সোহিনী চট্টোপাধ্যায়
বাড়ির লোক তাঁকে বলেন ‘বেগুন পোড়ার পোকা’। বাঁকুড়ার সোনামুখীর সেই সোহিনী চট্টোপাধ্যায় এ বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের অন্দরে।
সোহিনীর বাবা স্বদেশ চট্টোপাধ্যায় সোনামুখীর মনোহরতলার বাসিন্দা। তাঁর শিক্ষা ও কর্মজীবনের অনেকটাই এ দেশে। ১৯৭৮ সালে অল্প পুঁজি সম্বল করে স্ত্রী ও কোলের শিশুকন্যা সোহিনীকে নিয়ে আমেরিকা পাড়ি দেন। সেখানে নিজের ব্যবসা গড়ে তোলার পাশাপাশি, প্রশাসনের অন্দরেও বিশেষ প্রভাব গড়ে ওঠে তাঁর। দেশের বাইরে থেকেও ভারতের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক মজবুত করার বিষয়ে অবদানের জন্য ২০০১ সালে ভারত সরকার স্বদেশবাবুকে পদ্মভূষণ সম্মান দিয়েছিল।
সোহিনীর আমেরিকার প্রশাসনে কাজ করার অভিজ্ঞতা অবশ্য বারাক ওবামার সময় থেকেই। ওবামা প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন তিনি নীতি উপদেষ্টা (আন্তর্জাতিক উন্নয়ন) ছিলেন। হোয়াইট হাউস সূত্রে খবর, এ বার রাষ্ট্রপুঞ্জে নিযুক্ত আমেরিকান রাষ্ট্রদূতের নীতি-পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করবেন সোহিনী।
স্বদেশবাবু নর্থ ক্যারোলাইনার বাড়ি থেকে ফোনে জানান, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকস্তরের পড়াশোনা সেরে জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব অ্যাডভান্সড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে স্নাতকোত্তর পাঠ শেষ করেন সোহিনী। স্নাতকোত্তর পড়া চলাকালীন তিনি ডিউক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন নিয়েও পড়াশোনা করেন।
কলেজে পড়ার সময়ে কলকাতায় এসে মাদার টেরিজার জীবদ্দশায় তাঁর ‘মিশনারিজ় অব চ্যারিটি’র হয়ে কয়েক মাস কাজ করেছেন সোহিনী। শেষ বার সোনামুখীর দেশের বাড়িতে ঘুরে গিয়েছেন বছর আটেক আগে। বছর চারেক আগে কলকাতায় এসেছিলেন। সে বার উঠেছিলেন ছোটপিসির বাঁশদ্রোণীর বাড়িতে। কর্মসূত্রে প্রায়ই সোহিনীকে ভারত-সহ এশিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরতে হয়। স্বদেশবাবু বলেন, “প্রথম থেকেই নিজের দেশ ও বিশ্বের জন্য ভাল কিছু করার তাগিদ ছিল সোহিনীর মধ্যে। আমরা নিশ্চিত ও নিজেকে প্রমাণ করবে।”
এ দিকে সোহিনীকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত আত্মীয়েরা। সোহিনীর পিসি, সোনামুখী কলেজের শিক্ষিকা ছায়া মুখোপাধ্যায় বলেন, “ওর মন খুব স্পর্শকাতর। আমাদের অসুস্থতার খবর পেলে চিন্তায় পড়ে যায়। বাংলা বলতে পারলেও ‘তুই’ আর ‘তুমি’র তফাৎ বুঝত না। এক বার তো আমার কলেজের অধ্যক্ষকে গিয়ে সরাসরি ‘তুই’ সম্বোধন করে দিয়েছিল। তার পরে ওকে ভাল করে ‘তুই’ ও ‘তুমি’র ফারাক শিখিয়েছি। এখন অবশ্য আর ভুল করে না। ওর ছায়াপিসি হিসেবে আমি ভীষণ গর্বিত।”
সোহিনীর ছোটপিসির ছেলে, কলকাতার বাঁশদ্রোণীর বাসিন্দা দেবজিৎ চক্রবর্তী বলেন, “আমার সঙ্গে ওর খুব কাছের সম্পর্ক। দিদির মধ্যে এতটাই আত্মবিশ্বাস, যে কোনও রকম বড় সিদ্ধান্ত কারও সঙ্গে আলোচনা না করেই নেওয়ার ক্ষমতা রাখে। এটা খুবই শিক্ষনীয়।”
সোহিনীর ছোটপিসি মনিকা চক্রবর্তী বলেন, “বেগুন পোড়ার পোকা সোহিনী। বাড়িতে এলে ওটা ওর চাই-ই। এখানে এলে ওকে আমার শাড়ি পরিয়ে সঙ্গে নিয়ে ঘুরি। কাছে বসিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিখিয়েছি। ওকে নিয়ে আমাদের গর্বের শেষ নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy