Advertisement
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Bangladesh Unrest

ভ্রাতৃত্ব নিয়ে প্রত্যয়ী চট্টগ্রামের মাজ়েদ

চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানা এলাকায় বাংলাদেশের সব থেকে বড় মাদ্রাসা। উত্তরপ্রদেশের দেওবন্দের পরে এত বড় মাদ্রাসা বিশ্বে কোথাও নেই। হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্রেরও স্থানীয় কালীমন্দির রক্ষায় বুক পেতে দাঁড়িয়েছেন।

মাজেদ বিন ওয়াহিদ।

মাজেদ বিন ওয়াহিদ। —নিজস্ব চিত্র।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২৪ ০৯:১০
Share: Save:

কোটা আন্দোলনে জয়ের পটভূমিতে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা হাতে খুশিতে ভাসছিলেন চট্টগ্রামের মাজ়েদ বিন ওহিদ। আর সোমবার শেখ হাসিনার পতনের কয়েক ঘণ্টা পরেই অন্য রকম দায়িত্বশীল ভূমিকায় দেখা গেল তাঁকে।

চট্টগ্রাম শহরের অনতিদূরে হাটহাজারী এলাকার একটি মসজিদে সান্ধ্য এশার নমাজের পরে মাজ়েদের একটি ভিডিয়ো এখন ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে মাইক হাতে স্থানীয় মানুষের উদ্দেশে কথা বলছেন তিনি— “সম্মানিত এলাকাবাসী, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আপনাদের অনুরোধ করা যাচ্ছে যে, দেশের এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখি। এবং পরাজিত কুচক্রী মহলের হাত থেকে প্রত্যেক সংখ্যালঘু, সনাতন ধর্মী এবং জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া আমার আপনার এবং সকলেরই কর্তব্য। আমরা যেন সচেতন থাকি।” অশান্ত বাংলাদেশে শান্তির প্রলেপ বয়ে এনে এই মাজ়েদই অনেকের কাছে মানবিক বাংলাদেশের মুখ।

কোটা আন্দোলনের পটভূমিতে সমাজমাধ্যমে বেশ কয়েক দিন ধরেই সরব ছিলেন চট্টগ্রামের তরুণ ব্লগার মাজ়েদ। বুধবার দুপুরে হোয়াটসঅ্যাপ কলে হাটহাজারী থেকে মাজ়েদ বলছিলেন, “আমি তো চট্টগ্রামের ভালমন্দ খাবার বা দ্রষ্টব্য স্থানগুলি নিয়ে ভিডিয়ো করি। কোটা আন্দোলনে স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধেই ফেসবুকে লিখছিলাম। আগে কোনও ভিডিয়ো এত সাড়া পায়নি। বাংলাদেশ থেকে ভারত, কত অজানা মানুষের ধন্যবাদ পেয়ে আপ্লুত।”

চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানা এলাকায় বাংলাদেশের সব থেকে বড় মাদ্রাসা। উত্তরপ্রদেশের দেওবন্দের পরে এত বড় মাদ্রাসা বিশ্বে কোথাও নেই। হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্রেরও স্থানীয় কালীমন্দির রক্ষায় বুক পেতে দাঁড়িয়েছেন। আর হাটহাজারীর মীরের হাটে চন্দ্রপুর গ্রামের হক সাহেব পাড়া মসজিদ থেকে কথা বলছিলেন মাজ়েদ। চট্টগ্রামের ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজে বি-কম পাশ। সমগ্র কোরান কণ্ঠস্থ করা হাফেজ় লেখালিখি করেন। হাটহাজারী পুর এলাকায় আতর, প্রসাধনীর ছোট দোকানও চালান।

হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে জয়ের আনন্দে এ দিন তিনি এক নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নের কথাও ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন। মাজ়েদ বলছিলেন, “আমরা আশাবাদী, নতুন বাংলাদেশে সার্বভৌমত্ব তো থাকবেই! সেই সঙ্গে গান, বাজনা, সঙ্গীত, তাল, আবার কোরানও থাকবে। হিন্দু, মুসলিম সবাই বিচার পাবে, ইনশাল্লাহ! নতুন জমানায় বাক-স্বাধীনতাও ফিরবে।”

কিন্তু বহু প্রতীক্ষিত জয়ের পরেই শান্তি বার্তা কেন দিতে হল? মাজ়েদের ব্যাখ্যা, “একটা কুচক্রী মহল বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টাতেও সক্রিয়। সব দেশেই এমন হয়! তাদের সঙ্গে নিরন্তর লড়াইও চালাতে হবে।” তিনি মনে করেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ক্ষোভেই বঙ্গবন্ধুর স্মারকের প্রতি তাৎক্ষণিক আক্রোশ তৈরি হয়েছে।

অশান্তি আঁচ করে নিজেদের এলাকায় ৬-৭ জনের কমিটি গড়েন মাজ়েদরা। ঠিক হয়, নমাজ শেষে মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা করা হবে। তিনি বলছিলেন, “স্থানীয় সেলুনে আমার ক্ষৌরকার বন্ধু ইমন দাসও সোমবার রাতে কিছুটা ভয় পেয়ে ফোন করেছিলেন। ওঁরও নিয়মিত খবর নিচ্ছি। আমাদের গ্রামে কখনও হিন্দু, মুসলিমে ঝামেলা লাগেনি। এ বারও কিছু হতে দেব না।"

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE