বালোচিস্তান লিবারেশন আর্মির (বিএলএ) পর এ বার পাকিস্তান সরকারের নিশানায় আর এক বিদ্রোহী গোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)। সোমবার রাত থেকে পাক পঞ্জাব এবং খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে টিটিপির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে সশস্ত্র পুলিশ, বিশেষ সন্ত্রাসদমন বাহিনী ‘কাউন্টার-টেরোরিজম ডিপার্টমেন্ট’ (সিটিডি) এবং আধাসেনা রেঞ্জার্সের যৌথবাহিনী।
পাক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে মঙ্গলবার জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় তিনটি সংঘর্ষের ঘটনায় মোট ১৬ জন বিদ্রোহী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে পঞ্জাব প্রদেশের মিয়াঁওয়ালি জেলার মাকারওয়াল এলাকায়। অন্য দিকে, আফগানিস্তান সীমান্ত লাগোয়া খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের উত্তর ও দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে দু’টি পৃথক সংঘর্ষে ছ’জন টিটিপি যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। সরকারি সূত্রের দাবি, সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই টিটিপির কয়েকটি গোপন ডেরায় অভিযান চালানো হয়েছিল।
আরও পড়ুন:
পঞ্জাব পুলিশ জানিয়েছে, ‘‘মিয়াঁওয়ালি জেলা লাগোয়া কারাখ জেলার মুল্লিখেল পাহাড়ে ২০-৩০ জন জঙ্গির গতিবিধির কথা জানার পর পুরো এলাকা ঘিরে চিরুনি তল্লাশি শুরু হয়েছিল। আর তাতেই মিলেছে সাফল্য। অন্য দিকে, উত্তর ওয়াজিরিস্তানের রাজমাক এলাকায় এক অভিযানে পাঁচ টিটিপি যোদ্ধা এবং দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে টিপিপি কমান্ডার জবিউল্লা ওরফে জাকরান নিহত হন।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের নভেম্বরে পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পরে ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করেছিল টিটিপি। বিদ্রোহী ওই পাশতুন গোষ্ঠীর অভিযোগ ছিল, সংঘর্ষবিরতি ভেঙে পাক সেনা এবং ‘কাউন্টার টেররিজ়ম ডিপার্টমেন্ট’ (সিটিডি)-এর যৌথবাহিনী অভিযান শুরু করার ফলেই অশান্তি ছড়িয়েছে খাইবার-পাখতুনখোয়ায়। গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর খাইবার-পাখতুনখোয়া প্রদেশ লাগোয়া আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশে হামলা চালিয়েছিল পাক বায়ুসেনার যুদ্ধবিমান। ইসলামাবাদের দাবি, টিটিপি বিদ্রোহীদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ওই হামলা চালানো হয়েছে।
যদিও আফগানিস্তানের শাসক তালিবানের অভিযোগ, বারমাল জেলায় লামান-সহ সাতটি গ্রাম লক্ষ্য করে একের পর এক বিমানহামলা চালানো হয়েছিল। তাতে মৃত্যু হয়েছিল মহিলা, শিশু-সহ ৪৬ জন সাধারণ মানুষের। সে সময় পাক সেনাকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল তালিবান। সীমান্তে কার্যত যুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। আমেরিকায় ড্রোন হামলায় নিহত জঙ্গিনেতা বায়তুল্লা মেহসুদ প্রতিষ্ঠিত টিটিপি বরাবরই পাক সরকারের বিরোধী। ২০১৪ সালে পেশোয়ারের একটি স্কুলে আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে শতাধিক পড়ুয়াকে খুন করেছিল টিটিপি যোদ্ধারা। তার পর গত দেড় দশকে একাধিক অভিযান চালিয়েও তাদের বাগে আনতে পারেনি পাক সেনা। ২০০৯ সালে টিটিপি-র বিরুদ্ধে ‘অপারেশন রাহ-ই-নিজত’ চালিয়েছিল পাক সেনা।