বিস্ফোরণস্থলে তদন্তকারীরা। ছবি: রয়টার্স
বড়দিনের ভোর। আমেরিকার দক্ষিণপূর্বে টেনেসি স্টেটের সবচেয়ে বড় শহর ন্যাশভিল তখনও ঘুমিয়ে। ঘড়ির কাঁটায় সাড়ে ৫টা। রাতের অন্ধকারে সান্টা ক্লজ় ঝুলিতে কী উপহার রেখে গিয়েছে, তখনও সে সব খুলে দেখেনি খুদেরা। হঠাৎ শুরু ব্যাপক গোলাগুলি। সেকেন্ড অ্যাভিনিউয়ের প্রায় সব ক’টা বাড়ির জানলা খুলে মুখ বাড়ালেন বড়রা। কই কিচ্ছু তো নেই! অথচ গুলির শব্দে কান পাতা দায়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে শুধু একটা পেল্লায় সাদা রিক্রিয়েশনাল ভ্যান (আরভি)। রেকর্ড করা গুলির শব্দ কি ওখান থেকেই আসছে? অনেকেই ভাবলেন ঠাট্টা! কেউ আবার ফোন করে বসলেন পুলিশে। পুলিশ আসার আগেই ওই আরভি থেকে মহিলাকণ্ঠে ঘোষণা শুরু হয়ে গিয়েছে— ‘গাড়িতে বোমা আছে। তাড়াতাড়ি এলাকা খালি করুন।’
৬টা থেকেই এলাকা খালি করতে শুরু করেছিল পুলিশ। আর ঠিক সাড়ে ৬টায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল এলাকা। ওই আরভি থেকেই ধেয়ে এল আগুনের গোলা। মুহূর্তে ধোঁয়ায় ঢাকল আকাশ। আর ঝনঝন করে ভাঙতে শুরু করল একের পর এক দোকান-বাড়ি-অফিসের জানলার কাচ। পুলিশ জানিয়েছে, কারও প্রাণহানি না-হলেও সাতসকালের এই ‘রহস্য’ বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন এক পুলিশকর্মী-সহ তিন জন। কিন্তু বিস্ফোরণটা ঘটাল কে? এলাকায় কার্ফু জারি করে একযোগে তদন্তে নেমেছে এফবিআই, পুলিশের মাদক-বিরোধী এবং জঙ্গি-দমন শাখা। ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছিলেন বিস্ফোরক এবং আগ্নেয়াস্ত্র বিষয়ক ফেডারেল তদন্তকারীরাও। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভাবী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে কিছু ক্ষণের মধ্যেই ঘটনাটি সম্পর্কে জানানো হয়। দু’জনেই পুলিশের ভূমিকায় সন্তুষ্ট বলে বিবৃতি দেন।
কাল দিনভর ওই এলাকায় তল্লাশি চালিয়েছে বম্ব স্কোয়াড। কিন্তু আর কোনও বিস্ফোরকের হদিশ মেলেনি। বাড়িতে-বাড়িতে জিজ্ঞাসাবাদও চালিয়েছে পুলিশ। অথচ সন্দেহজনক কোনও সূত্রেই মেলেনি। বিস্ফোরণ স্থল থেকে পাওয়া ধ্বংসাবশেষে মধ্যে শুধু কিছু মানব শরীরের অংশ মিলেছে বলে সন্দেহ পুলিশের। ওই আরভি-তে কি তা হলে কেউ ছিল? এই দেহাবশেষ কি তারই— খুঁজছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। এই বিস্ফোরণ আত্মঘাতী জঙ্গি হামলা ছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
ন্যাশভিলের মেয়র জন কুপারের দাবি, এই বিস্ফোরণ কোনও ভাবেই দুর্ঘটনাপ্রসূত নয়। নিশ্চিত ভাবেই ইচ্ছাকৃত। তিনি জানান, বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা তিনটি গাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ব্যবসায়িক দফতর ও বাড়ি মিলিয়ে প্রায় ৫০টি আবাসন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই আরভি-তে কী ধরণের বিস্ফোরক ছিল, তা বোঝার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। তাতে হয়তো কোনও নির্দিষ্ট জঙ্গি গোষ্ঠীর কথা সামনে আসতে পারে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা।
বিস্ফোরণের আগে ঘাতকেরা কেন শহরবাসীকে সতর্ক করছিল, তা নিয়েও জল্পনা চলছে। অনেকেই মনে করছেন, প্রাণহানি নয়, বড়দিনে সন্ত্রাস ছড়ানোর উদ্দেশেই এই বিস্ফোরণ। বিস্ফোরণে প্রভূত ক্ষতি হয়েছে এটি অ্যান্ড টি নেওটওয়ার্ক হাব-এর। সংস্থার ভবনটি তো বটেই, বিস্ফোরণের অভিঘাতে তাদের টেলিকম নেটওয়ার্ক পরিষেবাও ভেঙে পড়েছে।
কাল দুপুরে ন্যাশভিল পুলিশ ওই আরভি-টির একটি ছবি টুইট করে জানায়, যে কাল রাত দেড়টা নাগাদ গাড়িটিতে সেকেন্ড অ্যাভিনিউয়ে ঢুকতে দেখা গিয়েছিল। শহরবাসীর কাছে এই সংক্রান্ত তথ্য থাকলে, তা জানানোর আর্জি জানিয়েছেন মেয়রও। বিস্ফোরণের জেরে শহরের টেলি-যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় ঘটনার পর-পরই শহরের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সব উড়ান পরিষেবা স্থগিত রাখা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy