Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Earthquake in Nepal

দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া বাড়ি, হাহাকার, আর্তনাদ! শুক্রবার মাঝরাতের ভূমিকম্প উস্কে দিল ২০১৫ সালের স্মৃতি

২০১৫ সালের ২৫ এপ্রিল। বেলা ১২টা নাগাদ রিখটার স্কেলে প্রায় ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের অভিঘাতে কেঁপে ওঠে নেপালের বিস্তীর্ণ এলাকার মাটি। ভূমিকম্পের তাণ্ডবে প্রায় ৯ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

Buildings collapses, Casualty increasing in Nepal’s Earthquake

ভূমিকম্প বিধ্বস্ত নেপালের ছবি। ছবি: পিটিআই ।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কাঠমান্ডু শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:৫৪
Share: Save:

২০১৫ সালের ২৫ এপ্রিল। বেলা ১২টা নাগাদ রিখটার স্কেলে প্রায় ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের অভিঘাতে কেঁপে ওঠে নেপালের বিস্তীর্ণ এলাকার মাটি। কেন্দ্রস্থল ছিল গোর্খা জেলার বারপাক। ভূমিকম্পের তাণ্ডবে প্রায় ৯ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। আহত হয়েছিলেন প্রায় ২২ হাজার মানুষ। হাজার হাজার ঘর, বাড়ি, স্কুল হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছিল। মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল নেপাল। চারদিকে শোনা গিয়েছিল হাহাকার, কান্না, স্বজনহারাদের আর্তনাদ। সারা বিশ্ব সেই ভয়াবহতার সাক্ষী ছিল। ২০১৫ সালের সেই ভূকম্পনের কারণে নেপালে তৈরি হওয়া সেই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি এখনও অনেকের স্মৃতিতে তাজা। তার মধ্যে শুক্রবার রাতের ভূমিকম্প সেই স্মৃতিই যেন খানিকটা উস্কে দিল। যদিও ২০১৫ সালের সেই ভয়াবহ ভূমিকম্পের থেকে শুক্রবার মাঝরাতে হওয়া ভূমিকম্পের মাত্রা কম। তবে অভিঘাত কম হবে কি না তা এখনও স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। কারণ, শুক্রবার রাত ১২টা নাগাদ ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্রে হওয়া ভূমিকম্পের কারণে ইতিমধ্যেই ১৩০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। আহতের সংখ্যাও ১০০ ছাড়িয়েছে।

শুক্রবার গভীর রাতে ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে নেপাল। জাজারকোটের রামিডান্ডায় মাটি থেকে ১০ কিমি নীচে সৃষ্ট ওই ভূমিকম্পের রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ৬.৪। নেপালের ভূকম্পনের অভিঘাত এতটাই ছিল যে, তার প্রভাবে কেঁপে উঠেছিল সুদূর দিল্লির মাটিও। দিল্লি ছাড়া এনসিআর, অযোধ্যা, লখনউ, বিহার-সহ উত্তর ভারতের বড় অংশের মাটিতে কম্পন অনুভূত হয়েছিল। বেশ কিছু ক্ষণ ধরে টের পাওয়া গিয়েছিল কম্পন।

শুক্রবার রাতে ভূমিকম্প টের পাওয়ার পরই নেপালের বহু এলাকার মানুষ ভয় পেয়ে ঘরবাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন। চওড়া চওড়া ফাটল ধরে অনেক বাড়িতে। অনেক বাড়ি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছে, দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে। সেই ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে অনেকের। চারিদিকে ধ্বংসলীলার ছবি। ধসে পড়া ভবনগুলির নীচে এখনও অনেকে চাপা রয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জাজারকোটের পুলিশ আধিকারিক সন্তোষ রোক্কা বলেন, ‘‘বহু বাড়ি ভেঙে পড়েছে। লোকজন তাদের বাড়ি থেকে ছুটে বেরিয়ে এসেছে। আমি আতঙ্কিত বাসিন্দাদের ভিড়ে দাঁড়িয়ে আছি। আমরা ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি।’’

শুক্রবারের ভূমিকম্পে নেপালে যে এলাকাগুলি ক্ষতিগ্রস্ত, তার মধ্যে রুকুম পশ্চিম এং জাজারকোটে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সব থেকে বেশি। নেপালের প্রশাসনিক সূত্রে খবর, এই দুই এলাকাতেই এখনও পর্যন্ত সব থেকে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, জাজারকোটের অনেকগুলি এলাকায় এখনও উদ্ধারকারী দল পাঠানো সম্ভব হয়নি। এই পাহাড়ি জেলায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা গ্রামগুলিতে প্রায় দু’লক্ষ মানুষের বাস। শুক্রবার রাতের ভূমিকম্পের পর বেশ কিছু এলাকার সঙ্গে প্রশাসনের তরফে এখনও যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।

শুক্রবারের ভূমিকম্পের বেশ কয়েকটি ছবি ইতিমধ্যেই সমাজমাধ্যমে প্রকাশ্যে এসেছে। ‘পালাও, পালাও’ বলে বহু মানুষকে চিৎকার করে দৌড়াদৌড়ি করতেও দেখা গিয়েছে। রাতের অন্ধকারেও মানুষের মুখে ভয় এবং আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট ভাবে ধরা পড়েছে সেই সব ছবি-ভিডিয়োয়। যেমনটা দেখা গিয়েছিল ২০১৫ সালে।

উল্লেখ্য যে, সরকারি নথি অনুযায়ী, নেপাল বিশ্বের ১১তম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। তিব্বতীয় এবং ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটের উপর অবস্থিত হওয়ায় নেপাল প্রায় সারা বছরই ভূমিকম্পের ঝুঁকির মুখে থাকে। গত এক মাসের মধ্যেই নেপালের মাটি তিন বার কেঁপে উঠেছে। গত ২২ অক্টোবর কেঁপে উঠেছিল নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু। রিখটার স্কেলে এই কম্পনের মাত্রা ছিল ৬.১। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল নেপালের ধাদিং জেলা। এর ঠিক দু’দিন পরে আবার ভূমিকম্প হয় নেপালে। মাত্রা ছিল ৪.১। গত ৩ অক্টোবরও ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল নেপাল। পর পর চার বার ভূমিকম্প হয়েছিল নেপালে। নেপালের পাশাপাশি তার প্রভাব পড়েছিল দিল্লি, উত্তরপ্রদেশের লখনউ, হাপুর এবং আমরোহাতে। কম্পন অনুভূত হয়েছিল উত্তরাখণ্ডের কিছু কিছু অংশ, চণ্ডীগড়, জয়পুরেও।

প্রসঙ্গত, ১৯৩৪ সালেও জোরালো ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল নেপালে। মনে করা হয়, সেই ভূমিকম্পই নেপালে আঘাত হানা সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প। যার প্রভাব পড়েছিল বিহারেও। ভূমিকম্পের কারণে প্রায় ১৭ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

অন্য বিষয়গুলি:

earthquake Nepal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy