওয়ান প্রতিরক্ষা দফতরের মুখপাত্র বুধবার এই ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আত্মরক্ষার অধিকার আমাদের রয়েছে। ভবিষ্যতে যদি এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়, তবে আরও কঠোর পদক্ষেপ করা হবে।’’ তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের নির্দেশে ইতিমধ্যেই সে দেশের সেনাবাহিনী ‘আত্মরক্ষার প্রস্তুতি’ শুরু করেছে বলেও জানান তিনি। এই পরিস্থিতিতে তাইওয়ান প্রণালী ঘিরে উত্তেজনা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন সামরিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ।
চলতি মাসের গোড়ার চিনের হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে আমেরিকার কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ ‘হাউস অফ রিপ্রেজেনটেটিভসে’র স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইপেই সফরের পরেই তাইওয়ান প্রণালীতে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। যুদ্ধ মহড়ার অছিলায় চিনা ‘পিপলস লিবারেশন আর্মি’ (পিএলএ) বার বার তাইওয়ানের আকাশ ও জলসীমা লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ। এই প্রথম বার তাইওয়ানের তরফে চিনা ‘আগ্রাসনের’ জবাব দেওয়া হল।
চিনা যুদ্ধবিমান এবং রণতরীর ভয়ে তাইওয়ান প্রণালীতে বাণিজ্যিক উড়ান এবং নৌচলাচল কার্যত বন্ধ। তাইওয়ানের দাবি, তাইওয়ান প্রণালীতে মোতায়েন পাঁচটি চিনা যুদ্ধজাহাজ এবং ২১টি যুদ্ধবিমানের গতিবিধি তাদের নজরে রয়েছে। ফলে তাইওয়ান প্রণালী এবং দক্ষিণ চিন সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজের যাতায়াতও কমেছে।
চিনা বিমানবাহিনীর সবচেয়ে শক্তিশালী ‘স্টেলথ এয়ার সুপিরিওরিটি ফাইটার’ জে-২০ যুদ্ধবিমানও তাইওয়ান প্রণালীতে মোতায়েন করা হয়েছে বলে পশ্চিমী সংবাদমাধ্যমের খবর। তার মোকাবিলায় আমেরিকায় তৈরি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান এফ-১৬ভি মোতায়েন করেছে তাইওয়ানও। চিনা নৌবাহিনীর তরফে তাইওয়ান প্রণালীতে মোতায়েন জলযানগুলির মধ্যে রয়েছে ‘অ্যাম্ফিবিয়ান ল্যান্ডিং ভেহিকল’ও। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ‘দ্বীপরাষ্ট্র’ তাইওয়ানে দ্রুত সেনা অবতরণের উদ্দেশ্যেই এই পরিকল্পনা বলে মনে করছেন সামরিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ।
উত্তেজনার এই আবহে তাইওয়ানকে সাহায্য করতে সক্রিয় হয়েছে আমেরিকা। আমেরিকা নৌবাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্রবাহী ক্রুজার ইউএসএস অ্যান্টিয়েটাম এবং ইউএসএস চ্যান্সেলরসভিল ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ ভাবে অবস্থান নিয়েছে তাইওয়ান প্রণালীতে। অদূরে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস রোনাল্ড রেগন, ডেস্ট্রয়ার গোত্রের রণতরী ইউএসএস হিগিন্স এবং দ্রুত সেনা অবতরণের উপযোগী রণতরী ইউএসএস ত্রিপোলিও মোতায়েন করেছে আমেরিকার সপ্তম নৌবহর।
এরই পাশাপাশি তাইওয়ান উপকূলের পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জাপানের সঙ্গে যৌথ যুদ্ধ-মহড়া শুরু করেছে আমেরিকা। চিনা উপকূলের অদূরে শুরু হওয়া ‘অপারেশন ওরিয়েন্ট শিল্ড’ নামে এই যুদ্ধ মহড়ায় আমেরিকার সপ্তম নৌবহরের পাশাপাশি অংশ নিয়েছে স্থলসেনার বিশেষ এয়ারবোর্ন ডিভিশন এবং গোলন্দাজ ব্রিগেড। তাইওয়ান প্রণালীতে চিনের সম্ভাব্য হামলা রোখার জন্যই পেন্টাগনের এই ‘প্রস্তুতি’ বলে মনে করছেন সামরিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy