Advertisement
১৩ নভেম্বর ২০২৪
Bangladesh Unrest

‘একগুঁয়েমি, অহঙ্কার এবং অতি আত্মবিশ্বাসই পতনের মূলে, ঘরে-বাইরে একা হয়ে পড়েছিলেন মুজিব-কন্যা’

একক কর্তৃত্বের শাসনে সম্পূর্ণ ভাবে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল হাসিনার সরকার। শেষ পর্যায়ে ভূ-রাজনীতিতেও প্রায় একা হয়ে পড়েছিলেন তিনি। লিখলেন ‘দৈনিক প্রথম আলো’-র পলিটিক্যাল এডিটর কাদির কল্লোল।

Bangladesh Unrest

প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার ইস্তফার পরে বিজয়োল্লাস আন্দোলনকারীদের। সোমবার ঢাকায়। ছবি: পিটিআই।

কাদির কল্লোল
ঢাকা শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২৪ ০৮:৪১
Share: Save:

সাড়ে ১৫ বছর বাংলাদেশ শাসন করার পর শেখ হাসিনাকে বিদায় নিতে হল ‘একনায়ক’ হিসেবে। ছাত্র ও গণআন্দোলনের মুখে তাঁর শাসনের পতনের পিছনে একগুঁয়েমি, অহঙ্কার এবং অতি আত্মবিশ্বাসকেই অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

একক কর্তৃত্বের শাসনে সম্পূর্ণ ভাবে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল শেখ হাসিনার সরকার। পশ্চিমের দেশগুলিকে শত্রু বানিয়ে শেষ পর্যায়ে ভূ-রাজনীতিতেও প্রায় একা হয়ে পড়েছিলেন তিনি। অবশেষে দেশও ছাড়তে হল। সরকারি একাধিক সূত্র বলছে, পদত্যাগের আগে সোমবার দুপুরে তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই সুযোগ তাঁকে দেওয়া হয়নি।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ৩৬ দিন আগে শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা সরকার পতনের দাবি-আন্দোলনে রূপান্তরিত হওয়ার পরও শেখ হাসিনার সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর অবস্থানের কথা বলা হচ্ছিল। এমনকি, গত রবিবার আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ-সহ সহযোগী সংগঠনগুলোকে মাঠে নামিয়ে আন্দোলন প্রতিরোধের চেষ্টা করা হয়। তাতে সংঘর্ষে প্রায় ১০০ জনের প্রাণহানি ঘটে। এর পরও শক্ত হাতে তা দমনের কথা বলা হচ্ছিল। রবিবার সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গণভবনে শেখ হাসিনা ঘনিষ্ঠ কয়েক জন মন্ত্রী ও কর্মকর্তার সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতা জানিয়েছেন, চাপ বাড়লেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে তাঁদের ধারণা ছিল। কিন্তু সোমবার সকালে তাঁরা বুঝতে পারেন, সময় শেষ হয়ে গিয়েছে।

আসলে দেশের ভিতরে আওয়ামী লীগ একা হয়ে পড়েছিল। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও অর্থনীতির মন্দা পরিস্থিতিতে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল সাধারণ মানুষের। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের বাইরে অন্য সব দল কট্টর সরকার-বিরোধী অবস্থান নেয়। ফলে শেখ হাসিনা রাজনৈতিক দিক থেকে একা হয়ে পড়েন। আর শিক্ষার্থীরা যখন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলেন, সাংবাদিক বৈঠকে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন শেখ হাসিনা। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি ‘রাজাকার’ শব্দও ব্যবহার করেছিলেন। এরপরই আন্দোলন আরও জোরাল হয়। আর সেই আন্দোলন দমনে শক্তিপ্রয়োগই করেছিলেন তিনি।

অন্য দিকে, ভূ-রাজনীতিতে হাসিনা সরকার ভারতের উপর নির্ভরশীল হয়ে পর পর তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন করেও টিকে রয়েছে—এমন আলোচনা চলছিল অনেক দিন ধরেই। সরকার চিনের সঙ্গেও একটা সম্পর্ক রেখে চলছিল। গত ৭ জুলাই থেকে চিন সফরও করেছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু সেই সফরের ফল ভাল হয়নি। আমেরিকার সঙ্গেও টানাপড়েন অনেক দিনের। গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ওই টানাপড়েন আরও বেড়ে যায়। বিভিন্ন সময়ে শেখ হাসিনা এবং তাঁর নেতারা আমেরিকার কড়া সমালোচনাও করেন।

তবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ দেশের মানুষ এবং শিক্ষার্থীদের প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলে। এবং একেবারে একা হয়ে যায়।

এখন দেশ ছেড়ে গিয়েছেন শেখ হাসিনা। তবে আওয়ামী লীগের নেতাদেরই কেউ কেউ মনে করছেন, তিনি দেশ ছেড়ে নিজের এত দিনের রাজনৈতিক অর্জন ধ্বংস করলেন। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া দল আওয়ামী লীগের অস্তিত্বকেও দাঁড় করালেন প্রশ্নের মুখে।

(পলিটিক্যাল এডিটর, দৈনিক প্রথম আলো)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE