মৃত্যুর এত বছর পরে আইএস জঙ্গিদের সহায় হয়ে উঠলেন হিটলার! —ফাইল চিত্র।
পৃথিবীর কাছে এক সময় ত্রাস ছিলেন তিনি। সাত-আট দশক আগের কথা। তাঁর সাম্রাজ্য বিস্তারের নীতি আর যুদ্ধের জিগির দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে উঠেছিল। যুদ্ধে শোচনীয় পরাজয়ের মুখ দেখার পর আত্মঘাতী হন তৎকালীন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাডল্ফ হিটলার। সে-ও ৭১ বছর আগের কথা। কিন্তু এত দিন পরে দেখা যাচ্ছে হিটলার অতীত নন। বর্তমান পৃথিবীর ত্রাস আইএস-এর অন্যতম বড় ভরসা তিনি। আইএস-এর অন্যতম অস্ত্র সরবরাহকারী এখন হিটলারই!
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সামরিক ঘাঁটি তৈরি করেছিল হিটলারের জার্মানি। মিত্রশক্তির গতিবিধি রুখে দেওয়ার জন্য কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থানে মজুত করা হয়েছিল অস্ত্রশস্ত্র, বিস্ফোরক। তেমনই একটি এলাকা ছিল বর্তমান লিবিয়া এবং উত্তর সুদানের সঙ্গে মিশর সীমান্ত লাগোয়া সাহারা মরুভূমি অঞ্চল। অ্যাডল্ফ হিটলারের বাহিনী মাইন ফিল্ড তৈরি করেছিল সেখানে। মরুভূমির বালিতে পুঁতে রাখা হয়েছিল অজস্র মাইন। লোহিত সাগর এবং ভূমধ্যসাগরকে ব্যবহার করে মিশর তথা আফ্রিকার বাকি অংশে মিত্র বাহিনী যাতে অবাধ যাতায়াত করতে না পারে, সেই জন্যই সাহারা মরুভূমিতে ওই মাইন ফিল্ড তৈরি করিয়েছিলেন হিটলার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সাত দশক আগে শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু হিটলার বাহিনীর পুঁতে রাখা হাজার হাজার মাইন সাহারা মরু থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়নি। সেই মাইনফিল্ডকে এ বার দু’রকম ভাবে কাজে লাগাচ্ছে আইএস। প্রথমত, তারা হিটলারের মাইনকে বিস্ফোরক হিসেবে ব্যবহার করছে। দ্বিতীয়ত, মাইনফিল্ডকে মিশরে নিজেদের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ব্যবহার করছে আইএস জঙ্গিরা।
হিটলারের মাইন কী ভাবে বাড়াচ্ছে আইএস অস্ত্রাগার?
মিশরের সেনাবাহিনী সূত্রের খবর, মরুভূমির বালি খুঁড়ে হিটলারের মাইন তুলছে আইএস জঙ্গিরা। তার পর সেই মাইনকে বিস্ফোরক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। মাইন দিয়ে ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইজ (আইইডি) তৈরি করা হচ্ছে। মাইন ফিল্ড সাফ করার দায়িত্বে ছিলেন এমন এক প্রাক্তন মিশরীয় আধিকারিক একটি মার্কিন পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘ওই বিস্ফোরক কত বছরের পুরনো সে সবে আইএস-এর কিছুই যায় আসে না। বিস্ফোরণ ঘটানো গেলেই আইএস-এর কাছে তার দাম আছে।’’ তাই সাহারা মরুভূমি খুঁড়ে জঙ্গিরা তুলে আনছে হিটলার বাহিনীর মাইন। সেই মাইন দিয়ে আইইডি বানিয়ে মিশরেই নানা জায়গায় নাশকতা চালাচ্ছে তারা। গত কয়েক মাসেই ওই সব পুরনো মাইন ব্যবহার করে হামলা চালানোর অন্তত ১০টি ঘটনা ঘটেছে। আর গত ১০ বছরের হিসেব ধরলে, হিটলারের মাইন মিশরে অন্তত ১৫০টি প্রাণ নিয়েছে। মিশরের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর, গত মার্চে লোহিত সাগরের কাছে আইএস-এর মাইন হামলার শিকার হয়েছে সে দেশের সেনাও।
হিটলারের মাইন ফিল্ড আইএস-এর নিরাপদ আশ্রয় হয়ে উঠছে কী ভাবে?
মাদক এবং অস্ত্রশস্ত্রের চোরাকারবার আইএস-এর আয়ের অন্যতম প্রধান পথ এখন। সাহারা মাইন ফিল্ডের মধ্যে দিয়েই এখন সেই চোরাকারবার চালাচ্ছে জঙ্গিরা। লিবিয়া হয়ে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে মাদক ও অস্ত্রশস্ত্র ছড়িয়ে দেয় আইএস। কিন্তু লিবিয়া পর্যন্ত পৌঁছনর জন্য তাদের মিশরে ঢুকতেই হয়। সেই কাজে বড় বাধা মিশরের সেনাবাহিনী। সেই বাধা এড়াতেই লিবিয়া এবং সুদানের সঙ্গে মিশরের সীমান্ত লাগোয়া অঞ্চল দিয়ে জঙ্গিরা যাতায়াত করে। কারণ ওই সব অংশেই হিটলারের মাইন ফিল্ড রয়েছে। বিস্ফোরণ ঘটার আশঙ্কা থাকায় সেখান সেনা টহল দেয় না। আইএস জঙ্গিরা সেই সুযোগ নিয়ে, স্থানীয় গাইডদের সাহায্যে মাইন ফিল্ডের মধ্যে দিয়ে পথ খুঁজে যাতায়াত করে।
আরও পড়ুন: ভারতের বিরুদ্ধে পরমাণু যুদ্ধের হুঁশিয়ারি, নিয়ন্ত্রণ রেখা মুছে দেওয়ার ডাক
মিশরের সরকার এবং সেনা আইএস-এর এই গতিবিধি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। কিন্তু মৃত্যুর ৭১ বছর পরেও হিটলার যে ভাবে আইএস জঙ্গিদের সহায় হয়ে উঠেছেন, তাতে মিশরের সেনাবাহিনী কিছুটা অসহায়। সাহারার বালি খুঁড়ে সব মাইন সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মিশরের সরকার। সেনাকে তার জন্য তিন বছর সময় দেওয়া হয়েছে। তবে আইএসের গতিবিধি ওই সব এলাকায় যতটা বেড়েছে, তাতে সে কাজ খুব সহজ হবে না বলেই মিশরীয় বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy