বাম জমানা থেকে তৃণমূলের আমল পর্যন্ত উত্তরবঙ্গে শিল্প স্থাপন নিয়ে অনেক শিল্প-প্রস্তাব জমা পড়েছে। সরকারের সঙ্গে বেসরকারি সংস্থার সমঝোতা চুক্তি (মউ) হয়েছে। কিন্তু তার অধিকাংশ বাস্তবায়িত না হওয়ায়, উত্তরের শিল্পের দৈন্যদশা কাটেনি। সপ্তাহখানেক আগে খোদ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও মেনেছেন, মউ চুক্তি আর বাস্তবের মধ্যে অনেক ফারাক। এই অবস্থায়, আজ সোমবার ফের উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ী এবং শিল্পদ্যোগীদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছে রাজ্য। উত্তরকন্যার ওই বৈঠকে থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তবে বণিক সংগঠনগুলির অভিযোগ, বাম আমলে উত্তরবঙ্গে একাধিকবার শিল্প-বৈঠক হয়েছে, তাতেও দু’একটি ছাড়া বড় বিনিয়োগ আসেনি। যে ক্ষেত্রে বিনিয়োগ এসেছে, তার বেশ কয়েকটির কাজ এখনও শেষ হয়নি বলে অভিযোগ। তৃণমূল জামানাতেও দু’বার শিল্প সম্মেলন ধাঁচের অনুষ্ঠান হয়েছে। তাতেও চা বা পর্যটনে বড় বিনিয়োগ আসেনি।
বৈঠকে ডাকা হয়েছে উত্তরের ৭ জেলার বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনকে। সরকারি অনুষ্ঠান হলেও, মূলত সিআইআই-এর (কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ) উত্তরবঙ্গ এবং সিকিমের আঞ্চলিক শাখাই সম্মেলনে কারা উপস্থিত থাকবেন তার দেখভাল করছে। সিআইআইয়ের তরফে রবিবার মৌখিক ভাবে যে কয়েকজন শিল্পদ্যোগীর উপস্থিত থাকার কথা জানানো হয়েছে, তাঁরা উত্তরবঙ্গে পরিচিত মুখ বলেই স্থানীয় বণিকসভাগুলি জানিয়েছে। সিআইআই-এর উত্তরবঙ্গ আঞ্চলিক শাখার চেয়ারম্যান প্রবীর শীল বলেন, “অনেক বিনিয়োগকারীই সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন। বেশ কিছু নতুন বিনিয়োগেরও ঘোষণা হবে। তবে কোন কোন শিল্পোদ্যোগী থাকবেন, সম্মেলনেই তা জানানো হবে।”
চা শিল্প-ই উত্তরবঙ্গের মূল অর্থনৈতিক ভিত্তি। তবে বাম আমলের মতো সাম্প্রতিক সময়েও ফের একের পর এক চা বাগান বন্ধ হওয়ার প্রবণতা শুরু হয়েছে চা শ্রমিকদের মজুরি চুক্তি নিয়ে গত বছরে কয়েক দফায় আলোচনা করেও সমাধান সূত্র মেলেনি। যার ফলে এই শিল্পে শ্রমিক-মালিক পক্ষের মধ্যে ‘শীতলতা’ অব্যাহত। ডুয়ার্সের বেশ কয়েকটি বাগানে ম্যানেজারের উপরে শ্রমিকদের হামলার অভিযোগও উঠেছে। মালবাজারের চা মালিককে পিটিয়ে মারার অভিযোগও রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নতুন লগ্নি ছাড়া চা শিল্পে পুনরুজ্জীবন সম্ভব নয় বলে জানানো হয়েছে। পর্যটনেও একই সমস্যা।
রাজ্যে নতুন সরকার আসার পরে গজলডোবাকে ঘিরে পর্যটনে আড়াই হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ টানার কথা ঘোষণা হয়। বর্তমানে গজলডোবায় সরকারি কয়েকটি দফতর পরিকাঠামো তৈরির কাজ শুরু করলেও, কোনও বহুজাতিক শিল্প সংস্থা এখনও সেখানে পা রাখেনি। সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে, এ দিনের সম্মেলনে অন্যতম ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্প থেকে চা, পর্যটন, তথ্য প্রযুক্তি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে লগ্নি বিষয়টি সামনে আসবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প নিয়ে শিলিগুড়ি এবং মালদহে গত বছর বৈঠকও হয়েছে। দু’টি বৈঠকে অন্তত ১৭১টি প্রস্তাবে প্রায় ১৮০০ কোটি টাকার বিনিয়োগের কথা ঘোষণা হয়। যার অধিকাংশের কাজই শুরু হয়নি।
আয়োজকদের তরফে জানানো হয়েছে, মোহিতনগরের একটি ২০০ কোটি টাকার সিমেন্ট কারখানা, ১৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগে শিলিগুড়িতে বিনোদন পার্ক, পানীয় প্রস্তুতকারক সংস্থার বিনিয়োগ, রাইস মিল, চাউমিন কারখানা এবং ফল, সব্জি প্রক্রিয়াকরণ কারখানা ছাড়াও একটি গোষ্ঠীর ১২৫ কোটি টাকার তিনটি পর্যটন প্রকল্পে বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করা হতে পারে। বিরোধীদের অবশ্য দাবি, যে প্রকল্পগুলির কথা বলা হচ্ছে, তা সবই পুরোনো। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্যের কথায়, “নতুন যে শিল্পের কথা বলা হচ্ছে, তা বাম আমলের। রাজ্য সরকার সেই প্রকল্পগুলিকে রূপায়ণ করলেই, উত্তরবঙ্গের অর্থনীতি বদলে যাবে।”
মালদহের মার্চেন্ট চেম্বার অফ কর্মাসের সম্পাদক উজ্জ্বল সাহা বলেন,“মালদহের প্রচুর শ্রমিক জেলায় কাজ না পেয়ে অন্য জেলায় চলে যাচ্ছেন। শিল্পের দরকার আছে জেলায়। সে কথা সম্মেলনে জানাব” কোচবিহারের বিমানবন্দর এখনও পুরোপুরি চালু হয়নি। সে দাবি জানানো হবে বলে কোচবিহারের ব্যবসায়ী সমিতির তরফে জানানো হয়েছে। তেমনই বাম আমলে বালুরঘাটের হোসেনপুরে শিল্পতালুক গড়ার কথা ঘোষণার পরেও কাজ এগোয়নি।
এ দিকে বৈঠকে ডাকা নিয়েও বিভ্রান্তি রয়েছে। ফোসিনের মতো বৃহত্তর ব্যবসায়ী সংগঠন ফেডারেশন অব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, নর্থবেঙ্গল (ফোসিন)-কে সম্মেলনে ডাকা হয়নি বলে অভিযোগ। ফোসিনের সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “এ দিন রাত পর্যন্ত আমাদের কিছু জানানো হয়নি। কোনও আমন্ত্রণ পত্রও পাইনি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy