বর্ধমানের বিস্ফোরণের ঘটনার পরে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হল নদিয়াতেও। বিস্ফোরণে নিহত শাকিল আহমেদ শ্বশুরকে বাবা পরিচয় দিয়ে ভোটার কার্ড তৈরি করেছিল। কাদের সহযোগিতায় শাকিলের নাম ভোটার তালিকায় উঠেছিল তা নিয়ে শাসক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে শুরু হয়েছে চাপানউতোর। তৃণমূল এই বিষয়ে সিপিএমের বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছে। বিরোধী দলগুলিও তীব্র ভাষায় শাসক দলের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে শুরু করেছে।
মঙ্গলবার কৃষ্ণনগরে নিজের বাড়িতে সাংবাদিক সম্মেলন করেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত। তিনি বলেন, “২০০৭ সালে শাকিল আহমেদের সঙ্গে বারবাকপুরের বাসিন্দা আজিজুল গাজির মেয়ে রাজিয়ার বিয়ে হয়েছিল। তারও দেড়-দু বছর পরে শ্বশুরকে বাবা সাজিয়ে ভোটার তালিকায় নাম তুলেছিল শাকিল। সেই সময় রহমতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম সদস্য কোহিনুর বিবি বিশ্বাস ছিলেন পঞ্চায়েত প্রধান। শাকিলের ভোটার তালিকায় নাম তোলা থেকে শুরু করে ভোটার কার্ড তৈরি করার বিষয়ে এলাকার সিপিএম নেতারা জড়িত।”
সিপিএমের দাবি, সাংবাদিক সম্মেলনে গৌরীবাবু যে তথ্য দিয়েছেন তা পুরোপুরি মিথ্যা। তাদের অভিযোগ, মানুষকে বিভ্রান্ত করতে ভুল তথ্য দিচ্ছে তৃণমূল। সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে বলেন, “২০০৯ সালে রহমতপুর গ্রাম পঞ্চায়েত ছিল কংগ্রেস ও তৃণমূল জোটের দখলে। আর শাকিল আহমেদ যে বুথে ছিলেন সেই বুথের সদস্যও ছিলেন তৃণমূলের। তৃণমূলের সহযোগিতাতেই ভোটার তালিকায় নাম তুলেছিল শাকিল।” তাঁর সংযোজন, “এই সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে তৃণমূলের যোগাযোগ প্রকাশ্যে আসতেই এই ভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানুষকে তারা বিভ্রাম্ত করতে চাইছে।”
গৌরীবাবু অবশ্য জানান, সেই সময় সরকার ছিল সিপিএমের। বিধায়ক ছিল সিপিএমের। পঞ্চায়েত সমিতি থেকে গ্রাম পঞ্চায়েত সবই ছিল সিপিএমের দখলে। বুদ্ধবাবুর সরকারের তত্ত্বাবধানেই শাকিলের ভোটার তালিকায় নাম উঠেছিল।” তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের দফতরে শাকিল আহমেদের ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য দেওয়া যাবতীয় নথিপত্র এখনও রাখা আছে। আমরা চাই সেই সব নথিপত্র খতিয়ে দেখে যাঁরা তার এই ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য সহযোগিতা করেছিল এবং প্রয়োজনীয় ভুয়ো নথিপত্র সরবরাহ করেছিল তাঁদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুক প্রশাসন।” তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি বাংলাদেশি জেনেও জামাইকে ছেলে সাজিয়ে ভোটার তালিকায় নাম তুলতে সাহায্য করেন তাঁর বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক। শাকিল আহমেদের শ্বশুরবাড়ি দীর্ঘদিনের সিপিএম সমর্থক।” তিনি বলেন, “বিমান বসু সাংবাদিক সম্মেলন করে অনেক কথা বলছেন। কিন্তু তিনি কি এখন দলের কোনও খবরই রাখছেন না? তাঁরই দলের লোকজনই শাকিল আহমেদের ভোটার তালিকায় নাম তুলতে সবরকম ভাবে সহযোগিতা করেছিল।”
এই বিষয়ে আসরে নেমে পড়েছে বিজেপিও। বিজেপির জেলা কমিটির মুখপাত্র সৈকত সরকার বলেন, “সেই সময় রহমতপুর পঞ্চায়েত ছিল কংগ্রেস ও তৃণমূলের দখলে। আর সেই পঞ্চায়েতের সহযোগিতায় অতি সহজেই ভোটার তালিকায় নাম তুলেছিল শাকিল। বর্ধমানের বিস্ফোরণের ঘটনায় তৃণমূলের যোগ পরিষ্কার হয়ে যাওয়াতেই তারা এখন মানুষের নজর ঘোরাতেই এই ধরনের মিথ্যা তথ্য সংবাদমাধ্যমের কাছে তুলে ধরছে।” সৈকতবাবুর অভিযোগ, “দেশের নিরাপত্তার থেকেও এখন দলীয় স্বার্থ বড় করে দেখছে তৃণমূল।”
চুপ করে বসে নেই জেলা কংগ্রেসও। শাকিলের ভোটার তালিকায় নাম তোলার ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই জড়িয়ে পড়েছে তাদের নামও। কারণ সেই সময় ওই পঞ্চায়েত জোটের দখলে থাকলেও প্রধান ছিল কংগ্রেসের। ফলে বিষয়টি সামনে আসতে সরব হয়েছে তারাও। দলের জেলা সভাপতি অসীম সাহা বলেন, “সেই সময়ে তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে আমরা পঞ্চায়েত পরিচালনা করেছি। আমাদের দলের প্রধান থাকলেও শাকিল আহমেদের ভোটার তালিকায় নাম তোলার বিষয়ে প্রধান কোনও ভাবেই জড়িত নন। কারণ পঞ্চায়েত সদস্যের সুপারিশ অনুযায়ী কাজ করেন প্রধান। আর সেই সময় ওই বুথে সিপিএমের সদস্য ছিলেন। প্রধানের পক্ষে পঞ্চায়েত এলাকায় সকলকে চেনা-জানা সম্ভব নয়।” তিনি বলেন, “তাছাড়া ভোটার তালিকায় নাম তোলার সময় বিডিও অফিসে শুনানি হয়। সেখানে সকলকে হাজির থাকতে হয়। আমরাও চাইছি ঠিক কার সহযোগিতায় শাকিলের নাম ভোটার তালিকায় উঠেছিল তা তদন্ত করে বের করুক নির্বাচন কমিশন। প্রকৃত সত্যিটা সকলের সামনে উঠে আসুক।”
গৌরীবাবু অবশ্য শুধু সাংবাদিক সম্মেলন করেই ক্ষান্ত হননি। তিনি সিপিএমের তৎকালীন সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন জেলা শাসক ও জেলা নির্বাচন আধিকারিকের কাছে। জেলাশাসক পি বি সালিম বলেন, “শাকিল আহমেদের ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য দেওয়া নথিপত্র খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy