ছবি: এএফপি।
ভোট প্রচারের সময়ে সেবামূলক কাজের নামে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করা যাবে না বলে জানিয়ে দিল ব্রিটেনের চ্যারিটি কমিশন। বিজেপি-ঘনিষ্ঠ একাধিক সংগঠন সম্প্রতি ঘোষণা করেছে, লেবার পার্টির বিরুদ্ধে প্রচার চালাতে ব্রিটেনের মন্দিরগুলো ব্যবহার করবে তারা। লেবার পার্টির প্রার্থীরা বিজেপিকে ‘ভারত-বিরোধী’ বলে মনে করে বলে অভিযোগ তাদের। এর পরেই চ্যারিটি কমিশন ওই নির্দেশ দিয়েছে।
‘দ্য ওভারসিজ ফ্রেন্ডস অব দ্য বিজেপি ইউকে’ (ওএফবিজেপিইউকে) ১৯৯২ সালে তৈরি হয়। এখন তাদের কাজ, ভারতে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার সম্পর্কে ইতিবাচক বার্তা দেওয়া। সংগঠনটি ঘোষণা করেছে, তারা ৪৮টি আসন বেছে নিয়েছে, যেখানে আগামী ১২ ডিসেম্বর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। সেই আসনগুলিতে কনজ়ারভেটিভদের হয়ে প্রচার চালাবে ওই সংগঠন। ব্রিটেনে বসবাসকারী ভারতীয়রা বহু কাল ধরে লেবার পার্টিকে সমর্থন করে এসেছেন। বিজেপির ওই সংগঠনটির দাবি, লেবার পার্টির বর্তমান নেতৃত্ব ‘ভারত-বিরোধী’। কারণ তাঁরা কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমালোচনা করেছেন।
ওএফবিজেপিইউকে-র প্রেসিডেন্ট কুলদীপ সিংহ শেখাওয়াত এই সপ্তাহে বলেছেন, স্লাও থেকে দাঁড়ানো শিখ লেবার এমপি তনমনজিৎ সিংহ দেশি এবং বার্মিংহ্যামে এজবাস্টনের এমপি প্রীত গিলের আসন দু’টি তাঁদের সংগঠনের নজরে আছে। এই দুই আসনে কনজ়ারভেটিভদের জেতাতে চায় বিজেপি। এ ছাড়া তাদের তালিকায় আছেন, উইগ্যানের আধা-বাঙালি এমপি লিজা নন্দী, ইলিংয়ের এমপি সীমা মলহোত্র এবং ওয়ালসলের এমপি ভ্যালেরি ভাজ। এঁরা যে এলাকাগুলি থেকে লড়ছেন, সেখানে এশীয়দের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে বেশি। তার মধ্যে আবার ভারতীয় ও পাকিস্তানির সংখ্যা বেশি।
কুলদীপ সিংহ শেখাওয়াত বলেন, ‘‘প্রতি এলাকায় আমাদের দলের লোক টোরিদের (কনজ়ারভেটিভ) হয়ে লিফলেট বিলি, লোকজনের সঙ্গে কথা বলার কাজটা করছে।’’ তাঁর বক্তব্য, যে সব আসন তাঁদের লক্ষ্য, সেই এমপি-দের কেউ কেউ ভারতের বিরুদ্ধে চিঠিতে সই করেছেন। ন্যাশনাল কাউন্সিল অব হিন্দু টেম্পলস-ও (এনসিএইচটি) কনজ়ারভেটিভদের হয়ে প্রচার চালাবে বলে দাবি কুলদীপের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনও বিদেশি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত একটি সংগঠন এ ভাবে প্রকাশ্যে একটি বিশেষ ব্রিটিশ দলের হয়ে প্রচারের পরিকল্পনা করছে, এমনটা এখানে একেবারেই ব্যতিক্রমী ঘটনা। গত মাসেই এনসিএইচটি চিঠি দিয়ে লেবার নেতা জেরেমি করবিনের বিরুদ্ধে ‘ভারত-বিরোধী বর্ণবিদ্বেষের’ অভিযোগ এনেছে। তাদের আরও দাবি, লেবার পার্টির সম্মেলনে কাশ্মীর নিয়ে কী অবস্থান নেওয়া হচ্ছে, সে ব্যাপারে দলের ভারতীয় সদস্যদের অন্ধকারে রাখা হয়েছে। এমনকি লেবার পার্টিকে আল কায়দা ও আইএসের সমর্থক বলে সমালোচনা করেছে এনসিএইচটি।
তার পরেই নড়ে বসেছে চ্যারিটি কমিশন। মন্দির সংক্রান্ত সংগঠনগুলি সেবামূলক কাজে জড়িত বলে জানানো আছে। কোনও মন্দিরের নাম না করে চ্যারিটি কমিশন কড়া ভাষায় জানিয়েছে, সেবার সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক দলকে সমর্থন বা বিরোধিতার সম্পর্ক নেই। তা ছাড়া, সেবা প্রতিষ্ঠানগুলির রাজনৈতিক দলগুলিকে অর্থ সরবরাহ করার কথাও নয়। হিন্দু মন্দিরের রাজনৈতিক সক্রিয়তায় এই প্রথম চ্যারিটি কমিশন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, এমন নয়। ২০১৫ এবং ২০১৭ সালেও সাধারণ নির্বাচনের আগে এনসিএইচটি কনজ়ারভেটিভ পার্টিকে ভোট দেওয়ার জন্য বেছে বেছে হিন্দুদের ইমেল পাঠিয়েছিল। সে বারও চ্যারিটি কমিশন হস্তক্ষেপ করে।
জনপ্রিয় শিখ লেবার এমপি তনমনজিৎ সিংহ দেশি বলেছেন, ‘‘ইদানীং ভোটে বিদেশি হস্তক্ষেপের কথাবার্তা হচ্ছে। এটা তারই আর একটা উদাহরণ।’’ তাঁর দাবি, ‘‘লেবার পার্টি কখনওই ভারত বা পাকিস্তান বা অন্য কোনও দেশ বিরোধী নয়। আমরা মানবাধিকারের পক্ষে।’’ লিজা নন্দী বলেছেন, ‘‘বিজেপি এখানে নেমে এলাকা দখলের জন্য প্রচার চালাচ্ছে— ভাবনাটাই হাস্যকর।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy