নতুন চালু হওয়া সন্ত্রাসদমন আইনের বিরোধিতায় বুধবার পথে নেমেছিলেন যে সব হংকংবাসী, পুলিশ আটক করেছে তাঁদের। রয়টার্স
হংকংয়ের জন্য নতুন সন্ত্রাসদমন বিল আনার পর থেকেই চিনের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলে আসছিল পশ্চিমী দেশগুলি। চিনের পার্লামেন্টে সম্প্রতি পাশ হয়েছে সেই বিল। কূটনীতিকেরা বলছেন, নতুন নিরাপত্তা আইনের জোরে হংকংয়ের উপরে নিজেদের রাশ আরও দৃঢ় করতে চায় বেজিং। এ বার বেজিংয়ের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে কমপক্ষে ৩০ লক্ষ হংকংবাসীকে নিজেদের দেশের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা ঘোষণা করল ব্রিটিশ সরকার।
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন গত কাল পার্লামেন্টে জানিয়েছেন, ২৫ লক্ষেরও বেশি হংকংবাসীকে আপাতত পাঁচ বছরের ভিসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাঁর সরকার। এর মাধ্যমেই নাগরিকত্ব দেওয়ার পথ প্রশস্ত হবে বলে জানিয়েছেন বরিস। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে ব্রিটেনের বিদেশমন্ত্রী ডমিনিক র্যাব জানিয়েছেন, প্রথমে পাঁচ বছরের ব্রিটিশ ন্যাশনাল (ওভারসিজ়) বা বিএনও পাসপোর্ট দেওয়া হবে। তার পরে ১২ মাসের জন্য দেওয়া হবে ‘সেটলড স্ট্যাটাস’। এর পরের ধাপে নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। বর্তমানে সাড়ে তিন লক্ষ হংকংবাসীর বিএনও পাসপোর্ট রয়েছে। সেই সংখ্যাটাই এক লাফে বাড়িয়ে প্রায় ৩০ লক্ষ করা হবে। ডমিনিক আরও জানিয়েছেন, বিএনও পাসপোর্টধারীরা কোনও ব্রিটিশ কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ার আমন্ত্রণ না-পেলেও বা কোনও সংস্থার কাছ থেকে চাকরির আশ্বাস না-পেলেও ব্রিটেনে এসে বসবাস করতে পারেন। ন্যূনতম বার্ষিক আয় ৩০ হাজার পাউন্ড হলেই ব্রিটেনে আসার সুযোগ পান অভিবাসীরা। কিন্তু বিএনও পাসপোর্টধারীদের জন্য এই নিয়ম খাটবে না। শুধু তাঁদের প্রমাণ দিতে হবে যে, কোনও সরকারি অনুদান ছাড়াই ব্রিটেনে বসবাস করার মতো সঙ্গতি তাঁদের রয়েছে। অনেকেই অবশ্য বলছেন, বরিসের এই সিদ্ধান্তে উচ্চবিত্ত হংকংবাসীরাই শুধু লাভবান হতে চলেছেন।
১৯৯৭ সালের ৩০ জুন হংকং থেকে নিজেদের পতাকা নামিয়ে সেখানকার ক্ষমতা চিনের কাছে হস্তান্তর করেছিল ব্রিটিশ সরকার। কিন্তু অভিযোগ, মুখে ‘এক রাষ্ট্র দুই নীতি’ আর স্বায়ত্তশাসনের কথা বললেও বরাবর হংকংয়ের উপরে নিজেদের আধিপত্য কায়েম রাখার চেষ্টা চালিয়ে এসেছে বেজিং। গত বছর প্রত্যর্পণ বিলের বিরোধিতা করে হংকংয়ের গণতন্ত্রকামী মানুষ সরাসরি চিনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। হংকংয়ের মাটিতে চিন-বিরোধী যে কোনও বিক্ষোভ সমাবেশ আটকাতেই চিন এই আইন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। গত কাল বরিসও স্পষ্ট বলেছেন, এই আইন এনে সরাসরি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে বেজিং।
বরিস সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন হংকংয়ের শেষ গভর্নর ক্রিস প্যাটেন। তাঁর কথায়, ‘‘গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় এখন আগ্রাসী নীতি নিয়েছে চিন। সম্প্রতি তারা ২০ জন ভারতীয় সেনাকে হত্যা করেছে। দক্ষিণ চিন সাগরেও তারা নাক গলাচ্ছে। হংকংয়ের মানুষের অধিকার রক্ষার্থে এটা করা জরুরি ছিল।’’ যদিও ব্রিটিশ সরকার সত্যিই এ রকম কিছু করলে তার ফল ভুগতে হবে বলে আজ হুঁশিয়ারি দিয়েছে চিনও। লন্ডনের চিনা দূতাবাসের তরফে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, চিনের ভূখণ্ডে বসবাসকারী সব নাগরিকই চিনা নাগরিক। হংকংবাসীদের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব দেওয়া হলে আন্তর্জাতিক আইন ব্রিটেনই লঙ্ঘন করবে বলে পাল্টা জানিয়েছে চিনও।
সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, নতুন আইনের সমালোচনা করে চিনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত একটি বিলের প্রস্তাব পাশ হয়েছে মার্কিন হাউস অব রিপ্রেজ়েন্টেটিভসেও। হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, ‘‘এই আইন আসলে এক রাষ্ট্র দুই নীতির মৃত্যুর কথাই বলছে।’’ মার্কিন প্রেসিডেন্টের সইয়ের আগে বিলটি যাবে মার্কিন সেনেটের কাছে।
তবে গোটা বিষয়টি নিয়ে সংযত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারত। জেনিভায় মানবাধিকার সংক্রান্ত রাষ্ট্রপুঞ্জের কাউন্সিলে চিনের নাম না করেই ভারতের প্রতিনিধি রাজীব চান্দের বলেছেন, ‘‘হংকংয়েও বেশ কিছু সংখ্যক ভারতীয় থাকেন। বিষয়টি নিয়ে অনেক রিপোর্টই আমাদের চোখে পড়েছে। আমরা আশা করি সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে। বিষয়টির উপরে নজর রাখা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy