মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের বার্তা দেওয়া হয়েছিল আগেই। এ বার ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করার বার্তা দিল চিন। আর সেই প্রক্রিয়ার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ভারতীয় পণ্য আমদানি আরও বাড়ানোর কথা ঘোষণা করলেন নয়াদিল্লির চিনা রাষ্ট্রদূত জু ফেইহং!
গত বছর রাশিয়ায় চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিঙের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বৈঠকের পর থেকে ভারত এবং চিনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অগ্রগতি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ‘চিনের বাজারের জন্য উপযুক্ত ভারতীয় পণ্য’ আরও বেশি পরিমাণে আমদানি করা হবে বলে জানিয়েছেন ফেইহং। পাশাপাশি টাইম্স অফ ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পের শুল্কনীতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘‘চিন এবং ভারত যে কোনও আধিপত্যকামী পণ্যসুরক্ষা নীতির বিরোধী।’’
প্রসঙ্গত, ভারতের চিনা দূতাবাসের মুখপাত্র ইউ জিং গত সপ্তাহে ট্রাম্পের শুল্পনীতির বিরুদ্ধে নয়াদিল্লি-বেজিং ঐক্যের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সে সময় ফেইহং বলেছিলেন, ‘‘হিমালয়ের ও পারে আরও বেশি পরিমাণ ভারতীয় পণ্যকে স্বাগত জানাতে আমরা প্রস্তুত।’’ এ বার সরাসরি চিনা বাজারের উপযুক্ত ভারতীয় পণ্য অনুসন্ধানের আশ্বাস দিলেন তিনি, প্রসঙ্গত, কম দামি বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে শুরু করে বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামালের জোগানের বিষয়ে চিনের উপরে অনেকটাই নির্ভরশীল ভারতীয় সংস্থাগুলি। কিন্তু গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, চিন থেকে পণ্য আমদানি যে হারে বেড়েছে, সেই অনুপাতে সে দেশে রফতানি বাড়াতে পারেনি ভারত। উল্টে ২০২২ থেকে বাণিজ্য ঘাটতির ব্যবধান ক্রমশ বেড়ে চলেছে।
গত অর্থবর্ষে চিনের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় ৯৯২০ কোটি ডলার (প্রায় সাড়ে আট লক্ষ কোটি টাকা)! আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরামর্শদাতা সংস্থা গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (জিটিআরআই)-এর গত বছরের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছিল, চিনের কড়া নিয়ন্ত্রণ বিধি এবং অভ্যন্তরীণ বাজারের বিধিনিষেধের কারণেই ভারত রফতানি বাড়াতে পারছে না। ভারত-সহ কয়েকটি দেশের পণ্যের ক্ষেত্রে উঁচু হারে শুল্ক, কঠিন নিয়ন্ত্রণ বিধি, অভ্যন্তরীণ বাজারের সুরক্ষা বিধি রয়েছে চিনে।
তা ছাড়া, জিনপিঙের দেশে ভারতীয় রফতানি সংস্থার নথিভুক্তিতেই দু’-তিন বছর সময় লাগে। যেতে হয় কড়া পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে। একটি ব্যাচের পণ্যে সমস্যা থাকলেই সেই নথিভুক্তি বাতিলের আশঙ্কা থাকে। মূল বাধা এগুলিই। এই পরিস্থিতিতে আমেরিকার চাপে চিন ভারতীয় পণ্য আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ কিছুটা শিথিল করে নতুন ভাবে নয়াদিল্লির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিবিড় করতে চাইছে বলে মনে করা হচ্ছে। ফেইহং চলতি বছরে চিনে আয়োজিত শাংহাই কো-অপারেশন শীর্ষবৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আমন্ত্রণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, আলোচনার মাধ্যমে সীমান্ত সমস্যা সমাধানের পথে হাঁটছে দুই দেশ।