Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ঢাকার রাস্তায় ফের খুন ব্লগার

আমিও অভিজিৎ, নিজের ফেসবুকের পাতায় লিখেছিলেন তিনি। একুশের বইমেলায় অভিজিৎ খুন হওয়ার পরে ধর্মান্ধতা-বিরোধী সুর চড়িয়ে দিয়েছিলেন বেশ কয়েক ধাপ। সেই অভিজিৎ-হত্যার এক মাসের মাথায় ঢাকার রাজপথে পড়ে রইল তাঁর দেহ। রক্তাক্ত, ক্ষত-বিক্ষত। ঠিক যেন অভিজিৎ! তিনি ওয়াশিকুর রহমান। বয়স সাকুল্যে ২৭। ঢাকার এই উঠতি লেখক অভিজিতের মতোই বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তাধারার পক্ষে সওয়াল করে একটি ব্লগ চালাতেন।

ওয়াশিকুর রহমান

ওয়াশিকুর রহমান

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঢাকা শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৫ ০৩:৩৩
Share: Save:

আমিও অভিজিৎ, নিজের ফেসবুকের পাতায় লিখেছিলেন তিনি। একুশের বইমেলায় অভিজিৎ খুন হওয়ার পরে ধর্মান্ধতা-বিরোধী সুর চড়িয়ে দিয়েছিলেন বেশ কয়েক ধাপ। সেই অভিজিৎ-হত্যার এক মাসের মাথায় ঢাকার রাজপথে পড়ে রইল তাঁর দেহ। রক্তাক্ত, ক্ষত-বিক্ষত। ঠিক যেন অভিজিৎ!

তিনি ওয়াশিকুর রহমান। বয়স সাকুল্যে ২৭। ঢাকার এই উঠতি লেখক অভিজিতের মতোই বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তাধারার পক্ষে সওয়াল করে একটি ব্লগ চালাতেন। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে লেখালিখিও করতেন ‘কুৎসিত হাঁসের ছানা’, এই ছদ্মনামে। আজ সকাল সওয়া ন’টা নাগাদ ঢাকার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের বেগুনবাড়ি এলাকায় খুন করা হয় ওয়াশিকুরকে। বাড়ি থেকে বেরোনোর পরে আধ কিলোমিটার পথ না পেরোতেই ওয়াশিকুরের উপরে হামলা চালায় তিন অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতী। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, অভিজিতের মতোই ওয়াশিকুরের গলা এবং মাথা ছিল হামলাকারীদের লক্ষ্য। ধারালো অস্ত্র দিয়ে বারবার আঘাত করায় গুরুতর জখম হন ওয়াশিকুর। তাঁর থুতনি, গলা ও ঘাড়ে গভীর ক্ষত তৈরি হয়েছিল।

একুশের বইমেলায় অভিজিৎ বা তাঁর স্ত্রীকে সাহায্যের জন্য কেউ এগিয়ে আসেননি। তবে এ দিন ওয়াশিকুরকে মার খেতে দেখে মাঝবয়সি এক মহিলা চিৎকার করে ওঠেন। রক্তস্রোতে ওয়াশিকুরকে ফেলে রেখে তখন পালানোর চেষ্টা করে হত্যাকারীরা। মহিলার চিৎকারে লোকজন জড়ো হয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন ধাওয়া করে তিন জনের পিছনে। দুই দুষ্কৃতীকে ধরে ফেলে তাঁরা তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেন। আর এক দুষ্কৃতী অবশ্য পালিয়েছে।

ওয়াশিকুরকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। লেখালেখি করা ছাড়াও একটি পর্যটন সংস্থায় কাজ করতেন ওয়াশিকুর। তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে চলে আসেন সংস্থার কর্মকর্তারা।

পুলিশ জানিয়েছে, ধারালো দু’টি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে ঘটনাস্থল থেকে। দু’জন ঢাকা ও চট্টগ্রামের মাদ্রাসার ছাত্র। নাম আরিফ ও জিকরুল। এরা কোনও সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত কি না, খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তাদের দফায় দফায় জেরা করা হচ্ছে।

পুলিশের কাছে তারা স্বীকার করেছে, ওয়াশিকুর তাঁর লেখালেখিতে মৌলবাদ বিরোধী চিন্তার প্রচার চালাতেন। তাই তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। ওয়াশিকুরকে মারার আগে খুনিরা ঢাকা ও হাটবাজারির বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ছক কষেছিল বলে দাবি পুলিশের। রবিবার আরিফ ও জিকরুল এই ব্লগারকে মারার জন্যই চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসে।

ধর্মীয় মৌলবাদের বিরোধিতা করায় একের পর এক লেখকের উপরে যে ভাবে জঙ্গিরা চড়াও হচ্ছে, তাতে দেশে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।

শুধু ওয়াশিকুর বা অভিজিৎ নন, এর আগে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজীব হায়দার নামে আরও এক ব্লগারকে কুপিয়ে মেরেছিল মৌলবাদী জঙ্গিরা। হায়দারের খুনে ঢাকার এক আদালত নিষিদ্ধ একটি ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠী এবং সাত ছাত্রকে অভিযুক্ত করেছিল।

তার পরেও যে ছবিটা আদপেই পাল্টায়নি, বলে দিচ্ছে ঢাকার রাজপথে অভিজিৎ এবং ওয়াশিকুরের রক্ত।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE