চিনের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি জ্যাক মা।—ফাইল চিত্র।
ই-কমার্স দুনিয়ার বেতাজ বাদশা তিনি। কোটি কোটি টাকার মালিক। সেই সঙ্গে আরও একটি পরিচয় রয়েছে আলিবাবা কর্ণধার জ্যাক মা-র। যা এতদিন লোকচক্ষুর আড়ালে ছিল, তিনি চিনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য। দলের মুখপত্র ‘পিপলস ডেইলি’-র তরফে সোমবার তা নিশ্চিত করা হল। তবে ঠিক কবে দলের সদস্যপদ গ্রহণ করেন জ্যাক, তা প্রকাশ করা হয়নি।আচমকা তাঁর সদস্যপদের বিষয়টি সামনে আনার প্রয়োজনই বা কেন পড়ল, উচ্চবাচ্য করা হয়নি তা নিয়েও। তবে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটাতে বেসরকারি সংস্থাগুলিকে পাশে পেতেই এমন পদক্ষেপ বলে দাবি বিশেষ়জ্ঞদের।
সোমবার ‘পিপলস ডেইলি’-তে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেশের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে এমন ১০০ জন দলীয় সদস্যের নাম প্রকাশ করা হয়। তাতে সামিল ছিল আলিবাবা কর্ণধারের নামও। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে জ্যাক মা-র। এশিয়ার বিভিন্ন দেশ, আফ্রিকা এবং ইউরোপের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনে ‘ওয়ান বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্প-এর সূচনা করেছেন প্রেসিডডেন্ট শি চিনফিং। তাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
জ্যাক মা-র কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হওয়া নিয়ে আলিবাবার তরফে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। তবে তিনি তাঁর রাজনৈতিক সংযোগ সংস্থার কাজকর্মে কোনও প্রভাব ফেলবে না বলে জানিয়েছে তারা। সংস্থার এক মুখপাত্র মঙ্গলবার সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানান, ‘‘সংস্থার কোনও আধিকারিক রাজনীতিতে যুক্ত হলেও সংস্থার ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তের উপর তার কোনও প্রভাব পড়বে না। দেশের সমস্ত নিয়ম-কানুন মেনে চলি আমরা। ডিজিটাল যুগে সকলে যাতে সহজে ব্যবসা করতে পারেন, সেই সুযোগ করে দেওয়াই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। ’’
আরও পড়ুন: ফিরল ভাগাড় আতঙ্ক, ফের রাতের অন্ধকারে হোটেল, রেস্তরাঁয় পৌঁছে যাচ্ছে মরা পশুর মাংস
১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসে চিনে অর্থনৈতিক সংস্কার শুরু হয়। যার আওতায় পুঁজিপতিদের দাবিয়ে রাখার চিরাচরিত কমিউনিস্ট ধ্যান ধারণা ছেড়ে বেরিয়ে আসার সঙ্কল্প নেওয়া হয়। তার পরিবর্তে স্থির হয়, বেসরকারি সংস্থাগুলিকে নিয়ে উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করা।এ বছর তার ৪০ বছর পূর্তি। সেই উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বেজিং। তাতে দেশের উন্নয়নে যোগদান করেছেন এমন ১০০ জনকে সম্মান জানানো হবে। সেই তালিকায় নাম রয়েছে জ্যাক মা-র। সম্মান জানানো হবে ‘টেনসেন্ট হোল্ডিংস লিমিডেট’-এর সিইও পোনি মা, ‘বৈদু আইএনসি’-র সিইও রবিন লি, বাস্কেটবল তারকা ইয়াও মিঙ এবং ভলিবল কোচ লাঙ পিঙকেও। এ ছাড়াও তালিকায় নাম রয়েছে বিজ্ঞানী, মহাকাশচারী এবং শিল্পীর। সাধারণ মানুষের জন্য তালিকাটি প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে কোনওরকম বদল চাইলে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে জানাতে হবে। যার পর বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখবে সরকার।
বর্তমানে চিনে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য সংখ্যা প্রায় ৮ কোটি ৯০ লক্ষ। দলের আদর্শ অনুযায়ী পুঁজিবাদী ব্যবসায়ীরা বরাবরই সেখানে ব্রাত্য। কিন্তু ২০১৩ সালে শি চিনফিং ক্ষমতায় আসার পর থেকে দূরত্ব কমতে শুরু করে দু’পক্ষের মধ্যে। প্রযুক্তি ক্ষেত্রে উন্নয়নের স্বার্থে বেসরকারি সংস্থাগুলিকে প্রাধান্য দিতে শুরু করেন তিনি। জ্যাক মা যদিও রাজনীতিতে আগ্রহ থাকার কথা কোনওদিনই স্বীকার করেননি। কিন্তু গত কয়েক বছরে একাধিকবার চিনফিংয়ের সমর্থনে মুখ খুলতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।অনলাইন দেশের নাগরিকদের গতিবিধির উপর নজর রাখা নিয়ে কম সমালোচনা সইতে হয়নি চিনফিং সরকারকে। কিন্তু ২০১৬ সালে তাতে সমর্থন জানান জ্যাক। অপরাধ দমন এবং দেশের নিশ্চিত করতে গোয়েন্দা সংস্থার হাতে যাবতীয় তথ্যের নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দেন তিনি।
৩৮৪০ কোটি মার্কিন ডলারের মালিক জ্যাক মা চিনের সবচেয়ে ধনী মানুষ। ই-কমার্সের বাইরেও নানা ক্ষেত্রে রীতিমতো পসার জমিয়ে ফেলেছে তাঁর সংস্থা আলিবাবা। চলতি বছরে শেয়ার বাজারে ধ্বস নামলেও, সংস্থার উপর তার বিশেষ প্রভাব পড়েনি। এই মুহূর্তে তাদের মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৪০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। পৃথিবীর সেরা ১০ সংস্থার মধ্যে অন্যতম সেটি।
আরও পড়ুন: আসল-নকলের ফারাক বোঝা দায়! দু’হাজার টাকার প্রচুর জাল নোট ধরে অবাক গোয়েন্দারা!
তবে জ্যাক মা-ই কমিউনিস্ট পার্টির একমাত্র কোটিপতি সদস্য নন। রিয়েল এস্টেট টাইকুন জু জিয়াইন এবং ওয়ান্ডা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ওয়াঙ জিয়ানলিনের মতো কোটিপতি ব্যবসায়ীও তাদের সদস্যপদ গ্রহণ করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy