ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত।
আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হিসাবে ফৌজদারি মামলায় সাজার মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। আর সেই সঙ্গেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে ৭৭ বছরের ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে’। শেষ পর্যন্ত আগামী নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে আমেরিকায় শুরু হয়েছে জল্পনা।
তথ্য গোপনের উদ্দেশ্যে ব্যবসায়িক নথিপত্রে জালিয়াতি করার দায়ে ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করেছে নিউ ইয়র্ক আদালতের ১১ সদস্যের জুরি বোর্ড। ওই মামলায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা ৩৪টি অভিযোগের সব ক’টিই প্রমাণিত হয়েছে বলে জানিয়েছে আদালত। আগামী ১১ জুলাই ট্রাম্পের সাজা ঘোষণা করা হবে। আমেরিকার আইন অনুযায়ী, ট্রাম্পের জেল বা জরিমানা অথবা একসঙ্গে দু’টি সাজাই হতে পারে। যে মামলায় তাঁকে ‘অপরাধী’ ঘোষণা করা হয়েছে, আমেরিকার আইন অনুযায়ী তাতে সর্বোচ্চ সাজার মেয়াদ চার বছরের জেল।
নিউ ইয়র্ক আদালতের জুরি বোর্ডের সভাপতিত্বকারী বিচারক জুয়ান মার্চানের পরিচিতি রয়েছে ‘অপরাধীদের কঠোর সাজা’ দেওয়ার জন্য। তবে আইন বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, এ ক্ষেত্রে ৭৭ বছরের রিপাবলিকান নেতাকে শুধু জরিমানা দিয়েই ছাড় দিতে পারে আদালত। কারণ, প্রথমত তাঁর বয়স, দ্বিতীয়ত অপরাধের ধরন ‘অহিংস’ এবং তৃতীয়ত, এটাই তাঁর প্রথম অপরাধ। তা ছাড়া দেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হিসাবে এ ক্ষেত্রে ট্রাম্পের প্রতি জুরি ‘বাড়তি সহানুভূতি’ দেখাতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।
আগামী ১১ জুলাই শাস্তি ঘোষণার আগে ট্রাম্প আদালতে তাঁর ‘চরিত্রের’ বিষয়ে পরিজন এবং পরিচিতদের শংসাপত্র পেশের সুযোগও পাবেন। আমেরিকার আইনে এমন শংসাপত্রে শাস্তি লাঘব হওয়ার সুযোগ থাকে। জেলের সাজা হলেও এখনই তা কার্যকর না-ও হতে পারে। আমেরিকার আইন অনুযায়ী এ ক্ষেত্রে ম্যানহাটনের রাষ্ট্রীয় আপিল আদালতে আবেদন জানিয়ে স্থগিতাদেশ পেতে পারেন ট্রাম্প। বস্তুত, রায় ঘোষণার পরেই বৃহস্পতিবার ট্রাম্প উচ্চতর আদালতে আবেদনের বার্তাও দিয়ে রেখেছেন। ট্রাম্পের আবেদন সম্পর্কে রায় জানাতে আপিল আদালতের এক বছরেরও বেশি সময় লাগতে পারে বলে আইনজীবীদের একাংশের মত। তত দিনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়ে যাবে।
তবে শেষ পর্যন্ত জেলে যেতে হলেও আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়তে বাধা থাকবে না ট্রাম্পের। কারণ, সে দেশের আইন অনুযায়ী ফৌজদারি মামলার আসামিও দেশের সর্বোচ্চ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার উপযুক্ত। তবে সাজাপ্রাপ্ত নেতা যদি নির্বাচিত হন, তবে ভোটের পরে কংগ্রেসের দুই কক্ষে তাঁকে ইমপিচ করার প্রক্রিয়া শুরু করা যেতে পারে। ঘটনাচক্রে, ট্রাম্পের সাজা ঘোষণার কয়েক দিন পরই রিপাবলিকান পার্টির জাতীয় সম্মেলন। ওই সম্মেলনেই তাঁকে আনুষ্ঠানিক ভাবে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করার কথা রয়েছে। রিপাবলিকান নেতৃত্ব সর্বসম্মত ভাবে প্রার্থিপদের বিরোধিতা করে প্রস্তাব নিলে সমস্যা বাড়তে পারে ট্রাম্পের।
আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হিসাবে ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন সত্তরোর্ধ্ব ওই রিপাবলিকান পার্টির নেতা। পর্নতারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের পরে ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় তাঁর মুখ বন্ধ রাখতে ট্রাম্প ১ লক্ষ ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। ওই টাকা দেওয়ার বিষয়টি গোপন রাখতে ট্রাম্প তাঁর ব্যবসায়িক সংস্থার নথিপত্রে জালিয়াতি করেছিলেন। অবশ্য গোড়া থেকেই ট্রাম্প তাঁর বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সে সময় ম্যানহাটন ডিসট্রিক্ট অ্যাটর্নি অ্যালভিন ব্র্যাগ অভিযোগের তদন্ত করেছিলেন। তিনি ডেমোক্র্যাট দলের সদস্য। ফলে ‘রাজনৈতিক চক্রান্তের’ অভিযোগ তুলেছে ট্রাম্প শিবির। চলতি বছরের নভেম্বরে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ইতিমধ্যেই ‘রিপাবলিকান ককাস’-এ ‘প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী’ হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন ট্রাম্প। এ ছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে আইন-বহির্ভূত ভাবে গোপন সরকারি নথিপত্র নিজের হেফাজতে রাখা, ক্যাপিটল হিংসা-সহ তিনটি ফৌজদারি মামলা এখনও আদালতের বিচারাধীন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy