তুঙ্গে উঠল আমেরিকা এবং চিনের শুল্কযুদ্ধ। বিশ্বের বৃহত্তম এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির লড়াই কত দূর পর্যন্ত যায়, তা নিয়েই কৌতূহল তৈরি হয়েছিল। লড়াইয়ের শুরুটা অবশ্য করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পই। চিন থেকে আমেরিকায় রফতানি হওয়া পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্ক বসিয়ে। গত ২ এপ্রিল তিনি চিনা পণ্যে আরও ৩৪ শতাংশ শুল্ক চাপান। দমে যায়নি চিনও। তারাও পাল্টা পদক্ষেপ হিসাবে মার্কিন পণ্যে ৩৪ শতাংশ শুল্ক চাপানোর কথা ঘোষণা করে। আর এতেই চটেছেন ট্রাম্প। সিদ্ধান্ত না বদলালে বুধবার মধ্যরাত থেকে চিনের পণ্যে অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। পাল্টা হুমকির সুরে বেজিংও জানিয়েছে, ভুলের উপর ভুল করছে আমেরিকা।
ট্রাম্প যদি সত্যিই চিনের পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপান, তবে সে দেশের উপর প্রযুক্ত মোট শুল্কের পরিমাণ হবে ১০৪ শতাংশ! সে ক্ষেত্রে আমেরিকার বাজার থেকে কার্যত মুছে যেতে পারে চিনে উৎপাদিত পণ্য। ট্রাম্প সমাজমাধ্যমে অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর হুঁশিয়ারি দিতেই একটি বিবৃতি দিয়েছে চিনের বাণিজ্য দফতর। মার্কিন নীতির সমালোচনা করে বিবৃতিতে বলা হয়, “আরও এক বার আমেরিকার ‘ব্ল্যাকমেল’ করার চরিত্রটি প্রকাশ্যে চলে এল।”
একই সঙ্গে বেজিঙের তরফে ওই বিবৃতিতে লেখা হয়, “যদি আমেরিকা এই ভাবেই চলার কথা ভাবে, তবে চিনও শেষ পর্যন্ত লড়াই করবে।” তবে এই লড়াই কী ভাবে লড়া হবে, তা স্পষ্ট করেনি শি জিনপিঙের সরকার। সে ক্ষেত্রে চিনে রফতানি করা আমেরিকার পণ্যে শুল্কের বোঝা বৃদ্ধির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কোপ পড়তে পারে চিনের মাটিতে কাজ চালানো মার্কিন সংস্থাগুলির উপরেও।
চিন আমেরিকার পণ্যে ৩৪ শতাংশ ‘পাল্টা শুল্ক’ চাপাতেই ক্ষুব্ধ ট্রাম্প সমাজমাধ্যমে বেজিঙের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন। চিনের বিরুদ্ধে অনৈতিক ভাবে ব্যবসা করা এবং মুদ্রামান কৃত্রিম ভাবে বদলে ফেলার অভিযোগ তোলেন তিনি। তার পরেই জানান, যে দেশ আমেরিকার বিরুদ্ধে নতুন শুল্ক আরোপ করবে, সে দেশের বিরুদ্ধে আগের চেয়ে আরও বেশি পরিমাণ শুল্ক চাপানো হবে। ট্রাম্প দাবি করেন যে, চিন শুল্ক নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে আলোচনা করতে চেয়েছিল। কিন্তু সেই আলোচনা বাতিল করা হচ্ছে বলে জানান ট্রাম্প।
২ এপ্রিল ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের উপর শুল্ক আরোপের কথা ঘোষণা করেছেন। তার পর থেকে গত কয়েক দিনে শেয়ার বাজারে কয়েক লক্ষ কোটি টাকার পতন হয়েছে। মাথায় হাত পড়ে গিয়েছে ব্যবসায়ী এবং বিনিয়োগকারীদের। মার্কিন অর্থনৈতিক সংস্থা জেপি মর্গ্যান আমেরিকা তথা গোটা বিশ্বে মন্দার ভবিষ্যদ্বাণী করেছে। তারা জানিয়েছে, চলতি বছরেই মন্দার মুখোমুখি হতে পারে আমেরিকার অর্থনীতি। সারা বিশ্বে মন্দার সম্ভাবনা অন্তত ৬০ শতাংশ। ট্রাম্পের শুল্কনীতির ফলে ধাক্কা খাচ্ছে বিশ্ব বাণিজ্যও। ট্রাম্পের অবশ্য দাবি, ‘‘ওষুধে কাজ হচ্ছে!’’