Aokigahara Jukai is Infamously Called As The Suicide Forest of Japan dgtl
japan
অমোঘ এক আকর্ষণে শয়ে শয়ে মানুষ আত্মঘাতী হন রহস্যময় এই জঙ্গলে
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০২০ ১১:৫৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
ঘন জঙ্গল। এখানে এত বেশি গাছ যে, একে বলা হয় গাছের সমুদ্র। কিন্তু সেই ঘন সবুজের নিঃসঙ্গতাকেই মানুষ বেছে নেয় শেষ শয্যা হিসেবে। দলে দলে মানুষ সেই অরণ্যে আত্মঘাতী হতে যায়। তাই আপাত ভাবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ওই ঠিকানার নাম ‘আত্মহত্য়ার অরণ্য’।
০২১৮
এই অরণ্য আছে জাপানে। আগ্নেয়পর্বত ফুজির উত্তর পশ্চিমে আওকিগাহারা অঞ্চলে সাড়ে ১৩ বর্গ মাইল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত সেই অরণ্য। পোশাকি নাম আওকিগাহারা জুকাই। প্রতি বছর জাপানের বিভিন্ন অংশ থেকে অসংখ্য মানুষ আসেন এই জঙ্গলে। চিরতরে হারিয়ে যেতে।
০৩১৮
এই অরণ্য এত ঘন যে, দীর্ঘ দিন মৃতদেহের কোনও খোঁজ পাওয়া যায় না। বেশির ভাগ সময়েই নিথর দেহগুলি শকুনের খাদ্যে পরিণত হয়। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর অন্তত ১০০ মানুষ এই জঙ্গলে মৃত্যুবরণ করেন। আসেন অবশ্য আরও অনেক বেশি। কেউ কেউ ফিরেও যান আত্মহত্যার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে।
০৪১৮
আত্মহত্যার ধারণা দেশবিশেষে পাল্টে যায়। নিজেকে শেষ করে দেওয়া কোনও দেশে পাপ, আবার কোথাও সেই ধারণা কার্যকর নয়। জাপান পড়ে এই দ্বিতীয় পর্যায়ে। উদীয়মান সূর্যের দেশে যখন সামন্ততন্ত্র ক্ষমতায়, তখন সামুরাইদের মধ্যে একটি প্রথা প্রচলিত ছিল।
০৫১৮
সেই প্রথায় নিজের জীবন শেষ করে দিত পরাজিত সামুরাই। সে সময় এই প্রথা ছিল গর্বের। এখন এই প্রথা দীর্ঘ দিন অবলুপ্ত। কিন্তু জনমানসে পুরনো ধারণার রেখা ক্ষীণ হলেও রয়ে গিয়েছে।
০৬১৮
অবস্থা পরিবর্তিত হলেও জাপানে আত্মহত্যার হার পৃথিবীতে সবথেকে বেশি। ২০০৮ সালে পৃথিবী জুড়ে আর্থিক মন্দার সময় জাপানে আত্মঘাতী হয়েছিলেন ২৬৪৫ জন। পরের বছর এই হার বেড়ে যায় ১৫ শতাংশ।
০৭১৮
কিন্তু কেন আত্মঘাতী হন জাপানিরা? মৃত্যুর কারণ হিসেবে প্রেমে বিচ্ছেদ এবং অন্যান্য পারিবারিক কারণ আছেই। তবে সবথেকে বেশি যে কারণে জাপানবাসী নিজেকে শেষ করে দেন, সেটা হল আর্থিক।
০৮১৮
প্রতি বছর জাপানে মার্চ মাসের চতুর্থ সপ্তাহে অর্থাৎ আর্থিক বছরের শেষে আত্মহত্যার হার সবথেকে বেড়ে যায়। ওই সময়ে সুইসাইড ফরেস্টেও আত্মহত্যার সংখ্যা বেড়ে যায়। আর্থিক নিরাপত্তা হারিয়েই আত্মহত্যা করেন জাপানিরা। সবথেকে বেশি আত্মঘাতী হন ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সি পুরুষরা।
০৯১৮
জাপান সরকারের তরফে বহু পদক্ষেপ করা হয়েছে আত্মহত্যার প্রবণতা কমাতে। সুইসাইড ফরেস্টে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। অরণ্যের বিভিন্ন অংশে সাইনবোর্ডে লেখা হয়েছে মনোবল বাড়ানোর মতো কথা।
১০১৮
কিন্তু কেন এই জঙ্গলকেই মৃত্যুর ঠিকানা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়? মনে করা হয়, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর হলেও ফুজি পর্বতের পাদদেশে এই বন জুড়ে ছেয়ে আছে গা ছমছমে ভাব। তা ছাড়া, এখানে ঢুকলে মনে হয় যেন বাইরের পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন। এই পরিবেশের জন্য আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষ একেই নিজের শেষ আশ্রয় করেন বলে মনে করা হয়।
১১১৮
প্রাচীন জাপানে ‘উবসুতে’ নামে এক প্রথা ছিল। সেখানে দুর্ভিক্ষের সময়ে পরিবারের বৃদ্ধ অথর্বদের রেখে আসা হত বাড়ি থেকে বহু দূরে প্রত্যন্ত কোনও নির্জন জায়গায়। সেখানেই তিলে তিলে মৃত্যুকে বরণ করে নিতেন তাঁরা। সেই প্রথা পালনের একটি গন্তব্য ছিল আওকিগাহারা জুকাই। সেই থেকে এই জঙ্গলের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে মৃত্যুর নিস্তব্ধতা।
১২১৮
এই জঙ্গলে সবথেকে বেশি মানুষ আত্মঘাতী হন গলায় ফাঁস লাগিয়ে। তার পরই আছে অতিরিক্ত পরিমাণে মাদকসেবন। নিয়মিত নজরদারি চালিয়েও বন্ধ করা যায়নি আত্মহত্যা। পুলিশ এবং স্বেচ্ছাসেবকরা জঙ্গল থেকে দেহ উদ্ধার ও শনাক্ত করে তা পরিবারের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
১৩১৮
আগে জাপান সরকার জানাত প্রতি বছর কতগুলি দেহ এই জঙ্গল থেকে উদ্ধার করা হচ্ছে। এখন এই পরিসংখ্যান দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে। যাতে জনমানসে আত্মহত্যার প্রবণতা কমে।
১৪১৮
এত কিছুর পরেও এই অরণ্যে মানুষের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়নি। বরং, আত্মহত্যার এই ঠিকানায় আবার চলে ক্যাম্পিংও। অনেকে হয়তো ঠিক করেছেন, নিজেকে শেষ করে দেবেন। কিন্তু চরম সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। তাঁরাও এখানে ক্যাম্প করে একা একা থাকেন। টহলদার ও নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন। বাড়িতে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করেন।
১৫১৮
লাভা মালভূমির এই জঙ্গলের উঁচু নিচু পাথুরে জমি ম্যাগনেটিক আয়রনে সমৃদ্ধ। ফলে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক, জিপিএস বা কম্পাস, কোনও কিছুই এখানে কাজ করে না। বনের মাঝপথে পৌঁছে ফিরে যাওয়ার জন্য সাহায্য চাইলেও তখন সে পথ বন্ধ হয়ে যায়।
১৬১৮
যেখানে সেখানে মানুষের দেহ, দেহাংশ পড়ে থাকা এই জঙ্গল অনেকের কাছেই ভৌতিক। আবার কিছু পর্যটকের কাছেই এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তবে পর্যটকদের প্রিয় গন্তব্যের মধ্যে এই জঙ্গল পড়ে না। জাপানি তথা বিশ্ব চলচ্চিত্র বা সাহিত্যে এই অরণ্য অনেক বার ঘুরে ফিরে এসেছে।
১৭১৮
ভৌতিক অপবাদ, নিথর দেহে হোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা, আতঙ্ক— সব পেরিয়ে কিছু পর্যটক তার পরেও আওকিগাহারা জুকাই জঙ্গলে পা রাখেন। প্রকৃতি আর বন্যপ্রাণকে উপভোগ করতে। তবে অভিজ্ঞ ট্রেকারদেরও বলা হয় একসঙ্গে থাকতে। যাতে এই ঘন সবুজে হারিয়ে না যান।
১৮১৮
জঙ্গলে ইতস্তত ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে মৃত্যুর দিকে পা বাড়িয়ে দেওয়া মানুষের শেষ মুহূর্তের সঙ্গী জিনিসগুলি। তবু মৃত্যুকে হারিয়ে নিসর্গই জয়ী হয় প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের কাছে।