Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
afghanistan

পরিচয়পত্রে এ বার থাকবে মায়েরও নাম, বদল আফগান আইনে

নিমন্ত্রণপত্রটা হাতে নিয়ে স্থির থাকতে পারেননি হেরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক, ২৮ বছর বয়সি লালে ওসমানি। সোশ্যাল মিডিয়ার সামনে প্রশ্নটা রাখেন— #হোয়্যারইজ়মাইনেম। 

আন্দোলনকারী লালে ওসমানি

আন্দোলনকারী লালে ওসমানি

সংবাদ সংস্থা
কাবুল শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:১২
Share: Save:

এক সন্ধ্যায় একটি নিমন্ত্রণপত্র এসে পৌঁছেছিল বাড়িতে। প্রখ্যাত এক লেখকের মৃতা স্ত্রীর স্মরণে অনুষ্ঠান। কিন্তু যাঁর স্মৃতিতে অনুষ্ঠান, লেখকের সেই জীবনসঙ্গিনীর নাম একবারের জন্যেও উল্লেখ নেই কার্ডে!

বছর তিনেক আগে আফগানিস্তানের ঘটনা। এই দেশে এ ঘটনা অবশ্য অচেনা নয়। বিয়ের কার্ড কিংবা কবর, মেয়েদের নাম থাকে না কোথাও। এখানে মেয়েদের পরিচয় শুধুই— কারও মা, কারও মেয়ে, কারও বোন কিংবা কারও স্ত্রী। তবু নিমন্ত্রণপত্রটা হাতে নিয়ে স্থির থাকতে পারেননি হেরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক, ২৮ বছর বয়সি লালে ওসমানি। সোশ্যাল মিডিয়ার সামনে প্রশ্নটা রাখেন— #হোয়্যারইজ়মাইনেম।

তিন বছর আগে ওসমানির তোলা সেই প্রশ্নের ‘জবাব’ মিলেছে অবশেষে। আফগান তরুণীর দাবি ছিল, জাতীয় পরিচয়পত্রে বাবার পাশাপাশি মায়ের নামও থাকতে হবে। প্রস্তাব গ্রহণ করেছে আফগান সরকার। গত সপ্তাহে জনগণনা আইন সংশোধন করেছে তারা। তবে এখনও পার্লামেন্টে নয়া আইন পাশ হওয়া বাকি। সরকারি সূত্রের খবর, গ্রীষ্মের ছুটির শেষে পার্লামেন্ট চালু হলেই সেটাও হয়ে যাবে।

তবে মাঝের তিনটে বছর খুব মসৃণ ছিল না। ওসমানির সেই প্রশ্নে ঝড় ওঠে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সরব হন দেশবিদেশের লোক। আফগান তরুণীর কথায়, ‘‘দেশের জনগণনা আইন বিশেষ করে সেই সব মেয়েকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য, যাঁরা স্বামীবিচ্ছিন্না, যাঁরা যুদ্ধে স্বামীকে হারিয়েছেন কিংবা যাঁদের স্বামী নিখোঁজ। সম্পত্তির অধিকার কিংবা অভিভাবকত্ব, সবেতে কেন বঞ্চিত থাকবেন তাঁরা! কেন বাবার অনুপস্থিতিতে মা তাঁর সন্তানের পাসপোর্ট পর্যন্ত করাতে পারবেন না!’’ অনেকেই ওসমানির পাশে দাঁড়ান, বিরোধিতাও করেন অনেকে। কারণ যে দেশে মেয়েদের নাম মুখে আনাও ‘অশালীন’, সে দেশে পরিচয়পত্রে মেয়েদের নাম ‘সমাজবিরোধী’।

আফগান পার্লামেন্টের ২৫০ সদস্যের মধ্যে ৬৮ জন মহিলা। কিন্তু এঁদের অনেকেই এখনও সন্তানের ‘অভিভাবক’ হতে পারেননি। স্বামীর অনুপস্থিতিতে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে পারেন না পর্যন্ত!

যুদ্ধবিরতি, মার্কিন সেনা সরানো ইত্যাদি বিষয়ে শীঘ্রই তালিবানের সঙ্গে শান্তি-বৈঠকে বসতে চলেছে আফগান সরকার। তার মাঝে আইন সংশোধন যারপরনাই উল্লেখযোগ্য। পাঁচ বছরের শাসনে মেয়েদের পড়াশোনা, চাকরি, সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল তালিবান। আফগান স্বেচাসেবী সংগঠন ‘উইমেন নেটওয়ার্ক’-এর চেয়ারপার্সন মেরি আকরামির কথায়, ‘‘ওসমানির চেষ্টা এবং সরকারের পদক্ষেপ— দুই-ই উল্লেখযোগ্য। মেয়েরা এখানে জন্ম থেকে পর্দার আড়ালে, মৃত্যুর পরেও আড়ালে থেকে যায়।’’

তবে আইন সংশোধন, আর সমাজ সংশোধনে ফারাক বিস্তর। ইরফান তালাশ নামে এক স্কুল পড়ুয়ার বিদ্রুপ, ‘‘এটাই যেন আফগানিস্তানের একমাত্র সমস্যা ছিল!’’ আন্তর্জাতিক কূটনীতি বিশেষজ্ঞ নাসরাতুল্লাহ হকপালের আবার বক্তব্য, ‘‘এ সব আসলে ইউরোপ আর আমেরিকাকে খুশি করার কৌশল।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Afghanistan Identity
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE