A long lost perfume, discovered underwater get a new life after 150 years dgtl
Shipwreck
Perfume: ডুবে যাওয়া জাহাজ থেকে পুনর্জন্ম হল রানি ভিক্টোরিয়ার দেড়শো বছরের পুরনো সুগন্ধীর
এই সুগন্ধীর সন্ধান পাওয়া এবং তার পর তা থেকে নতুন করে ফের সেই একই সুগন্ধী প্রস্তুত করা সহজ ছিল না।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১০:৩৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৪
রানি ভিক্টোরিয়া নাকি এই সুগন্ধী ব্যবহার করতেন। সমুদ্রের তলায় জাহাজের ধ্বংসাবশেষ থেকে উদ্ধার হওয়া ১৪৭ বছরের পুরনো ওই সুগন্ধীর পুনর্জন্ম হয় ২০১৪ সালে। আজও রমরমিয়ে বিক্রি হচ্ছে সেই সুগন্ধী। এই সুগন্ধীর সন্ধান পাওয়া এবং তার পর তা থেকে নতুন করে ফের সেই একই সুগন্ধী প্রস্তুত করা সহজ ছিল না। সুগন্ধী বিশেষজ্ঞ ইসাবেল রামসে ব্রাকস্টোনের সেই যাত্রা সত্যিই একটি কাহিনি।
০২১৪
২০১১ সালে বারমুডা দ্বীপ একটি বড় ঝড়ের প্রকোপে পড়েছিল। ঝড় থেমে যাওয়ার পর ওই দ্বীপের তদারকির দায়িত্বে থাকা বাহিনী দ্বীপের চারপাশ ঘুরে দেখার সময়ই ডুবুরির একটি দল সমুদ্রের তলায় একটি জাহাজের ভাঙা অংশের খোঁজ পায়।
০৩১৪
ম্যারি সেলেস্টিয়া। জাহাজের ধ্বংসস্তূপের গায়ে এই নামটাই লেখা ছিল। জানা যায়, ১৮৬৪ সালে উত্তর ক্যারোলিনা যাওয়ার সময় ডুবে গিয়েছিল জাহাজটি। এই জাহাজের ভিতর থেকে বেশ কিছু পুরনো জিনিস উদ্ধার হয়। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে খোঁজ চালানোর পর জাহাজের ভিতর থেকে জুতো, মদের বোতল, এবং দু’টি সুগন্ধীর ছোট বোতলও পাওয়া যায়। জিনিসগুলি একসঙ্গে একটি বাক্সের মধ্যে রাখা ছিল।
০৪১৪
সুগন্ধীর দু’টি বোতলের গায়েই ‘পিসে অ্যান্ড লুবিন লন্ডন’ লেখা ছিল। সুগন্ধী বিশেষজ্ঞ এবং প্রস্তুতকারক ইসাবেল রামসে ব্রাকস্টোন বোতল দু’টি দেখে চমকে ওঠেন। সেগুলো যে দুর্মূল্য তা তিনি এক ঝলকেই বুঝে গিয়েছিলেন।
০৫১৪
রামসের একটি সুগন্ধী বিক্রির দোকানও রয়েছে। রামসে জানান, ১৮০০ সাল নাগাদ লন্ডন সুগন্ধী তৈরির কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। সে সময় ধনীরাই মূলত ঘনিষ্ঠজনদের সুগন্ধী উপহার হিসাবে দিতেন। লন্ডনের বন্ড স্ট্রিটের ‘পিসে অ্যান্ড লুবিন’ ছিল ততধিক জনপ্রিয় সুগন্ধী সংস্থা।
০৬১৪
যে দু’টি বোতল উদ্ধার হয়েছিল তার একটির ভিতরে সমুদ্রের জল ঢুকতে পারেনি। কিন্তু অন্য বোতলে সমুদ্রের জল ঢুকে সুগন্ধী নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
০৭১৪
বোতলটি খুলে ঘ্রাণ নেওয়ার পরই রামসে স্থির করে ফেলেছিলেন নতুন করে সেই সুগন্ধী তিনি তৈরি করবেন। কিন্তু সে সময়ের সঙ্গে আজকের সুগন্ধীর মধ্যে অনেক পার্থক্য হয়ে গিয়েছিল। সুগন্ধী তৈরিতে ব্যবহৃত উপাদানেও অনেক অমিল রয়েছে। সে সময়ের সমস্ত উপাদানই প্রাকৃতিক ছিল। এখন গবেষণাগারে কৃত্রিম ভাবে উপাদান তৈরি করা হয়ে থাকে।
০৮১৪
২০১১ সালে খোঁজ মিলেছিল ওই জাহাজটির। তার তিন বছর পর ২০১৪ সালে হুবহু একই সুগন্ধী বানাতে সফল হন রামসে। এই তিন বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়েছে তাঁকে। যদিও আইন অনুযায়ী উদ্ধার হওয়া এই সুগন্ধী রামসের হাতে দেওয়া বেআইনি। কিন্তু কিছুটা সুগন্ধী নিজের সংগ্রহে রাখার অনুমতি আদায় করে নিয়েছিলেন তিনি।
০৯১৪
সুগন্ধী নিয়ে নিউ জার্সির এক বিখ্যাত সুগন্ধী প্রস্তুতকারক সংস্থায় কর্মরত বন্ধু জেন ক্লডের কাছে যান তিনি। সুগন্ধী প্রস্তুত করার প্রথম ধাপ, তাতে উপস্থিত উপাদানগুলি সম্পর্কে সচেতন হওয়া। দ্বিতীয় ধাপে উপাদানগুলির নির্দিষ্ট পরিমাণ জানতে হবে। বন্ধু জেন যে সংস্থায় কাজ করতেন সেটি ছিল আমেরিকার বিখ্যাত সুগন্ধী প্রস্তুতকারক সংস্থা। ওই পুরনো সুগন্ধীর মধ্যে কী কী উপাদান কত পরিমাণে রয়েছে তা জানতে বিভিন্ন প্রযুক্তির সাহায্য নেন তাঁরা।
১০১৪
ঘ্রাণ নিয়ে ওই যুগল বুঝতে পেরেছিলেন, তাতে কমলালেবু, আঙুর, কিছু মশলা, ফুল, চন্দনকাঠ এ সব একাধিক উদ্ভিজ্জ উপাদান রয়েছে। এর বাইরে প্রাণীজও অনেক উপাদান মেশানো হয়েছিল। যেমন গন্ধগোকুলের ফেরোমন এবং স্পার্ম তিমির পরিপাক নালী থেকে নির্গত একপ্রকারের উপাদান আম্বারগিস। এই আম্বারগিস উপকূল থেকে সংগ্রহ করে প্রসাধন হিসাবে ব্যবহার করতেন সাধারণ মানুষ।
১১১৪
বিভিন্ন পরিমাণে এগুলি মিশিয়ে, একাধিক চেষ্টার পর হুবহু সেই সুগন্ধী তৈরি করতে সক্ষম হন তাঁরা। ডুবে যাওয়া জাহাজের নামে এর নামকরণ করেন ‘ম্যারি সেলেস্টিয়া’।
১২১৪
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে খুব কম পরিমাণে এই সুগন্ধী বাজারে আনেন রামসে ব্রাকস্টোন। মাত্র ১৮৬৪টি বোতল তৈরি করেছিলেন তিনি। যেহেতু ১৮৬৪ সালে জাহাজটি ডুবে গিয়েছিল সে কারণেই প্রথমে ওই সংখ্যক সুগন্ধীর বোতল প্রস্তুত করেছিলেন।
১৩১৪
অল্প সময়ের মধ্যেই সমস্ত সুগন্ধী বিক্রি হয়ে যায়। বহু ক্রেতা এই সুগন্ধীর জন্য হন্যে হয়ে খোঁজ শুরু করেছিলেন। ক্রেতাদের চাহিদা দেখে ফের এই সুগন্ধী বানাতে শুরু করেন রামসে। রামসের হাতেই নবজন্ম হয়েছিল ১৪৭ বছরের পুরনো ওই সুগন্ধীর।
১৪১৪
আজও রামসের দোকান লিলি বারমুডায় কিনতে পাওয়া যায় ওই সুগন্ধী। দাম পড়ে ১৩০ ডলার, ভারতীয় মুদ্রায় যা সাড়ে ন’হাজার টাকা।