কমলা হ্যারিস। —ফাইল চিত্র।
আট বছর আগের কথা। ২০১৬-র নির্বাচনে আমেরিকার রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রথম বার কোনও মহিলাকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী করেছিল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। কিন্তু কাচের সেই ছাদটা সে বার ভাঙতে পারেননি দেশের প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিন্টন। হেরে গিয়েছিলেন রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে। ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের ইতিহাস তৈরির হাতছানি। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামনে এ বারও এক জন মহিলা প্রতিদ্বন্দ্বী— কমলা হ্যারিস। পুরো নাম কমলা দেবী হ্যারিস।
দেশের বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা প্রাক্তন বিদেশ সচিব তথা ফার্স্ট লেডি হিলারির সেই অপূর্ণ কাজটা সেরে ফেলতে পারলে একসঙ্গে অনেকগুলো ইতিহাস লেখা হবে এটা নিশ্চিত। আমেরিকা শুধু যে প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট পাবে তা-ই নয়, প্রথম বার ভারতীয় এবং আফ্রো-আমেরিকান বংশোদ্ভূত কারও হাতে ওভাল অফিসের দায়িত্ব যাবে। শিকাগোর বক্তৃতায় কমলার প্রতি সমর্থন জানিয়ে হিলারি বলেছেন, তিনি জানেন যে, পারলে কমলাই পারবেন সেই কাচের ছাদটা ভাঙতে।
কয়েক দিন আগেই ষাটে পড়েছেন কমলা। ক্যালিফোর্নিয়া প্রদেশের ওকল্যান্ডে, ১৯৬৪ সালের অক্টোবরে জন্ম। মা শ্যামলা গোপালন দক্ষিণ ভারতীয়। বাবা ডোনাল্ড জে হ্যারিস আদতে জামাইকার বাসিন্দা ছিলেন। কমলা যখম মাত্র ৫, বোন মায়া আরও ছোট, মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়ে যায়। শৈশবে ছুটিতে মা-বোনের সঙ্গে নিয়মিত চেন্নাইয়ে ঘুরতে যেত কমলা। দেখা করত দাদু-দিদিমার সঙ্গে। তবে শ্যামলা খুব সচেতন ভাবেই দু’মেয়ের সঙ্গে আফ্রিকান সংস্কৃতিরও পরিচয় করে দিয়েছিলেন।
ওয়াশিংটনের হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৬ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং অর্থনীতি নিয়ে স্নাতক হন কমলা। তার পরে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হেস্টিংস কলেজ থেকে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯৯০ সালে সেই প্রদেশেরই ছোট্ট এক কাউন্টির ডেপুটি ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি হিসেবে পথ চলা শুরু কমলার। পরে গোটা ক্যালিফোর্নিয়া প্রদেশের অ্যাটর্নি জেনারেলের পদে নিযুক্ত হন। সালটা ২০১০। দেশ-বিদেশের নানা সংবাদমাধ্যমের বক্তব্য, কাচের ছাদটা তখনই ভাঙতে শুরু করেছিলেন কমলা। তাঁর আগে ক্যালিফোর্নিয়ার ইতিহাসে কোনও আফ্রিকান আমেরিকান এবং দক্ষিণ এশীয় মহিলা ওই পদে বসেননি। ২০১৬ সালে সেই ক্যালিফোর্নিয়ার প্রতিনিধি হিসেবেই আমেরিকান সেনেটে যান।
তখন তিনি দ্বিতীয় আফ্রো-আমেরিকান নারী, যাঁর ঝুলিতে সেনেটে
প্রবেশের কৃতিত্ব রয়েছে।
আইনের পেশায় যুক্ত থাকার সময়েই ডগলাস ক্রেগ এমহফের সঙ্গে আলাপ। সেখান থেকে প্রেম আর বিয়ে। ডগলাসও এক জন আইনজীবী। তাঁর আগে একটি বিয়ে ছিল। কমলা নিজে নিঃসন্তান। তবে স্বামীর আগের পক্ষের দুই সন্তানের গর্বিত মা তিনি। কমলার বর্ধিত পরিবারে রয়েছেন তাঁর বোন মায়া, মায়ার স্বামী এবং তাঁদের কন্যা। কমলার লেখা কোনও বই প্রকাশ অনুষ্ঠান হোক বা পারিবারিক জমায়েত। সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় অজস্র বার তাঁর পাশে ধরা পড়েছে স্বামী আর বোনের পরিবারের উজ্জ্বল উপস্থিতি।
রাজনীতি হোক বা আইন। মহিলাদের, বিশেষত কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান মহিলাদের, উত্থানে কমলার অবদান কম নয়। আমেরিকান কংগ্রেসে মেয়েদের যোগদানে মহিলা রাজনীতিকদের সব সময় উৎসাহ জুগিয়ে এসেছেন কমলা। তাঁদেরই এক জন জেসমিন ক্রকেট। কমলার নাম শুনলেই হাউস অব রিপ্রেজ়েন্টেটিভসের সদস্যা জেসমিনের চোখে জল চলে আসে। জানালেন, ব্যক্তিগত স্তরে এমন ভাবে যোগাযোগ কেউ রাখেন না, ঠিক যতটা কমলা হ্যারিস করে থাকেন। সন্তানদের খোঁজখবর নেওয়া থেকে শুরু করে সংসারের খুঁটিনাটি বিষয়। কারও ব্যক্তিগত কোনও সমস্যাও চোখ এড়ায় না তাঁর।
আইনজীবী হিসেবে যখন কেরিয়ার শুরু করেছেন, কমলা বলতেন ‘‘গোটা বিশ্বটাই যেন আমার মক্কেল।’’ অত্যাচারিত, নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠার চেষ্টাটা ছিল সব সময়ই। আর এই স্বভাব তিনি নিজের মায়ের কাছ থেকেই পেয়েছেন বলে মনে করেন অনেকে। এক সাক্ষাৎকারে কমলা বলেছেন, ‘‘মা খুব ভাল ভাবেই জানতেন তাঁর পালিত দেশে দুই কৃষ্ণাঙ্গ কন্যাকে একা হাতে মানুষ করছেন তিনি। এই দেশ আমাদের কৃষ্ণাঙ্গ বলেই গণ্য করবে। তাই মা চেয়েছিলেন আমরা দুই বোনই খুব আত্মবিশ্বাসী এবং গর্বিত দুই কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা হিসেবে বেড়ে উঠি।’’
পাকাপাকি ভাবে রাজনীতির ময়দানে প্রবেশের কয়েক বছরের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড়ে নাম লিখিয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৯ সালে অর্থের অভাবে শুরুতেই ধাক্কা খান। সে বার প্রেসিডেন্ট হন বাইডেন। আর প্রথম কোনও কৃষ্ণাঙ্গ, ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহিলা আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্টের গদিতে বসেন। এ বারও শুরুটা করেছিলেন বাইডেনই। কিন্তু জুলাইয়ের শেষে যে দিন তিনি সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেন, নিজের বাড়িতে বসেই প্রাতরাশ সারছিলেন কমলা। আচমকাই বাইডেনের সিদ্ধান্ত জানতে পারেন।
কমলা বলেছেন, ‘‘আমি এ বার জিতলে হয়তো মহিলা হিসেবে প্রথম আমেরিকান প্রেসিডেন্ট হব। কিন্তু আমি জানি যে আমিই শেষ নই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy