ভরা বর্ষা। আবহাওয়া খুবই খারাপ। তারই মধ্যে ক্যামেরাম্যান জাস্টিন লিওনকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন ‘ক্রোকোডাইল হান্টার’ স্টিভ আরউইন। কুইনসল্যান্ডের কাছে ব্যাট রিফে (গ্রেট বেরিয়ার রিফের একটি অংশ) নৌকা নিয়ে বেরোন দু’জনে। প্রায় ৮ ফুটের একটা স্টিংরে দেখে নৌকায় বসে থাকতে পারেননি স্টিভ। নেমে পড়েন বুক-জলে। আর তার পরই...।
দিনটা ছিল ২০০৬-এর ৪ সেপ্টেম্বর। সে দিন স্টিংরে-র শিকার হন স্টিভ। ঘটনার অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী জাস্টিন এই প্রথম ক্যামেরার সামনে এসে ভাগ করে নিলেন জমানো দুঃখ। বললেন, “৮ বছর আগের দৃশ্যগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠছে!” জানালেন, স্টিভের “ডান হাত” ছিলেন তিনি। সে দিনও ব্যাট রিফে জাস্টিনকে নিয়েই গিয়েছিলেন স্টিভ। উদ্দেশ্য ছিল, মেয়ে বিন্দির টিভি অনুষ্ঠান ‘বিন্দি দ্য জাঙ্গল গার্ল’-এর জন্য তথ্যচিত্র বানাবেন। নামও ঠিক করে ফেলেছিলেন ‘ওশেনস ডেডলিয়েস্ট’। নৌকা থেকে শু্যটিং করছিলেন দু’জনে। আট ফুটের স্টিংরে-টাকে দেখে জলে নেমে পিছু ধাওয়া করেন। “হঠাৎই সামনের দিকে ঘুরে যায় সেটি। লেজ দিয়ে কোপাতে শুরু করে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে অন্তত একশো বার স্টিভের শরীরে আছড়ে পড়ে লেজের ফলা।” জাস্টিনের ধারণা, জলের উপর স্টিভের ছায়া দেখে স্টিংরে-টা নিশ্চয় হাঙর ভেবেছিল। না হলে ওরা সাধারণত এমন আচরণ করে না।
“ক্যামেরাটা পিছনে ঘোরাতেই দেখি, রক্তে ভেসে যাচ্ছে চারপাশ। তার মধ্যে দাঁড়িয়ে স্টিভ”, বললেন জাস্টিন। “লেজের ফলাটা বুক এ-ফোঁড় ও-ফোঁড় করে দিয়েছিল। যেন গরম মাখনের উপর ছুরি চালিয়েছে কেউ। দু’ইঞ্চি চওড়া ক্ষত থেকে বেরোচ্ছে রক্ত।” বললেন, “ওঁর কষ্ট হচ্ছিল। স্টিংরে-র লেজে বিষগ্রন্থি থাকে যে।” জাস্টিনের কথায়, “যদি তখনই হাসপাতালে নিয়ে যেতাম, তাতেও হয়তো বাঁচাতে পারতাম না।” সর্বসমক্ষে এ সব কখনও বলেননি। “নৌকার এক কর্মীকে বললাম, ক্ষত জায়গাটা চেপে ধরতে। মুখে বলে চলেছি, তোমার বাচ্চাদের কথা ভাবো। সব ঠিক হয়ে যাবে।” স্টিভ শুধু বলেছিলেন, “আমি বোধহয় আর বাঁচব না।” ওটাই ছিল শেষ কথা।
অভিন্ন হৃদয় বন্ধু যে আর নেই, মৃত্যুর আট বছর পরেও মেনে নিতে কষ্ট হয় জাস্টিনের। স্টিভ কিন্তু যে কোনও পরিস্থিতির জন্য তৈরি ছিলেন। জাস্টিনকে দিয়ে প্রতিজ্ঞা করিয়েছিলেন “যা-ই ঘটে যাক, ক্যামেরা চলবেই।” ওই অবস্থাতেও তাই ক্যামেরা বন্ধ হয়নি। শু্যট হয়েছিল প্রতিটি মুহূর্ত। কী ভাবে ছটফট করছেন স্টিভ। বন্ধুকে বাঁচাতে ক্ষতবিক্ষত দেহে সিপিআর দিচ্ছেন জাস্টিন। সবই।
সেই ভিডিও কোথায়? শোনা গিয়েছিল ওগুলো নাকি নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে? “আমি জানি না কী হয়েছে। তবে ব্যক্তিগত ভাবে চাই না, ওটা কারও হাতে আসুক।” জাস্টিনের কথায়, “স্টিভের স্ত্রী-সন্তানকে সম্মান দেখিয়ে এতটুকু তো করাই যায়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy