৯/১১-র অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা। ছবি: রয়টার্স
দেড় দশক আগের সকালটার সঙ্গে এ দিন ফারাক ছিল একটাই।
সে দিন আম-মার্কিনের কাছে সন্ত্রাসবাদ শব্দটা শোনা থাকলেও তার অভিঘাতটা ছিল অচেনা। সেপ্টেম্বরের সেই সকালের ১ ঘণ্টা ১৭ মিনিট তাঁদের সব কিছু ওলোটপালট করে দিয়েছিল। পরের ১৪ বছর ধরে এই তারিখটা সেই বদলটাকেই বারবার মনে করিয়ে দেয়।
এ দিনও দিয়েছে। প্রতিবারের মতো এ বারও ৯/১১-র জঙ্গি হামলাকে স্মরণ করার জন্য গ্রাউন্ড জিরো-তে হাজির হয়েছিলেন সে দিনের নিহতদের আত্মীয়েরা। ১৫ বছর আগে ওই জায়গাতেই ছিল মার্কিন অর্থনীতির অহঙ্কারের প্রতীক ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের দু’টি গগনচুম্বী টাওয়ার। রবিবার সকালে সেখানেই স্মারকের সামনে দাঁড়িয়ে ফুল-মোমবাতি-নীরবতার হাত ধরে প্রিয়জনকে মনে করলেন আত্মীয়েরা। ‘‘এ যন্ত্রণা কখনও যাওয়ার নয়। আপনি যতই সামনে এগোনোর চেষ্টা করুন, এই যন্ত্রণা সব সময় সঙ্গে থাকবে’’— ছেলে পলের ছবি হাতে জমায়েতে দাঁড়িয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে বলছিলেন নিউ জার্সির টম আকোয়ারভিভা। ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা তাঁর মতো আরও অনেকের দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে বললেন, ‘‘ওঁরা সকলেই প্রতি মুহূর্ত এই যন্ত্রণাটা বয়ে বেড়ান।’’
এমন একটা বুক ভারী করে দেওয়া থমথমে পরিবেশে দাঁড়িয়ে রাজনীতির কথা বলা শোভন নয়। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ৫৮ দিন আগে সে চেষ্টাও করেননি বিবদমান দুই প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০১১ সালেই নিয়ম করা হয়েছে, এই দিনটা রাজনীতিকরা এখানে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য এলেও কোনও রাজনীতির কথা বলবেন না। কিন্তু তবু কিছুটা হলেও যেন রাজনীতির হাওয়া ছুঁয়ে গেল যখন ট্রাম্প পৌঁছলেন। উৎসাহী অনেকেই হাত নেড়ে, চিৎকার করে তাঁকে স্বাগত জানালেন। ট্রাম্পও ভোটের মুখে এমন সুযোগ হাতছাড়া করার পাত্র নন। হাত নেড়ে, উৎসাহী সমর্থকদের সঙ্গে পোজ দিয়ে ছবি তুলে তিনি যখন গেলেন, তখন শোকের পরিবেশ অনেকটা হাল্কা হয়ে গিয়েছে।
তুলনায় হিলারি ক্লিন্টন এলেন ঝানু রাজনীতিকের ভঙ্গিতে। ২০০১-এর ১১ সেপ্টেম্বর চারটে ছিনতাই করা যাত্রী বিমান নিয়ে ১৯ জন আল কায়দা জঙ্গি যখন আমেরিকার মাটিতে ইতিহাসের বৃহত্তম জঙ্গি হামলা চালাচ্ছে, তখন রাজনীতিক হিলারি নেহাতই এক জুনিয়র সেনেটর। অবশ্য স্বামী বিল ক্লিন্টনের সৌজন্যে তার অনেক আগেই তিনি আমেরিকার ফার্স্ট লেডি হিসেবে পরিচিত হয়ে গিয়েছিলেন। তাই রাজনীতির অঙ্কটা তাঁর কাছে বেশি চেনা। তাকে কাজে লাগিয়ে শান্ত ভাবে গ্রাউন্ড জিরোর অনুষ্ঠানে পৌঁছলেন। নিহতদের কয়েক জনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সান্ত্বনাও দিলেন। ওই টুকুই। আচমকা অসুস্থ বোধ করায় তড়িঘড়ি অনুষ্ঠান ছেড়ে চলে যেতে হয় হিলারিকে। তাঁর প্রচার দলের তরফে জানানো হয়েছে, গরমে অসুস্থ বোধ করায় হিলারি মেয়ের বাড়িতে বিশ্রাম নিতে যান।
পেন্টাগনে ৯/১১ স্মরণ অনুষ্ঠানে গিয়ে সরাসরি রাজনীতির কথা বলেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও। তাঁর কথায়, ‘‘আমেরিকা কখনও আতঙ্কের কাছে মাথা নত করবে না।’’ আমেরিকার একটা বড় অংশের বক্তব্যও সেটাই। কিন্তু এর বাইরেও একটা অংশ আছে। তাঁরা বলছেন, ৯/১১-র জঙ্গি হামলা না হলে সন্ত্রাসের আসল চেহারা টের পেত না আমেরিকা। অথচ এই আমেরিকারই মদতে ১৯৭৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তারিখেই চিলির সালভাদোর আলেন্দে সরকারকে উৎখাত করেছিল অগুস্তো পিনোচেতের সেনা। সে দিন আমেরিকা ছিল শিকারি, ২০০১ সালে নিজেই শিকার হয়ে গিয়েছিল!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy