সংখ্যালঘু দফতরের একটি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল তাঁকে বুঝিয়ে দিয়েছে, ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে কোনও ভাবেই সংখ্যালঘু ভোট হাতছাড়া করা চলবে না। আর সেই রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার ফের বুঝিয়ে দিলেন, সংখ্যালঘুদের মন পেতে তাঁর সরকার চেষ্টার কসুর করবে না।
এ দিন সংখ্যালঘু দফতরের একটি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “শুনেছি অনেকে বলেন, ওদের (সংখ্যলঘুদের) জন্য এত করা হবে কেন? আমি বলছি, বেশ করব। করা হবে। যাদের প্রয়োজন, তাদের জন্য করতে হবে। পিছিয়ে পড়াকে এগিয়ে আনা আমাদের কাজ।” এতে ভুল কোথায়, সেই প্রশ্নও তুলেছেন মমতা।
এই প্রসঙ্গে একই সঙ্গে কিছুটা বাস্তবতা-বিশ্লেষণ এবং তাত্ত্বিক ব্যাখ্যারও আশ্রয় নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সারা দেশের নিরিখে স্থান-বিশেষে অনেকেই যে সংখ্যালঘু পদবাচ্য, সেটা তিনি পরিষ্কার করে দিয়েছেন। দৃষ্টান্ত দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “কোথাও না-কোথাও সকলেই সংখ্যালঘু। আমি এক জন বাঙালি হিসেবে অসমে সংখ্যালঘু। মহারাষ্ট্রেও তা-ই।”
বাংলায় সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। নির্বাচনে জেতার জন্য এই ভোট যে জরুরি, সেটা শুধু তৃণমূল নয়, সব দলই মানে। অতীতে এই ভোট ধরে রাখতে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে এসেছে বাম শিবির। এখন সেই ভূমিকায় তৃণমূল কংগ্রেস। এই কারণে ক্ষমতায় আসার পর থেকে সংখ্যালঘুদের জন্য একের পর এক প্রকল্প ঘোষণা করে চলেছে নতুন সরকার। তার মধ্যে ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিস্তর বিতর্কও হয়েছে। এবং সেই বিতর্কের মধ্যেই রাজ্যের শেষ দু’টি বড় নির্বাচনে বেশির ভাগ সংখ্যালঘু ভোটারের সমর্থন পেয়ে গিয়েছে মমতার দল।
তবু শাসক দলের চিন্তা যেন দূর হচ্ছে না! রাজনৈতিক মহলের দাবি, লোকসভা ভোটের ফলাফল ঘোষণার পরে বামেরা প্রায় অচ্ছুত হয়ে গিয়েছেন। প্রত্যাশিত ভাবেই কংগ্রেস আটকে গিয়েছে উত্তরবঙ্গে। কিন্তু মাত্র দু’টি আসন পেয়েও শতাংশের হিসেবে অনেকটা ভোট বাড়িয়ে নিতে পেরেছে বিজেপি। এবং প্রায় প্রতিদিনই এ রাজ্যে শক্তি বাড়ছে তাদের। লোকসভা ভোটের পরে জেলায় জেলায় বিভিন্ন বাম দল, কংগ্রেস এবং তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার হিড়িক চলছে। শিবির বদলের সেই স্রোতের একটি অংশ সংখ্যালঘু। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে একটি বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ দিন সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতর আয়োজিত বৃত্তি, ঋণ ও পুরস্কার প্রদানের একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানিয়ে দেন, সংখ্যালঘুদের জন্য কাজ করা তাঁর নৈতিক অধিকার, সাংবিধানিক দায়িত্ব। তিনি তাঁদের পাসে দাঁড়ানোর কাজ করেই যাবেন। বিরোধীদের কটাক্ষ করে মমতা বলেন, “সংখ্যালঘু শুনলেই অনেকের গায়ে ফোস্কা পড়ে! এটা ঠিক নয়। সংখ্যালঘু শব্দে কোনও পাপ নেই, কোনও পুণ্যও নেই।”
সরকারি হিসেব অনুযায়ী ২০১১ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৪-র মার্চ পর্যন্ত রাজ্যে সংখ্যালঘু উন্নয়নে ১৫৩৭ কোটি ২৭ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। এই নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। ইমাম, মুয়াজ্জিনদের ভাতা দিলে কেন অন্যান্য সম্প্রদায়ের ধর্মগুরুরা সেই সুবিধা পাবেন না, তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। এ ক্ষেত্রে কোনও বিতর্ককেই অবশ্য আমল দেয়নি সরকার। সংখ্যালঘু মন পাওয়ার জন্য সব রকমের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তারা।
এ দিনের অনুষ্ঠানেই পশ্চিমবঙ্গ উর্দু অ্যাকাডেমির ইসলামপুর শাখা, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ক সার্কাস ক্যাম্পাসের ছাত্রী নিবাস এবং ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই নিউ টাউন ক্যাম্পাসে দু’টি পড়ুয়া নিবাসের শিলান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী। এ ছাড়া প্রথম শ্রেণি থেকে পিএইচডি স্তর পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি, মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি কর্মসূচির জন্য শিক্ষাঋণ ইত্যাদি বিতরণ করেন। হাই-মাদ্রাসা, আলিম, ফাজিল পরীক্ষার কৃতী ছাত্রছাত্রীদেরও সংবর্ধনা জানান তিনি।
১৪ অগস্ট তারিখটি কন্যাশ্রী দিবস হিসেবে পালিত হবে বলে এ দিন ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy