খালেদা জিয়া। —ফাইল চিত্র।
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভির নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির একাংশ ভারত-বিরোধী জিগির তুলে ঢাকায় ‘ভারতীয় পণ্য বয়কট’-এর সক্রিয় সমর্থনে মাঠে নামল। তবে দলের একটি বড় অংশই তাঁর এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছে।
বুধবার দুপুরে একটি চাদর হাতে নিয়ে হঠাৎই বিএনপি দফতরের দোতলা থেকে রিজভি নীচে নেমে আসেন। তার পরে সাংবাদিকদের বলেন, “বাংলাদেশকে স্যাটেলাইট রাষ্ট্রে পরিণত করেছে ভারত। আওয়ামী লীগের দুই মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং হাছান মাহমুদ সম্প্রতি স্বীকার করেছেন, ভারতের সহযোগিতাতেই তাঁরা বারে বারে অবৈধ ভাবে ক্ষমতায় এসেছেন। রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদ লঙ্ঘন করে বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ করছে দিল্লির শাসকেরা। সে জন্য দেশের মানুষ ভারতের বিরুদ্ধে উত্তাল। সচেতন মানুষ বলছেন, ভারতীয় পণ্য কিনলে তা বুলেট হয়ে জনগণের রক্ত ঝরাচ্ছে।” এর পরই রিজভি হাতের চাদরটি রাস্তায় ছুড়ে দিয়ে বলেন, “এই ভারতীয় পণ্য ছুড়ে ফেলে দিয়ে আমিও আন্দোলনে শামিল হলাম।” তিনি দাবি করেন, বিএনপি এবং সমমনা ৬৩টি দলকে নিয়ে যে জোট নির্বাচন বয়কট করেছিল, তাদের প্রতিনিধি হয়েই তিনি এই আন্দোলনে শামিল হয়েছেন।
তবে রিজভির কাণ্ডে প্রশ্ন উঠেছে দলের মধ্যেই। দিন কয়েক আগে দলের নীতি নির্ধারক ‘স্থায়ী কমিটি’-র সদস্য আব্দুল মইন খান ভারতের প্রতি আবেদন জানান, তারা যেন ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লড়াইয়ে’ পাশে থাকেন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে যে ভাবে ভারতকে পাশে পাওয়া গিয়েছিল, ‘গণতন্ত্রের লড়াই’-য়েও ভারতের সেই ভূমিকা চান প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা মইন খান। রিজভিও এই স্থায়ী কমিটির নেতা। সেই কমিটির সদস্যরা বলছেন, ভারতের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আন্দোলনের আলোচনাটুকুও কখনও হয়নি। তা হলে কার নির্দেশে রিজভি এই কাজ করলেন? মইন খান না রিজভি, কার কথা দলের সিদ্ধান্ত বলে মানা হবে? দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির প্রধান আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী রিজভির পদক্ষেপ সম্পর্কে মন্তব্য করতে চাননি।
বিএনপির এক নেতা জানান, এ দিন রিজভি যে এই কাণ্ডটি করবেন তা কেউ বুঝতেও পারেননি। অনেকের ধারণা, লন্ডনে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর আশ্রয়ে থাকা ফেরার বিএনপি নেতা তারেক রহমানের নির্দেশেই রিজভি দলে সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা না করে ভারত-বিরোধী জিগির তুলে ভারতীয় পণ্য বয়কটে শামিল হলেন। নিজে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য হয়েও এর আগে রিজভি বিভিন্ন সময়ে ভারত-বিরোধী জিগির তুলেছেন। এর পিছনেও তারেকের নির্দেশ মানায় তাঁর বাধ্যবাধকতাই কারণ ছিল বলে বলছেন দলের একাংশ। এমনকি ফি বার নির্বাচনে নামার প্রস্তুতির পরেও শেষ মুহূর্তে তা বয়কটের সিদ্ধান্ত দলকে নেওয়ানোর পিছনেও রিজভির হাত থাকার কথা বলছেন তাঁরা। সেই সিদ্ধান্তও আসলে তারেকের, যিনি আশঙ্কা করেন এক দল নেতা সাংসদ হয়ে গেলে দলের নিয়ন্ত্রণ তাঁর হাতের বাইরে চলে যাবে।
‘গণতন্ত্রের আন্দোলনে’ বিএনপির শরিক বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, “বিএনপি যদি কোনও আলোচনা ছাড়া আমাদের নাম করে কোথাও সংহতি জানায়, সেটা অপরাধ। আশা করব তারা এই অপরাধ থেকে বিরত থাকবে।” আর এক শরিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “ভারতের ভূমিকার জন্য মানুষ ক্ষুদ্ধ, এটা সত্য। কিন্তু বিএনপি এই কাজের আগে আমাদের সঙ্গে কথাটুকুও বলেনি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy