বাংলাদেশের রাজনীতিতে আজ ঘটনাবহুল রবিবার। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন হামলা, ভাঙচুর এবং হত্যার চেষ্টার অভিযোগে ৮৪ জন আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীকে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশের একটি আদালত। আজ সকালে রাজধানী ঢাকায় আচমকাই মিছিল বার করে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ। সেই মিছিলের বহর অনেকেরই নজর কেড়েছে। পড়শি দেশের আর এক প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি আজ ঘোষণা করেছে, সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সমমনস্ক দলগুলিকে নিয়ে চলতি মাসেই পথে নামবে তারা। এই কর্মসূচি এবং দাবিকে সমর্থন জানিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার দলের পাশে দাঁড়িয়েছে হেফাজতে ইসলাম।
গত ৪ অগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন আদালত চত্বরে আইনজীবীদের উপরে হামলা, তাঁদের চেম্বার ভাঙচুর ও হত্যার চেষ্টার অভিযোগ ওঠে ১৪৪ জন আওয়ামী-পন্থী আইনজীবীর বিরুদ্ধে। ঢাকার নগর দায়রা আদালতে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয় গত ৬ ফেব্রুয়ারি। এর পরেই হাই কোর্ট থেকে দু’মাসের আগাম জামিন নেন ১১৫ জন আইনজীবী। আগামিকাল, সেই জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। আজ সকালে ৯৩ জন আইনজীবী আদালতে আত্মসমর্পণ করে ফের জামিনের আর্জি জানান। বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ ওই মামলার
শুনানি শুরু হয়। সরকার পক্ষের আইনজীবী জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করেন। ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম পরে জানান, দীর্ঘ শুনানির পরে নগর দায়রা বিচারক জ়াকির হোসেন গালিব ৯ জন আইনজীবীর জামিন মঞ্জুর করেন এবং বাকিদে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেন। জামিন পেয়েছেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির প্রাক্তন সভাপতি আবু সাঈদ সাগর এবং ৮ জন মহিলা আইনজীবী।
আদালতের এই নির্দেশ নিঃসন্দেহে আওয়ামী লীগের কাছে ধাক্কা বলেই মনে করেছে বাংলাদেশের ওয়াকিবহাল মহল। আজ সকালে আচমকাই ঢাকা শহরে ঝটিকা মিছিল বার করে হাসিনার দল। আওয়ামী লীগের নেতা শাহে আলম মোরাদের নেতৃত্বে সকাল ৭টা নাগাদ রায়তুল মোকারমের দক্ষিণ গেট থেকে আচমকা বিক্ষোভ মিছিল বার হয়। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মিছিলটি শেষ হয়। আওয়ামীর মিছিলটিতে জনসমাগম আজ অনেকেরই নজর কেড়েছে। বলা হচ্ছে, গত আট মাসে এত বড় মিছিল করেনি হাসিনার দল।
রাজনৈতিক তৎপরতা চলছে বিভিন্ন দলেও। আজ বৈঠকে বসেছিলেন বিএনপি নেতৃত্ব এবং তাদের সমমনস্ক দলগুলি। বৈঠকের পরে দলের তরফে জানানো হয়েছে, নির্বাচন নিয়ে সরকারের এক এক সময়ে এক এক রকম কথা বলছে, তাতে এক ধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। এতে রাজনৈতিক
অস্থিরতার পাশাপাশি, আরও অনেক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে। দেশ-বিদেশেও খারাপ বার্তা যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। আবার অনির্বাচিত সরকার বেশি দিন ক্ষমতায় থাকলে, তা জাতির জন্য একটি নেতিবাচক উদাহরণ। খুব তাড়াতাড়ি আনুষ্ঠানিক বৈঠকের মাধ্যমে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টির কৌশল নেওয়া হবে। সেখান থেকে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানানো হবে। ধীরে ধীরে কর্মসূচির তীব্রতা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপি এবং তার সহযোগীদের।
এ ছাড়াও, ভারতের সংসদে সদ্য পাশ হওয়া ওয়াকফ সংশোধনী বিলের সমালোচনা করেছে বিএনপি। বলা হয়েছে, এই আইনটি ভারতের মোট জনসংখ্যার ১৪%—অর্থাৎ প্রায় ২০ কোটি মুসলিমের বিরুদ্ধে অপব্যবহারের প্রচেষ্টা তৈরি করতে পারে। মুসলিমদের ধর্মীয় রীতি, অধিকার, সংস্কৃতি ও স্বার্থের সঙ্গে বিরোধে হতে পারে। ইসলামিক প্রতিষ্ঠানগুলির পরিচালনার ক্ষেত্রে একটি বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে এই আইন।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)