বাংলাদেশে ধৃত হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাস। —ফাইল চিত্র।
সনাতনী নেতা চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারি নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যেই চিন্ময়-সহ ইসকনের সঙ্গে যুক্ত ১৭ জনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ়’ করার নির্দেশ দিল বাংলাদেশ সরকার। ৩০ দিনের জন্য অ্যাকাউন্টগুলি ‘ফ্রিজ়’ করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের আর্থিক গোয়েন্দা শাখা। চিন্ময়কৃষ্ণের গ্রেফতারি, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপরে নিপীড়নের প্রতিবাদ শুরু হয়েছে পশ্চিমি দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। আমেরিকার ধর্মীয় স্বাধীনতা কমিশনের প্রাক্তন কমিশনার জনি মুর দাবি করেছেন, মুহাম্মদ ইউনূস ব্যর্থ হচ্ছেন। এ-দিনও রাতে চট্টগ্রামে সংখ্যালঘুদের তিনটি ধর্মস্থানে হামলা চালায় জনতা।
ইসকনকে নিষিদ্ধ করার আর্জি গত কাল খারিজ করেছে বাংলাদেশ হাই কোর্ট। ধৃত সনাতনী নেতা ও ইসকনের প্রাক্তন কর্তা চিন্ময়কৃষ্ণ অবশ্য রয়েছেন জেলেই। রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় তাঁকে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করেছিল বাংলাদেশ পুলিশ। তার মধ্যেই ইসকনের সঙ্গে যুক্ত ১৭ জনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ়’ করার নির্দেশকে ঘুরপথে সনাতনীদের উপরে চাপ তৈরি করার চেষ্টা বলেই মনে করছে নানা শিবির।
চিন্ময়কৃষ্ণের গ্রেফতারি তথা বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিপীড়ন নিয়ে আজ সরব হয়েছেন আমেরিকার ধর্মীয় স্বাধীনতা কমিশনের প্রাক্তন কমিশনার জনি মুর ও ব্রিটিশ এমপি বব ব্ল্যাকম্যান।
মুরের মতে, স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস ব্যর্থ হচ্ছেন। কারণ, বাংলাদেশে এমন কোনও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নেই যারা বিপন্ন বোধ করছে না। মুরের মতে, “এটা কেবল সংখ্যালঘু নয়, গোটা বাংলাদেশের অস্তিত্বের সঙ্কট। সরকারের প্রথম কর্তব্য হল বিপন্নদের সুরক্ষা দেওয়া।” গোটা বিশ্বের খ্রিস্টান সম্প্রদায় চিন্ময়কৃষ্ণের পাশে আছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
আজ বিষয়টি নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সরব হন এমপি বব ব্ল্যাকম্যান। তিনি বলেন, “ইসকন ব্রিটেনের এলসট্রিতে ভক্তিবেদান্ত ম্যানর পরিচালনা করে। তারাই ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় হিন্দু সংগঠন। এই মুহূর্তে তাদের এক নেতা বাংলাদেশে হেফাজতে রয়েছেন।”
আজ চিন্ময়কৃষ্ণের গ্রেফতারি ও সংখ্যালঘুদের উপরে অত্যাচারের প্রতিবাদ জানিয়েছে কলকাতা ইসকন। আজ কলকাতার ইসকন মন্দিরে খোল-করতাল বাজিয়ে নামগানের মধ্যে দিয়ে এ সবের প্রতিবাদ জানানো হয়। প্রতিবাদকারী ভক্তদের হাতে ছিল বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড। সেগুলিতে লেখা ছিল ‘উই আর নট টেররিস্টস’। কলকাতা ইসকনের ভাইসপ্রেসিডেন্ট রাধারমন দাস বলেন, “বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপরে যাতে অত্যাচার না হয়, সে দেশে যাতে শান্তি ফিরে আসে এবং চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে যাতে মুক্তি দেওয়া হয়, সে জন্য আমরা প্রার্থনা করলাম। বাংলাদেশের হিন্দুদের পাশে আছি, এই বার্তাও দিলাম।”
অন্য দিকে গত কাল কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনে ‘বঙ্গীয় হিন্দু জাগরণ’ নামে সংগঠনের ‘হিংসাত্মক’ বিক্ষোভের কড়া সমালোচনা করেছে ইউনূস সরকার। তাদের বক্তব্য, বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ডেপুটি হাইকমিশনের সীমানায় পৌঁছে যায়। সেখানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ও বাংলাদেশ সরকারের মুখ্য উপদেষ্টা (মুহাম্মদ ইউনূস)-এর কুশপুত্তলিকা দাহ করে তারা। এই ধরনের ঘটনা রুখতে ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনগুলির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নয়াদিল্লিকে অনুরোধ করেছে ঢাকা।
সনাতনী হিন্দুদের বিক্ষোভের ফলে ত্রিপুরার ঊনকোটি জেলার মনু ল্যান্ড কাস্টম স্টেশন দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আমদানি রফতানি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রের দ্বারস্থ হয়েছেন ত্রিপুরার ব্যবসায়ীরা। তাঁদের বক্তব্য, চিন্ময়কৃষ্ণের গ্রেফতারির বিরুদ্ধে আন্দোলনকে তাঁরাও সমর্থন করেন। কিন্তু অন্য চেকপোস্ট দিয়ে আমদানি রফতানি চলছে। তবে কেবল মনু ল্যান্ড কাস্টম স্টেশন নিয়ে ব্যবসা বন্ধ করার অর্থ কী?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy