অস্থায়ী শিবির ছেড়ে ফের অন্যত্র আশ্রয় খোঁজার পথে প্যালেস্টাইনি নাগরিকেরা। ছবি রয়টার্স।
আরও এক বার নিরীহ প্যালেস্টাইনি নাগরিকদের আশ্রয় শিবিরকে নিশানা করল ইজ়রায়েলি সামরিক বাহিনী। গাজ়া ভূখণ্ডের হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, আজ ভোরের দিকে দের আল-বালা এলাকার একটি মসজিদ এবং একটি স্কুলে ইজ়রায়েলি বাহিনীর বোমাবর্ষণে অন্তত ২৬ জন নিরীহ নাগরিকের মৃ্ত্যু হয়েছে। আল-আকসা শহিদ নামে ওই মসজিদ এবং ইবন রুশদ স্কুলে চলা ওই হামলায় আহতের সংখ্যা অসংখ্য।
রাষ্ট্রপুঞ্জ-সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের অনুরোধ উপেক্ষা করে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সরকার এখনও গাজ়ায় বসবাসকারী সাধারণ মানুষের বাসস্থান এবং আশ্রয় শিবিরে হামলা অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রকের মুখপাত্র। সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া কিছু ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, ইজ়রায়েলি বাহিনীর হামলার পরে মসজিদের ধ্বংসস্তূপে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে রক্তাক্ত মৃতদেহ। স্কুল বাড়ি থেকে স্ট্রেচারে করে বার করে আনা হচ্ছে গুরুতর জখম প্যালেস্টাইনি নাগরিকদের। ইজ়রায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর থেকে স্কুল ভবন, মসজিদ এবং হাসপাতালগুলি কার্যত ঘর-ছাড়া প্যালেস্টাইনি বাসিন্দাদের আশ্রয় শিবিরে পরিণত হয়েছে। আর সেখানেই লাগাতার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইজ়রায়েলি বাহিনী।
তবে গাজ়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অভিযোগ উড়িয়ে ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, হামাসের সামরিক বাহিনীর কমান্ডার এবং সদস্যেরা ওই মসজিদ এবং স্কুল বাড়ি থেকে তাদের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর ছক কষছিল। তাই হামাস বাহিনীর বিরুদ্ধে সেখানে অভিযান চালিয়েছে তাদের বাহিনী। হামাস অবশ্য স্কুল, হাসপাতাল বা মসজিদ থেকে তাদের অভিযান চালানোর কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করে আসছে। গাজ়ার উত্তরাংশে জাবালিয়া এলাকায় হামাস ফের নতুন করে নিজেদের সংগঠিত করে তাদের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে বলেও অভিযোগ ইজ়রায়েলের। তাই জাবালিয়া এলাকা থেকে সাধারণ মানুষকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে তারা। যে কোনও মুহূর্তে ওই এলাকায় বোমাবর্ষণ শুরু হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। সেই সঙ্গে তারা এ-ও জানিয়েছে যে, সাধারণ মানুষের পালানোর পথ-রেখাও তারা তৈরি করে রেখেছে। সাধারণ প্যালেস্টাইনি নাগরিকদের উপরে আকাশ হামলার প্রভাব যতটা সম্ভব কম যাতে পড়ে, সেই চেষ্টাই তারা সর্বক্ষণ করে আসছে বলে দাবি ইজ়রায়েলি বাহিনীর।
আগামী কাল ৭ অক্টোবর। ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে হামাসের হামলা ও তার পরবর্তী যুদ্ধ পরিস্থিতির এক বছর পূর্ণ হতে চলেছে। এই অবস্থায় ইজ়রায়েল জুড়ে চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ইজ়রায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি আজ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আগাম সতর্কতা হিসেবে অতিরিক্ত বাহিনী ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা মোতায়েন রাখছেন তাঁরা।
গাজ়ার পাশাপাশি লেবাননের রাজধানী বেরুটের দক্ষিণ শহরতলিতেও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা জারি রেখেছে ইজ়রায়েল। ওই এলাকা থেকে সাধারণ মানুষকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইজ়রায়েলি বাহিনী। আজ ভোর রাত থেকে টানা প্রায় আধ ঘণ্টা ওই এলাকায় আকাশ হামলা চালিয়েছে ইজ়রায়েল। একটি প্যালেস্টাইনি আশ্রয় শিবিরেও বোমা এসে পড়ে। হতাহতের সংখ্যা স্পষ্ট নয়।
গত কয়েক দিনের অভিযানে তারা হিজ়বুল্লার অন্তত ৪০০ কমান্ডারকে হত্যা করেছে বলে দাবি করেছে ইজ়রায়েল। যদিও লেবাননের অভ্যন্তরে ইজ়রায়েলের স্থল অভিযানের কড়া সমালোচনা করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ। আমেরিকার দেওয়া সামরিক সাহায্য যাতে নিরীহ প্যালেস্টাইনিদের বিরুদ্ধে নেতানিয়াহু সরকার ব্যবহার করতে না পারে, সেই আর্জিও জানিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। এই সঙ্কটে লেবাননের পাশে দাঁড়ানোয় মাকরঁর সমালোচনায় মুখর নেতানিয়াহু। তবে লেবাননের সাধারণ মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি। সে দেশের প্রেসিডেন্ট ইতিমধ্যেই ১০ কোটি ডলার ত্রাণ প্যাকেজের কথা ঘোষণা করেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় ৪০ টন ওষুধ তারা লেবাননের উদ্দেশে বিমানে রওনা করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy