আঙ সান সু চি। —ফাইল চিত্র।
মায়ানমারে সেনা এবং সরকারের মধ্যে উত্তেজনা চরমে উঠল। সেনার হাতে আটক হলেন দেশের নেত্রী তথা স্টেট কাউন্সিলর (প্রধানমন্ত্রী পদের সমান) আউং সান সু চি। আটক করা হয়েছে সে দেশের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্তকেও। সোমবার ভোরে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে কোনও এক অজ্ঞাত জায়গায় রাখা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। দেশের প্রথম সারির রাজনীতিকদের অনেকেরই হদিশ মিলছে না।
কূটনীতিবিদদের একাংশের দাবি, সেনা অভ্যুত্থান ঘটেছে সে দেশে। সেই আশঙ্কাকে আরও বাড়িয়ে আগামী ১ বছরের জন্য দেশের দখল নেওয়ার কথা ইতিমধ্যেই জানিয়েছে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা মিয়াওয়াদি টিভি। এর আগে, ১৯৬২ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত, প্রায় পাঁচ দশক মায়ানমারে সেনা শাসন কার্যকর ছিল।
নভেম্বরের নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই দেশের সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে টানাপড়েন চলছিল। এ দিন আচমকাই পরিস্থিতির অবনতি ঘটে বলে সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)-র মুখপাত্র নমিয়ো ন্যুন্ত। তিনি বলেন, ‘‘দেশের মানুষকে বলব, উত্তেজনার বশে কিছু ঘটিয়ে ফেলবেন না। আইন মেনে চলুন।’’
যে কোনও মুহূর্তে তাঁকে গ্রেফতার করা হতে পারে বলেও ফোনে আশঙ্কা প্রকাশ করেন মিয়ো। প্রথম বার ফোনে কথা বলার পর দ্বিতীয় বার আর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি রয়টার্স। ভোর থেকে রাজধানী নেইপিদ-এর সমস্ত ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন। সেখানে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। সমস্যা রয়েছে ইন্টারনেটেরও। তাই এই মুহূর্তে রাজধানীতে কী পরিস্থিতি, তা জানা যাচ্ছে না। রয়টার্সের তরফে মায়ানমার সেনার মুখপাত্রের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি বলে জানা গিয়েছে।
নভেম্বরের ওই নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয় এনএলডি। তার পর সোমবারই দেশের সংসদের প্রথম অধিবেশন হওয়ার কথা ছিল। তার মধ্যেই এই ঘটনা। ইয়াঙ্গনে সিটি হল-সহ সর্বত্র সেনা মোতায়েন রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। যান্ত্রিক গোলযোগের জেরে কোনও খবর সম্প্রচার করতে পারছে না বলে নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়া পেজে জানিয়েছে সে দেশের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এমআরটিভি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনএলডি-র এক সাংসদ ফোনে রয়টার্সকে জানিয়েছেন, দলের কেন্দ্রীয় এগজিকিউটিভ কমিটির সদস্য হান থার মিন্তকেও আটক করা হয়েছে।
দীর্ঘ দেড় দশক বন্দিদশা কাটিয়ে ২০১৫ সালে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে দেশের নেত্রী নির্বাচিত হন নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী সু চি। কিন্তু দেশের পশ্চিমে রাখাইন প্রদেশ থেকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উচ্ছেদ এবং গণহত্যার অভিযোগে ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক মহলে সু চি-র ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যদিও দেশীয় রাজনীতিতে আগের মতোই জনপ্রিয়তা ছিল তাঁর। কিন্তু নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ ঘিরে সম্প্রতি আঙুল উঠতে শুরু করে তাঁর দিকে। দেশের নির্বাচন কমিশন যদিও সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু সংবিধান এবং আইন রক্ষার দায়িত্ব তাঁদের হাতেই বলে শনিবারই ঘোষণা করে সে দেশের সেনা। তার পর থেকেই অভ্যুত্থানের আশঙ্কা করা হচ্ছিল।
এই মুহূর্তে মায়ানমার সংসদের ২৫ শতাংশ আসনই সেনার জন্য সংরক্ষিত। সু চির সরকারে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিত্বও সংরক্ষিত তাদের জন্য। কিন্তু সে দেশের সেনা নাগরিক আইন মেনে চলে না বলে অভিযোগ করেছেন এশিয়া অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর ফর হিউম্যান রাইটস-এর অধিকর্তা জন সিফটন। মায়ানমার সেনা নেতৃত্বের উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা বসাতে জো বাইডেন সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে আমেরিকার সরকার। সু চি-সহ সব রাজনীতিকদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে বলে মায়ানমার সেনার কাছে দাবি জানিয়েছে তারা। অন্যথায় কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। হোয়াইট হাউস মুখপাত্র জেন সাকি একটি বিবৃতিতে বলেন, ‘‘সাম্প্রচিক নির্বাচনের ফল বদল অথবা মায়ানমারের গণতান্ত্রিক সরকারের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরির চেষ্টা বরদাস্ত করবে না আমেরিকা। সংযত না হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy