Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

মতুয়া-ভোট দখল করতে সরব রাহুল

মতুয়া-বাড়ির ভাঙনের সুযোগ নিতে আসরে নেমে পড়ল বিজেপি। রবিবার হাবরার সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ নাম না করে তীব্র আক্রমণ শানালেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে। বললেন, “আগে বারবার উনি মতুয়াদের অফিসে আসতেন মায়ের (মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান উপদেষ্টা বীণাপাণিদেবী, ‘বড়মা’ নামেই যিনি পরিচিত) আশীর্বাদ নিতে।

হাবরার জনসভায় রাহুল সিংহ। ছবি: শান্তনু হালদার

হাবরার জনসভায় রাহুল সিংহ। ছবি: শান্তনু হালদার

নিজস্ব সংবাদদাতা
হাবরা শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৫৭
Share: Save:

মতুয়া-বাড়ির ভাঙনের সুযোগ নিতে আসরে নেমে পড়ল বিজেপি।

রবিবার হাবরার সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ নাম না করে তীব্র আক্রমণ শানালেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে। বললেন, “আগে বারবার উনি মতুয়াদের অফিসে আসতেন মায়ের (মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান উপদেষ্টা বীণাপাণিদেবী, ‘বড়মা’ নামেই যিনি পরিচিত) আশীর্বাদ নিতে। এখন মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে আর মাকে মনে পড়ে না। কাজ তো সারা হয়ে গিয়েছে।” ঘটনাচক্রে, রাহুলের সভার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বনগাঁয় সরকারি কাজে আসছেন মমতা। তৃণমূল সাংসদ তথা সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের মৃত্যুতে বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন আসন্ন। এই পরিস্থিতিতে বনগাঁয় মমতা সরকারি সফরে এসেও উপনির্বাচন কেন্দ্রিক বার্তা দেবেন বলেই অনেকের মত। এখন দেখার, তিনি রাহুলের অভিযোগের জবাব দেন কি না।

তৃণমূলের তরফে অবশ্য রাহুলবাবুর বক্তব্য নস্যাৎ করে দেওয়া হয়েছে এ দিনই। হাবরার বিধায়ক তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “ঠাকুরবাড়ি বরাবরই তৃণমূলের পাশে থেকেছে।” দলের এ-ও দাবি, গাইঘাটার ঠাকুরনগরে মতুয়াদের ঠাকুরবাড়ির প্রকৃত উন্নয়ন মমতাই করেছেন। তা মানুষ বিলক্ষণ জানেন। কাজেই মতুয়াদের পারিবারিক বিভাজনের ফায়দা নেওয়ার যে চেষ্টা বিজেপি করছে, তা ধোপে টিঁকবে না।

কপিলের মৃত্যুর পর মতুয়াদের মধ্যে ধামাচাপা পারিবারিক কোন্দল পুরোপুরি স্পষ্ট হয়েছে। কপিলের ভাই মঞ্জুলকৃষ্ণকে সঙ্ঘাধিপতি পদে ঘোষণা করেছেন মতুয়াদের একাংশ। পাল্টা কমিটি গঠন করে সঙ্ঘাধিপতি হয়েছেন কপিলের স্ত্রী মমতাবালাও। মতুয়াদের পারিবারিক ইতিহাসে আগে কখনও দু’জন সঙ্ঘাধিপতি হননি। মঞ্জুলের ছেলে সুব্রত বনগাঁর উপনির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটের দাবিদারও বটে। আবার সেই দৌড়ে তাঁকে টেক্কা দিতে মরিয়া মমতাবালাও। কাজেই মতুয়াদের এই পারিবারিক বিভাজন ভোটব্যাঙ্কে কী প্রভাব ফেলবে তা এখনও স্পষ্ট নয়।

এই পরিস্থিতিতে মমতা তথা তৃণমূলকে বিঁধতে উদ্বাস্তুদের ‘দুরবস্থা’কেও হাতিয়ার করেছেন বিজেপি সভাপতি। বিজেপি অবশ্য এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সুর চড়িয়ে এসেছে। তারই জের টেনে রাহুল এ দিন বলেন, “ওরা (তৃণমূল) উদ্বাস্তুদের ঠকিয়ে ভোট নিয়েছে। তাদের চোখে ধুলো দিতে এক জনকে উদ্বাস্তু মন্ত্রী (মঞ্জুল) করেছে। কিন্তু তাঁকে কাজ করতে দেওয়া হয়নি।” রাহুলের দাবি, শরণার্থীরা ভাল করেই জানেন, বিজেপি ছাড়া তাঁদের পাশে কেউ নেই। তৃণমূল যে ভাবে ঠাকুরবাড়িকে কেন্দ্র করে ‘রাজনীতি’ করছে, তা এ বার শেষ হবে বলে তিনি মনে করেন।

এ দিন যশোর রোডের ধারে দেশবন্ধু পার্ক এলাকায় বিজেপির সভায় হাজার চারেক কর্মী-সমর্থক জড়ো হয়েছিলেন। মঞ্চে লেখা ছিল, ‘মিশন ২০১৬’। রাহুল মঞ্চে ওঠার আগে ‘ভাবী মুখ্যমন্ত্রী রাহুল সিংহ জিন্দাবাদ’ ধ্বনি ওঠে। মিনিট ৪০ বক্তৃতা দেন রাহুল। পরে তিনি দাবি করেন, দলে দলে মতুয়া ইদানীং বিজেপিতে নাম লেখাচ্ছেন বা বিজেপির সঙ্গে আসার ইচ্ছাপ্রকাশ করছেন। এ দিনের সভাতেই তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা এসসি-এসটি-ওবিসি সেলের সভাপতি নীলরতন বিশ্বাস যোগ দেন বিজেপিতে। তাঁর হাতে দলের পতাকা তুলে দেন রাহুল। তৃণমূল নেতা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক অবশ্য বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতেই নারাজ। মঞ্জুলকৃষ্ণের অবশ্য সংযত প্রতিক্রিয়া, “বিজেপি উদ্বাস্তুদের অনুপ্রবেশকারী বলছে। কিন্তু উদ্বাস্তুদের জন্য যা করার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই করেছেন। উদ্বাস্তুদের মধ্যে বিজেপির অস্তিত্বই নেই।”

অন্য বিষয়গুলি:

motua rahul singha bangaon byelection bjp
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE