মন্ত্রী থাকলে এক রকম। না থাকলেই ছবিটা অন্য।
গত ১২ ডিসেম্বর মদন মিত্রের সঙ্গে তাঁকেও গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। সুদীপ্ত সেনের আইনজীবী নরেশ বালোড়িয়ার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে।
আর মন্ত্রীর সঙ্গে একই দিনে গ্রেফতার হওয়ার সুবাদে যে দিন যে দিন মদনবাবুকে আদালতে হাজির করানো হয়েছে, সে দিনই তোলা হয়েছে বালোড়িয়াকেও। এজলাসে মন্ত্রীর মতোই অতিরিক্ত ‘খাতির’ পেয়েছেন তিনিও।
কী রকম?
আদালত কক্ষে হাজিরার সময়ে মন্ত্রীর জন্য ‘বিশেষ’ ব্যবস্থা হিসেবে কাঠগড়ার পাশে রাখা থাকে প্লাস্টিকের চেয়ার। মন্ত্রীকে আদালতের লকআপেও রাখা হয় না। তাঁকে জেল থেকে সরাসরি আদালত কক্ষে নিয়ে এসে বসিয়ে দেওয়া হয় ওই চেয়ারে। সেখানে বসেই ওঁকে মোবাইলে কথা বলতে দেখা গিয়েছে। শুনানি শেষে বাইরে এনে গাড়িতে তোলা হচ্ছিল তাঁকে। একই মামলায় অভিযুক্ত বালোড়িরার জন্য এত দিন একই ব্যবস্থা হচ্ছিল এজলাসে। আদালতের লকআপে তাঁকে থাকতে হয়নি। এজলাসের ভিতরে মন্ত্রীর পাশে ওই আইনজীবীর জন্যও রাখা থাকত পৃথক চেয়ার।
সেখানেই ছন্দপতন ঘটল বৃহস্পতিবার।
অসুস্থ থাকায় এ দিন মদন হাজিরা দিতে পারেননি আদালতে। সংখ্যায় কম ছিলেন তৃণমূলের আইনজীবীরা। মন্ত্রীর সমর্থকেরাও এ দিন ছিলেন না। আর ছিল না কাঠগড়ার পাশে রাখা চেয়ারও। জেল থেকে নিয়ে এসে আদালতের লকআপে রাখা হয় নরেশকে। বিকেল চারটেয় আর দশটা সাধারণ অভিযুক্তের মতো এক পুলিশকর্মীর হাত ধরে আদালত কক্ষে আসেন বালোড়িয়া। কাঠগড়ার সামনে দু’হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় তাঁকে। মাত্র ১৪ মিনিট শুনানি শেষে তাঁকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় আদালত কক্ষ থেকে।
নরেশের আইনজীবী সঞ্জয় দাশগুপ্ত এ দিন জামিনের আবেদন জানিয়ে অভিযোগ করেন, “আমার মক্কেলের বাবা জীবিত থাকা সত্ত্বেও আদালতে পেশ করা কাগজে তাঁর বাবাকে মৃত বানিয়ে দিয়েছে সিবিআই। এই তো তদন্তকারীদের অবস্থা! অভিযুক্তের বাবা বেঁচে আছেন কি না, সেটাও তাঁদের জানা নেই।” জামিনের সেই আবেদন খারিজ করে বিচারক অবশ্য নরেশকে জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি আবার তাঁকে হাজির করতে হবে আদালতে। ওই একই দিনে হাজির করতে হবে মদন মিত্রকেও।
ভিড় তো কম ছিলই, এ দিন আদালতের পরিবেশও ছিল অনেক হাল্কা। শুনানি চলাকালীনই এক আইনজীবী এসে সিবিআইয়ের কৌঁসুলি পার্থসারথি দত্তকে বলেন, “আপনাদের তেঁতুলবাবু কোথায়? ওঁকে এক দিন এই সাহেবের সামনে নিয়ে আসুন না।” বোঝা যায়, সিবিআইয়ের সিনিয়র কৌঁসুলি দক্ষিণী কে রাঘবচারুলু-র প্রসঙ্গ টেনে ওই কথা বলা হচ্ছে। তিনি বুধবার আলিপুরের দায়রা আদালতে মদনের জামিনের বিরোধিতা করে তাঁকে ‘মানি’ মিত্র বলে অভিহিত করেন। মন্তব্য শুনে বিচারক হারাধন মুখোপাধ্যায় মুখ তুলে দেখেন।
ওই আইনজীবী বিচারককে বলেন, “অনেকে আমাদের বদনাম করার চেষ্টা করছে। এ ভাবে কেউ আমাদের সঙ্গে আদালতের (বিচারকের) সম্পর্ক নষ্ট করতে পারবে না।” বিচারক উপস্থিত আইনজীবীদের জিজ্ঞাসা করেন, “আপনারা মদন মিত্রের জামিনের আবেদন করবেন না?” মদন মিত্রের পক্ষে আইনজীবী ও তৃণমূল নেতা বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় হেসে হাতজোড় করে বলেন, “আপনি আমাদের অভিভাবক। যদি জামিন দেন তবেই চাইব। কিন্তু কোনও আশা তো দেখছি না! তবে মন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা বেশ খারাপ। তাঁর যথাযথ চিকিৎসার জন্য যেন আদালতের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়।” বিচারক মুখোপাধ্যায় সেই নির্দেশই পাঠিয়ে দেন জেল কর্তৃপক্ষের কাছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy